Fire

Madhyamik 2022: বইখাতা কেড়েছে আগুন, দিশাহারা পড়ুয়ারা

শনিবার সন্ধ্যায় আগুন থেকে বাঁচতে পড়িমরি করে বাড়ি থেকে মা ও ভাইয়ের সঙ্গে বেরিয়ে এলেও বইখাতা কিছুই বার করতে পারেনি ওই ছাত্রী।

Advertisement

মেহবুব কাদের চৌধুরী

কলকাতা শেষ আপডেট: ১৪ মার্চ ২০২২ ০৬:৪৫
Share:

আগুনে বইখাতা হারিয়েছে সীমা খাতুনের। রবিবার। নিজস্ব চিত্র।

ট্যাংরার মেহের আলি লেনে রেক্সিনের গুদামে শনিবার সন্ধ্যায় যখন আগুন লাগে, তখন ওই গুদামের পাঁচিল লাগোয়া কুলিয়া ট্যাংরা ফার্স্ট লেনে একটি চারতলা বাড়ির দোতলার ঘরে বসে অঙ্ক কষছিল সীমা। সীমা খাতুন। বেলেঘাটার শান্তিসঙ্ঘ বিদ্যায়তন ফর গার্লস থেকে এ বছর মাধ্যমিক দিচ্ছে সে। আজ, সোমবার সীমার অঙ্ক পরীক্ষা। শনিবার সন্ধ্যায় আগুন থেকে বাঁচতে পড়িমরি করে বাড়ি থেকে মা ও ভাইয়ের সঙ্গে বেরিয়ে এলেও বইখাতা কিছুই বার করতে পারেনি ওই ছাত্রী।

Advertisement

কোনও রকমে শুধু অ্যাডমিট কার্ডটা আনতে পেরেছিল। সীমা জানাল, আজকের অঙ্ক এবং কাল, ভৌতবিজ্ঞান পরীক্ষা রেললাইনের ধারে দাদুর বাড়ি থেকে দেবে সে। বই দিয়ে তাকে সাহায্য করবে এক বান্ধবী।

শুধু সীমাই নয়, আগুনের গ্রাস থেকে বইখাতা বাঁচাতে না পারায় অকূলপাথারে পড়েছে কুলিয়া ট্যাংরা ফার্স্ট লেনের বস্তির বহু পড়ুয়া। স্থানীয় বাসিন্দারা জানালেন, ছোট থেকেই পড়াশোনায় মেধাবী সীমা। শনিবার সন্ধ্যায় আগুন-আতঙ্কে যখন বস্তির লোকজনের মধ্যে বেরোনোর জন্য হুড়োহুড়ি পড়ে যায়, তখন আশপাশের চিৎকারে মা ও ভাইকে নিয়ে কোনও রকমে বেরিয়ে আসে সে। তার পরে আর নিজেদের ঘরে ঢুকতে পারেনি। আগুন লাগার খবর পেয়ে ছুটে এসে কোনও রকমে বাড়ি থেকে মেয়ের মাধ্যমিকের অ্যাডমিট কার্ডটা বার করে আনতে পেরেছিলেন সীমার বাবা আবুল হোসেন মোল্লা। রবিবার ঘটনাস্থলে দাঁড়িয়ে আবুল বলেন, ‘‘গোটা বাড়ি কালো ধোঁয়ায় ঢেকে গিয়েছিল। মেয়ের অ্যাডমিট কার্ডটা যে বার করতে পেরেছি, সেটাই রক্ষে। চেষ্টা করেও আর কিছু বার করতে পারিনি।’’

Advertisement

বাবার পাশে দাঁড়িয়ে সীমা বলে, ‘‘এখনও পর্যন্ত পরীক্ষা ভালই দিয়েছি। অঙ্ক আর ভৌতবিজ্ঞানের জন্য ভাল ভাবেই তৈরি হয়েছিলাম। তারই মধ্যে এমন অঘটন। হঠাৎ করে ঘরছাড়া হতে হওয়ায় একটু টেনশন তো হচ্ছেই।’’ ওই ছাত্রী জানাল, এক বান্ধবী তাকে সাহায্য করবে বলে আশ্বাস দিয়েছে। সে এগিয়ে আসায় বাকি দু’টি পরীক্ষা ভাল ভাবে দিতে পারার ব্যাপারে আশাবাদী সীমা।

মেহের আলি লেনের ওই গুদাম লাগোয়া কুলিয়া ট্যাংরা ফার্স্ট লেনের এই বস্তিতে প্রায় হাজার তিনেক লোকের বাস। তাঁরা জানালেন, ভয়ে এবং আতঙ্কে শনিবার সারা রাত তাঁরা দু’চোখের পাতা এক করতে পারেননি। ওই বস্তিরই আর এক বাসিন্দা সামিনা নাইয়া বেলেঘাটার শান্তিসঙ্ঘ বিদ্যায়তন ফর গার্লসেই অষ্টম শ্রেণিতে পড়ে। তার বাবা শাহাজাদা এ দিন বলেন, ‘‘আমার ঘর তো ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছেই, মেয়ের খাতা-বইও বেশির ভাগই পুড়ে গিয়েছে। কিছুই বাঁচাতে পারিনি।’’

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement