অপূর্ব দাস
দ্রুত গতিতে এসে উড়ালপুলের রেলিংয়ে ধাক্কা মারল একটি মোটরবাইক। মুহূর্তে ছিটকে গেলেন চালক। সোজা পড়লেন উড়ালপুলের প্রায় ৬০ ফুট নীচের রাস্তায়। বন্ধ হয়ে গেল সেখানকার যান চলাচল। লোকজন ভিড় করে দেখলেন, মাথায় হেলমেট থাকলেও ওই মোটরবাইক চালকের আশপাশ ভেসে যাচ্ছে রক্তে। হেলমেট খোলার মতো অবস্থা নেই। কোনও মতে তাঁকে উদ্ধার করে আর জি কর মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে নিয়ে গিয়েও শেষরক্ষা হল না। চিকিৎসকেরা মৃত ঘোষণা করলেন ওই মোটরবাইক চালককে।
শনিবার সকালে এই ঘটনা ঘটেছে উল্টোডাঙা উড়ালপুলে। পুলিশ সূত্রের খবর, মৃত বাইকচালকের নাম অপূর্ব দাস (৫৭)। তাঁর স্ত্রী এবং এক ছেলে রয়েছেন। সোদপুরের দেশবন্ধুনগর এলাকায় তাঁর বাড়ি। ইএম বাইপাসের দিক থেকে ভিআইপি রোডের দিকে যাওয়ার সময়ে ওই দুর্ঘটনা ঘটে। দ্রুত ঘটনাস্থলে পৌঁছয় মানিকতলা এবং লেক টাউন থানার পুলিশ। তবে ঘটনাস্থল লেক টাউন থানার অন্তর্গত হওয়ায় সেখানেই মামলা রুজু করা হয়েছে। কিন্তু কী করে এই দুর্ঘটনা ঘটল, তা স্পষ্ট নয়। পুলিশের অনুমান, অত্যন্ত দ্রুত গতিতে থাকায় নিয়ন্ত্রণ হারান চালক। আবার এমনও হতে পারে, বাইক চালানোর সময়ে তাঁর চোখ লেগে গিয়েছিল। ওই অবস্থাতেই রেলিংয়ে ধাক্কা মেরে সোজা নীচে গিয়ে পড়েন তিনি। আর জি করে মৃতদেহের ময়না-তদন্তের ব্যবস্থা করা হয়েছে। চূড়ান্ত রিপোর্ট এলেই দুর্ঘটনার কারণ স্পষ্ট হতে পারে বলে পুলিশের দাবি।
মৃতের ছেলে রাজা দাস জানান, তিনি একটি বেসরকারি সংস্থায় চাকরি করেন। অপূর্ববাবু আগে সেনাবাহিনীতে কাজ করতেন। অবসর নেওয়ার পরে বেহালায় একটি রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাঙ্কের শাখায় নিরাপত্তাকর্মীর কাজ নিয়েছিলেন। এ দিন সোদপুরের বাড়ি থেকে বেরিয়ে তিনি সেখানেই গিয়েছিলেন। রাজা বলেন, ‘‘আজ বাবার ব্যাঙ্কের কর্মীদের বাগুইআটির একটি স্বাস্থ্য কেন্দ্রে স্বাস্থ্য পরীক্ষা করানোর কথা ছিল। তালিকায় বাবার নামও ছিল। কিন্তু যে কাগজ দেখালে সেই পরীক্ষা করানো যাবে, সেটা বাবা ব্যাঙ্কে ফেলে এসেছিলেন। ভোরে বেরিয়ে বেহালা থেকে কাগজ নিয়ে বাগুইআটি যাবেন বলে ঠিক ছিল।’’
কিন্তু এটা প্রথম নয়। উল্টোডাঙা উড়ালপুলের ওই অংশে প্রায়ই এমন দুর্ঘটনার খবর শোনা যায়। একাধিক গাড়ি উড়ালপুলের বাঁক ঘুরতে গিয়ে সমস্যায় পড়ে বলেও প্রত্যক্ষদর্শীদের দাবি। গত মার্চ মাসে একই ভাবে উড়ালপুলের রেলিংয়ে ধাক্কা মেরে স্কুটার নিয়ে নীচের খালে পড়ে মৃত্যু হয়েছিল নারকেলডাঙা রেল কোয়ার্টার্সের বাসিন্দা অমিত বাল্মীকি নামে তিরিশ বছরের এক যুবকের। তখনও পুলিশ জানিয়েছিল, স্কুটারটি অত্যন্ত দ্রুত গতিতে আসছিল। ২০১৬ সালের জুন মাসেও একই ভাবে ওই উড়ালপুলে মৃত্যু হয় বেলেঘাটার বাসিন্দা মৃত্যুঞ্জয় চক্রবর্তীর। উড়ালপুলে বাঁক ঘুরতে গিয়ে সজোরে একটি পোলে ধাক্কা মারেন তিনি। কিন্তু পর পর ঘটনার পরেও ব্যবস্থা নেওয়া হয় না কেন? লেক টাউন থানার এক আধিকারিক বলেন, ‘‘উচ্চ স্তরে বিষয়টি জানানো হয়েছে। এ নিয়ে কিছু করার ভাবনাচিন্তাও চলছে।’’