বাড়ি ফেরার আগে হাসপাতালে শঙ্কর দাস। নিজস্ব চিত্র।
পেটে-বুকে-পিঠে ব্যথা। ক্রমশ ফুলতে শুরু করেছিল পেট। ছাপান্ন বছরের প্রৌঢ়কে তড়িঘড়ি ভর্তি করা হয়েছিল হাসপাতালে। পরীক্ষা করে চিকিৎসকেরা দেখেন, তাঁর মহাধমনী ফুটো হয়ে রক্ত জমছে পেটে ও বুকের চারপাশে। মারাত্মক ভাবে ফুলে উঠেছে মহাধমনী। যে কোনও মুহূর্তে সেটি ফেটে প্রাণসংশয় হতে পারে। শেষে অস্ত্রোপচার করে ওই রোগীকে নতুন জীবন দিল নীলরতন সরকার মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতাল। এই ধরনের অস্ত্রোপচার সেখানে প্রথম বলেই জানাচ্ছেন কর্তৃপক্ষ।
গত কয়েক মাস ধরে পেটে ও বুকে ব্যথা অনুভব করছিলেন সুন্দরবনের বাসিন্দা, শঙ্কর দাস নামে ওই প্রৌঢ়। বিভিন্ন চিকিৎসককে দেখানোর পরেও কোনও সুরাহা হয়নি। গত জুন মাসে তিনি এনআরএস হাসপাতালে ভর্তি হন। ২৩ জুন তাঁকে কার্ডিয়োভাস্কুলার বিভাগে স্থানান্তরিত করা হয়। সেখানে চিকিৎসকদের সন্দেহ হওয়ায় তাঁর সিটি-অ্যাঞ্জিয়ো পরীক্ষা করাতেই ধরা পড়ে সমস্যাটি। সাধারণত সর্বোচ্চ তিন থেকে সাড়ে তিন সেন্টিমিটার চওড়া হয় মহাধমনী। কিন্তু শঙ্করবাবুর ক্ষেত্রে সেটি বেলুনের মতো ফুলে হয়েছিল ৯ সেন্টিমিটার। মহাধমনীর একটি স্তরে ফুটো হয়ে রক্তপাতও হচ্ছিল।
কার্ডিয়োভাস্কুলার বিভাগের চিকিৎসক শুভব্রত বন্দ্যোপাধ্যায় বলেন, “মহাধমনীর সমস্যাটি ধরা পড়তেই তড়িঘড়ি অস্ত্রোপচারের সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। কারণ, ওই মহাধমনী ফেটে গেলে রোগীর প্রাণসংশয় হতে পারত।” চিকিৎসকেরা জানাচ্ছেন, রোগী হাসপাতালে থাকাকালীন যদি ফুলে ওঠা মহাধমনী ফেটে যায়, তা হলে প্রাণে বাঁচার অন্তত পাঁচ শতাংশ সুযোগ রয়েছে। কিন্তু রোগী বাড়িতে থাকাকালীন ঘটনাটি ঘটলে মৃত্যু অনিবার্য। এনআরএস সূত্রের খবর, ওই প্রৌঢ়ের মহাধমনীর ফুটো বন্ধ করতে একটি বিশেষ ধরনের স্টেন্টের প্রয়োজন ছিল। সেটির দাম প্রায় ছ’লক্ষ টাকা। বিষয়টি স্বাস্থ্য দফতরে জানানো হয়। এর পরে ভিন্ রাজ্য থেকে সেটি আনানোর ব্যবস্থা করে রাজ্য সরকার।
স্টেন্ট আসার পরে গত ১২ জুলাই প্রৌঢ়ের অস্ত্রোপচার করেন ওই হাসপাতালের কার্ডিয়োভাস্কুলার সার্জারি বিভাগের প্রধান চিকিৎসক পরেশ বন্দ্যোপাধ্যায়, শুভব্রত বন্দ্যোপাধ্যায়-সহ অন্যেরা। শুভব্রতবাবু জানাচ্ছেন, প্রৌঢ়ের এক দিকের কুঁচকি দিয়ে অ্যাঞ্জিয়োগ্রাফি করা হয়। অপর দিকের কুঁচকি দিয়ে ‘এন্ডোভাস্কুলার সার্জারি’-র মাধ্যমে ওই স্টেন্টটি মহাধমনীতে পাঠিয়ে ফুটোটি বন্ধ করা হয়। তাতে রক্তপাতও বন্ধ হয়ে যায়। সোমবার পুরো সুস্থ অবস্থায় ওই রোগীকে ছুটি দেওয়া হয়েছে। বাড়ি যাওয়ার পথে শঙ্কর বলেন, “যন্ত্রণা কমিয়ে, আবার সুস্থ হয়ে বাড়ি ফেরার স্বপ্ন পূরণ হল।”