ফাইল চিত্র।
মহারাষ্ট্রের ঠাণে পারে, কিন্তু কলকাতা পুরসভা পারে না!
এ শহরে প্রতি বছরই বর্ষাকালে ভেঙে পড়ে বেশ কিছু বিপজ্জনক বাড়ি বা বাড়ির অংশ। তাতে
হতাহতের ঘটনাও ঘটে। গত বুধবার সকালেই যেমন উত্তর কলকাতার আহিরীটোলা স্ট্রিটের একটি জীর্ণ বাড়ি ভেঙে পড়ায় এক শিশু-সহ দু’জনের মৃত্যু হয়েছে। কলকাতা পুরসভা এলাকায় বর্তমানে প্রায় তিন হাজার বিপজ্জনক বাড়ি রয়েছে। সেগুলির মধ্যে অন্তত ১০০টি
বাড়ি যে কোনও মুহূর্তে ভেঙে পড়তে পারে। এ কথা জানিয়েছেন খোদ পুরসভার প্রশাসকমণ্ডলীর চেয়ারপার্সন ফিরহাদ হাকিম। অথচ, ওই সমস্ত বাড়ি ভাঙার ‘সাহস’ পান না পুর কর্তৃপক্ষ। তাঁরা শুধু বাড়ির গায়ে ‘বিপজ্জনক’ নোটিস ঝুলিয়েই খালাস! তবে, কলকাতা পুরসভা যে কাজ করতে ‘ভয়’ পায়, শিবসেনা-শাসিত মহারাষ্ট্রের ঠাণে পুরসভা কিন্তু তা অনায়াসেই করে দেখাচ্ছে।
ঠাণে পুরসভা সূত্রের খবর, ওই পুর এলাকায় মোট ৪৫২২টি বিপজ্জনক বাড়ি রয়েছে। এ বছর বর্ষা শুরু হওয়ার আগেই ঠাণে
পুরসভার কমিশনার বিপিন শর্মা বিজ্ঞপ্তি জারি করে পুরসভার বিল্ডিং বিভাগের সমস্ত আধিকারিক এবং প্রতিটি ওয়ার্ডের এগ্জিকিউটিভ ইঞ্জিনিয়ারদের জানিয়েছিলেন, শহরের সমস্ত ‘অতি বিপজ্জনক’ বাড়ি অবিলম্বে খালি করে ভেঙে ফেলতে হবে। ঠাণে পুরসভার অতিরিক্ত কমিশনার সন্দীপ মালভি ফোনে বলেন, ‘‘চলতি বর্ষার মরসুমেই এই পুরসভা এলাকার মোট ৭৩টি অতি বিপজ্জনক বাড়ির মধ্যে ১৫টি ভেঙে ফেলা হয়েছে। আরও ৫৪টি অতি বিপজ্জনক বাড়ি থেকে বাসিন্দাদের সরিয়ে দেওয়া হয়েছে। সেগুলিও ধীরে ধীরে ভেঙে ফেলা হবে।’’ বাকি কয়েকটি বাড়ির ক্ষেত্রে এখনও সিদ্ধান্ত হয়নি। সন্দীপ জানান, ওই পুর এলাকার বিপজ্জনক বাড়িগুলিকে তিনটি ভাগে ভাগ করা হয়েছে। ১) সি-১ ক্যাটেগরিতে রয়েছে সংস্কারের অযোগ্য অতি বিপজ্জনক বাড়ি। ২) সি-২এ ক্যাটেগরিতে রাখা হয়েছে এমন সমস্ত বিপজ্জনক বাড়ি, যেগুলি অবিলম্বে খালি করা দরকার। তবে, ওই বাড়িগুলির গঠনগত বা স্ট্রাকচারাল অডিট করে দেখা গিয়েছে, সেগুলি সংস্কার করা যাবে। ৩) সি-২বি ক্যাটেগরিতে রয়েছে এমন সমস্ত বিপজ্জনক
বাড়ি, যেগুলিতে বাসিন্দারা থেকেও সংস্কার করতে পারবেন। ঠাণে পুরসভার ডেপুটি মিউনিসিপ্যাল কমিশনার (এনক্রোচমেন্ট) অশ্বিনী ওয়াঘমালা ফোনে বলেন, ‘‘গত পাঁচ বছরে আমরা মোট ১০৯টি বিপজ্জনক বাড়ি ভেঙেছি।’’
বিপজ্জনক কোনও বাড়ি ভেঙে ফেলার আগে গোটা প্রক্রিয়াটি সম্পন্ন করতে বেশ কিছু পদক্ষেপ
করা হয় বলে জানিয়েছেন ঠাণে পুরসভার অতিরিক্ত কমিশনার সন্দীপ। তাঁর কথায়, ‘‘ভাঙার আগে আমরা সংশ্লিষ্ট বাড়িটিকে বিপজ্জনক বলে ঘোষণা করে সেখানে নোটিস পাঠাই। এর পরে বাড়ি খালি করতে বুঝিয়ে বলা হয় বাসিন্দাদের। তাতে কাজ না হলে পুলিশ দিয়ে বাড়ি খালি করানো হয়। ওই বাসিন্দারা বিকল্প বাসস্থান খুঁজে না পেলে পুরসভার নিজস্ব আবাসনে মাসে দু’হাজার টাকা ভাড়া দিয়ে থাকতে পারেন।’’ এখানেই প্রশ্ন উঠেছে, ঠাণে পুরসভা একের পর এক বিপজ্জনক বাড়ি ভাঙতে পারলে কলকাতা পুরসভা পারে না কেন?
কলকাতা পুরসভার ২২ নম্বর ওয়ার্ডের কোঅর্ডিনেটর, বিজেপির মীনাদেবী পুরোহিতের অভিযোগ, ‘‘ইচ্ছে থাকলে যে কাজ করা যায়, ঠাণে পুরসভা তা চোখে আঙুল দিয়ে দেখিয়ে দিয়েছে। আমাদের এখানে কেবল ভোটের রাজনীতি। তাই বিপজ্জনক বাড়ি ভেঙে পড়লে তবেই টনক নড়ে পুর কর্তৃপক্ষের।’’
এ বিষয়ে ফিরহাদ হাকিম বলেন, ‘‘কারও ব্যক্তিগত সম্পত্তিতে ঢুকে তা ভাঙার ক্ষমতা আমাদের নেই। আমরা পুলিশ দিয়েও বাড়ি ভাঙতে পারি না।
তবে, শহরের অতি বিপজ্জনক বাড়িগুলি ভাঙতে আমরা শীঘ্রই আদালতের দ্বারস্থ হব। তার জন্য তালিকা তৈরি হচ্ছে।’’