শ্বাসরোধ করে খুন করা হয় প্রৌঢ় দম্পতিকে। ফাইল চিত্র
নেতাজিনগরে দম্পতি খুনের ঘটনায় গ্রেফতার মূল অভিযুক্ত মহম্মদ হামরুজ। শনিবার রাতে তাঁকে বিহারের কাটিহারে এক আত্মীয়ের বাড়ি থেকে গ্রেফতার করে কলকাতা পুলিশ। উদ্ধার হয়েছে লুঠ করা টাকা ও গয়নার একাংশ।
গত ২৯ জুলাই নেতাজিনগরে নিজের বাড়িতে খুন হন দিলীপ মুখোপাধ্যায় (৭১) ও তাঁর স্ত্রী স্বপ্না মুখোপাধ্যায় (৬৫)। তদন্তে নেমে গোয়েন্দারা প্রায় নিশ্চিত ছিলেন, লুঠের জন্যই খুন করা হয়েছে বৃদ্ধ দম্পতিকে। প্রথম থেকেই সন্দেহের নিশানায় ছিলেন রঙের মিস্ত্রিরা। কারণ খুনের পাঁচ দিন আগে পর্যন্ত বাড়িতে প্লাস্টার ও রং করানো হয়। পরিচারিকাকে জেরা করে পুলিশ জানতে পারে, বাড়িতে কাজ করানোর সময়েও অনেকটাই খোলামেলা ভাবে মিশতেন ওই দম্পতি। মিস্ত্রিদের সামনেই আলমারি খুলে টাকাপয়সা বের করতেন।
যে ঠিকাদার ওই মিস্ত্রিদের এনেছিলেন, তাঁকে জেরা করে পুলিশ। জানা যায়, স্থানীয় বাজার থেকে তাদের আনা হয়েছিল কাজের জন্য। সেই সূত্রে পুলিশ খোঁজখবর নেয় বাজারে কাজের খোঁজে আসা বাকি মজুরদের। তখনই উঠে আসে হামরুজের নাম। তার কলকাতার অস্থায়ী ঠিকানায় গিয়ে দেখা যায়, সে নেই। এরপর খোঁজ নেওয়া হয় বিহারের বারসইতে হামরুজের বাড়িতে। কিন্তু সেখানেও সে যায়নি বলে জানতে পারে পুলিশ।
আরও পড়ুন : ছাত্রীর পোশাক নিয়ে ফতোয়া মেসে
হামরুজের আত্মীয়স্বজনদের বাড়িতে এরপর শুরু হয় খোঁজখবর। সে সময়েই কাটিহারে এক আত্মীয়ের বাড়িতে পাওয়া যায় পলাতক হামরুজকে। পুলিশ সূত্রে খবর, অপরাধের পরে কলকাতা থেকে পালিয়ে নিজের বাড়িতে না গিয়ে কাটিহারে ওই আত্মীয়ের বাড়িতে গা ঢাকা দিয়েছিল দিনমজুর হামরুজ। তাকে কলকাতায় আনা হচ্ছে।
সোমবার রাত সাড়ে ১০টা থেকে ১২টার মধ্যে দিলীপ ও তাঁর স্ত্রী স্বপ্না মুখোপাধ্যায়কে খুন করা হয়েছে বলে অনুমান পুলিশের। পুলিশের দাবি, পরিচিত ব্যক্তিকে দেখেই দরজা খুলে দেন বৃদ্ধা স্বপ্নাদেবী। সময় নষ্ট না করে বৃদ্ধাকে সিড়িতেই শ্বাসরোধ করে খুন করে আততায়ী। তার পর উপরের ঘরে গিয়ে বৃদ্ধ দিলীপকে টার্গেট করে।
মঙ্গলবার সকালে মুখোপাধ্যায় দম্পতির সাড়া না পেয়ে স্থানীয়রা পাশের জানলা দিয়ে উঁকি মেরে দেখেন দু’জনেই বিছানার উপর পড়ে রয়েছেন। এর পরই পুলিশে খবর দেওয়া হয়। পুলিশ গিয়ে তাঁদের দেহ উদ্ধার করে। বাড়ি থেকে লক্ষাধিক টাকা ছাড়াও স্বপ্নাদেবীর গলার হার নিয়ে পালিয়েছিল আততায়ী। পাশাপাশি নিয়ে গিয়েছিল দিলীপবাবুর মোবাইল ফোন এবং প্রৌঢ়ার মোবাইলের সিমকার্ডটি। যা দেখে অবাক হয়েছিল পুলিশও। তাদের অনুমান, ওই সিমকার্ডে অনেক ফোন নম্বর ছিল। সেগুলি নষ্ট করতেই সেটি নিয়ে যাওয়া হয়েছিল।
আরও পড়ুন : শাগরেদদের সংস্থায় ঢুকিয়ে তথ্য চুরি, ধৃত ৬
প্রৌঢ় ও নিঃসন্তান মুখোপাধ্যায় দম্পতি একটি উইল করে গিয়েছিলেন। ঘটনার পর থেকে উধাও সেই উইল। যা থেকে ওই বাড়িটির উপরে প্রোমোটারির থাবা বসানোর তত্ত্ব ক্রমেই জোরালো হয়েছে। জোড়া খুনের এই ঘটনার তদন্তে বাকি ধোঁয়াশা ধৃতকে জেরা করে অনেকটাই কাটবে বলে ধারণা তদন্তকারীদের।