রবিবার ধর্মতলায় জুনিয়র ডাক্তারদের ‘চিৎকার সমাবেশে’ জনসমাগম। —নিজস্ব চিত্র।
বিকেল ৪টে থেকে শুরু হওয়ার কথা ছিল কর্মসূচির। কিন্তু দুপুর গড়াতেই ধর্মতলার মেট্রো চ্যানেলের সামনে ভিড় বাড়তে শুরু করে। রবিবার সাধারণত ওই এলাকায় জনসমাগম খুবই কম থাকে। তবে জুনিয়র ডাক্তারদের ডাকা ‘চিৎকার সমাবেশ’, সেই চেনা ছবি পাল্টে দেয়! সিনিয়র, জুনিয়র ডাক্তারেরা তো বটেই সমাবেশে শামিল হয়েছিলেন সাধারণ মানুষ। পথনাটিকা, স্লোগান, গান— নানা আঙ্গিকে ‘বিচারের দাবি’তে সরব সকলেই।
শুক্রবার জুনিয়র ডাক্তারদের তরফে বেশ কিছু কর্মসূচির ঘোষণা করা হয়। সেই তালিকাতেই ছিল এই ‘মহাসমাবেশে’র ডাক। সাধারণ মানুষকে এই সমাবেশে যোগ দিতে আহ্বান জানিয়েছিলেন আন্দোলনকারীরা। জুনিয়র ডাক্তারেরা স্পষ্ট জানান, দাবিদাওয়া নিয়ে অনড় তাঁরা। কিন্তু সরকারের তরফে কোনও ‘ইতিবাচক পদক্ষেপ’ না দেখে আন্দোলনের ঝাঁজ বৃদ্ধি করতেই একাধিক কর্মসূচির ঘোষণা করেন। শনিবার অনশনমঞ্চে মুখ্যসচিব, স্বরাষ্ট্রসচিবের আসা, ফোনে মুখ্যমন্ত্রীর সঙ্গে কথা বলা এবং নবান্নে বৈঠক স্থির হওয়ার পরেও রবিবারের কর্মসূচি জারি রেখেছিলেন জুনিয়র ডাক্তারেরা।
প্রথমে এই কর্মসূচিকে ‘মহাসমাবেশ’ বললেও রবিবার সকালে আন্দোলনকারীরা তার নাম ঘোষণা করেছিলেন। পশ্চিমবঙ্গ জুনিয়র ডক্টরস ফ্রন্টের তরফে সমাজমাধ্যমে লেখা হয়, ‘‘আমাদের দাবির আওয়াজ ছড়িয়ে পড়ুক চিৎকার হয়ে। দেখা হচ্ছে বিকেল ৪টেয়, ধর্মতলার অনশনমঞ্চে।’’ কর্মসূচির নাম দেওয়া হয় ‘চিৎকার সমাবেশ’। সেই সমাবেশে যোগ দিতে রবিবার দুপুর থেকেই বহু মানুষ ধর্মতলার অনশনমঞ্চের সামনে ভিড় করেন। ছিলেন বিশিষ্টজনেরাও।
রবিবার সন্ধ্যায় ধর্মতলার অনশনমঞ্চ। —নিজস্ব চিত্র।
নাগরিক সমাজের তরফে একটি পথনাটিকার আয়োজন করা হয়েছিল। সেই পথনাটিকার ভাবনাই ছিল ‘নির্যাতিতার জন্য বিচারের দাবি’। অনেকের হাতে জাতীয় পতাকা দেখা যায়। এ ছাড়াও পোস্টার, ব্যানারে ছয়লাপ ছিল অনশনমঞ্চের চত্বর। গণস্বাক্ষর সংগ্রহ করতেও দেখা গেল। নিজেদের দাবি আরও মজবুত করতেই এই উদ্যোগ জুনিয়র ডাক্তারদের।
আন্দোলনকারীরা জুনিয়র ডাক্তারদের মধ্যে কেউ কেউ বক্তৃতাও করেন। অনশনকারীদের মধ্যে স্পন্দন চৌধুরীকেও নিজের কথা জমায়েতের সামনে তুলে ধরতে দেখা যায়। কয়েক দিন না খাওয়ায় গলা স্বরে তেমন তেজ না থাকলে তাঁর দৃঢ় বক্তৃতা মন জয় করেছে উপস্থিত সকলের। ‘চিৎকার সমাবেশ’ থেকে নিজের দাবিই বার বার মনে করিয়ে দিলেন আন্দোলনরত জুনিয়র ডাক্তারেরা।
‘চিৎকার সমাবেশ’ মঞ্চে বক্তৃতা করছেন অনশনকারী স্পন্দন চৌধুরী। —নিজস্ব চিত্র।
উল্লেখ্য, সোমবার নবান্নে জুনিয়র ডাক্তারদের সঙ্গে বৈঠকে বসতে চলেছেন মুখ্যমন্ত্রী। সব ঠিকঠাক থাকলে সোমবার বিকেল ৫টায় নবান্নের সভাঘরে হতে চলেছে সেই বৈঠক। রবিবার জুনিয়র ডাক্তারেরা জানান, নির্দিষ্ট সময়েই নবান্নে পৌঁছে যাবেন তাঁরা। কিন্তু রাজ্য যে অনশন তোলার ‘শর্ত’ দিয়েছে, তা মানছেন না। অর্থাৎ অনশনরত অবস্থাতেই বৈঠকে যোগ দেবেন জুনিয়র ডাক্তারেরা।