পথের কাঁটা সরাতে খুনের সুপারি দিয়েছিল রামুয়ার স্ত্রীর প্রেমিকই

সোদপুরের এই খুনের ঘটনায় খড়দহ থানার ওসি মৃত্যুঞ্জয় বন্দ্যোপাধ্যায়ের নেতৃত্বে তৈরি বিশেষ দলের কাছে শনিবার সূত্র মারফত খবর আসে, ব্যারাকপুর মহকুমা আদালতে এক যুবক ঘোরাফেরা করছে। পুলিশ জানাচ্ছে, কার্তিক নামে ওই যুবকের সঙ্গে কাজলের ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক আছে দাবি করে তাকে মারধর করত রামুয়া।

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

শেষ আপডেট: ২১ জানুয়ারি ২০১৯ ০২:৫৭
Share:

কার্তিক যাদব।

পথের কাঁটা রামুয়াকে সরিয়ে দিতে খুনের পরিকল্পনা চলছিল কয়েক মাস ধরেই। শুধু ছেলে নয়। সেই পরিকল্পনা ছিল রামুয়ার স্ত্রীর প্রেমিকেরও। তবে প্রথম দিকে বিষয়টিতে রামুয়ার স্ত্রী নিমরাজি থাকলেও পরে ছেলে ও প্রেমিকের সঙ্গে সহমত হয় সে। আর ওই তিন জনের পরিকল্পনা মতোই খুন হয় হাওড়ার ত্রাস রামমূর্তি দেওয়ার ওরফে রামুয়া। শনিবার ব্যারাকপুর আদালতের বাইরে থেকে রামুয়ার স্ত্রী কাজলের প্রেমিক কার্তিক যাদবকে গ্রেফতারের পরে এমনই জানতে পেরেছেন তদন্তকারীরা। পুলিশ সূত্রের খবর, গত রবিবার খুনের ঘটনার পর থেকেই রামুয়ার স্ত্রী কাজল ও ছেলে সমীরকে সন্দেহের তালিকায় রেখেছিলেন তাঁরা। কাজল, সমীর ও তার তিন বন্ধুকে গ্রেফতারের পরেও তদন্তকারীদের অনুমান ছিল, আরও এক জন এতে যুক্ত রয়েছেন। কারণ খুনের সুপারি বাবদ তিন লক্ষ টাকা কে জোগান দিল, তা নিয়ে সন্দেহ ছিল পুলিশের।

Advertisement

সোদপুরের এই খুনের ঘটনায় খড়দহ থানার ওসি মৃত্যুঞ্জয় বন্দ্যোপাধ্যায়ের নেতৃত্বে তৈরি বিশেষ দলের কাছে শনিবার সূত্র মারফত খবর আসে, ব্যারাকপুর মহকুমা আদালতে এক যুবক ঘোরাফেরা করছে। পুলিশ জানাচ্ছে, কার্তিক নামে ওই যুবকের সঙ্গে কাজলের ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক আছে দাবি করে তাকে মারধর করত রামুয়া। তদন্তকারীরা আরও জানতে পারেন, ওই দিন কাজলকে আদালতে তোলার পরে তার জামিনের জন্য ও নিজের বিষয়ে খোঁজ নিতে হাজির হয় কার্তিক। বিকেলে আদালতের বাইরে আসতেই জীবন বিমার এজেন্ট ওই যুবক গ্রেফতার হয়।

হাওড়ার বেলিলিয়াস রোডের বাসিন্দা কার্তিক জেরায় পুলিশকে জানিয়েছে, আড়াই বছর আগে মেয়ের বিমা করার সূত্রে তার সঙ্গে কাজলের পরিচয়। রামুয়া জেলে থাকার সুযোগে দু’জনের মধ্যে ঘনিষ্ঠতা বাড়তে থাকে। দুর্গাপুজোর সময়ে দু’জনকে একসঙ্গে ঘুরতে দেখে ফেলেন কাজলদের এক আত্মীয়। বিষয়টি জানতে পেরে রামুয়া জেলে বসেই কার্তিককে হুমকি দেয়। এমনকি, রামুয়ার শাগরেদরা কার্তিকের বাড়ি গিয়ে হুমকি দেয় তার মাকেও।

Advertisement

আরও পড়ুন: ‘ভাগ্যিস ঘুমোইনি, দাউদাউ করে জ্বলছিল, ন’মাসের বাচ্চা কোলে নিয়েই ছুটলাম

পুলিশ জানায়, এর পর থেকেই রামুয়াকে খুন করার ছক কষেছিল কার্তিক। তবে হাওড়ার কাউকে দিয়ে কাজটি করানোর ঝুঁকি না নিয়ে বাইরের লোক খুঁজতে শুরু করে। পাশাপাশি, কাজলকেও বোঝাতে শুরু করে তার সঙ্গে সহমত হতে। অন্য দিকে বাবার জন্য নিজের কেরিয়ার নষ্ট ও পরিবারকে অনিশ্চিত জীবন থেকে বার করে আনতে সমীরও বছরখানেক ধরে খুনের পরিকল্পনা ফেঁদেছিল। তবে ছেলেকে প্রথমে তাতে মত দিত না কাজল।

তদন্তকারীরা জানতে পেরেছেন, ডিসেম্বরে বাড়ি ফিরে স্ত্রীকে মারধরের পাশাপাশি ফের নিজের জগতে কাজ শুরুর প্রস্তুতি নেয় রামুয়া। তখনই সমীরের পরিকল্পনায় কাজল সম্মতি দেয়। কী ভাবে কাজ হবে তা নিয়ে কাজল, সমীর ও কার্তিকের মধ্যে বহু বার আলোচনা হয়। কার্তিকের কথা মতো সমীর বিশাখাপত্তনমে থাকা বন্ধু শ্যামসুন্দর রাওয়ের সঙ্গে যোগাযোগ করে জামশেদপুর থেকে বিশাল মেনন ও প্রশান্ত সিংহকে জোগাড় করে। শ্যামসুন্দর, বিশাল ও প্রশান্ত সুপারি চায় ১০ লক্ষ টাকা। শেষে আলোচনায় তা নেমে আসে তিন লক্ষে।

আরও পড়ুন: আগুনগ্রাসে গড়িয়াহাটও

পুলিশ জানিয়েছে, টাকার বন্দোবস্ত করার দায়িত্ব নিয়েছিল কার্তিক। তাই বায়না বাবদ অন্তত এক লক্ষ টাকা জোগাড়ের কথা বলতে খুনের আগের দিন হাওড়ায় গিয়ে তার সঙ্গে দেখা করে সমীর। পরের দিন দুপুরে বিশাল ও প্রশান্ত হাওড়া স্টেশনে পৌঁছনোর পরে ফোনে যোগাযোগ করে তাদের হাতে ১ লক্ষ টাকা তুলে দেয় কার্তিক। বায়না মেলার খবর পাওয়ার পরেই বিশাখাপত্তনম থেকে বিমানে ওঠে শ্যাম। তবে ঘটনার সময়ে কার্তিক সোদপুরে আসেনি। পরিকল্পনা ছিল, খুনের তিন-চার দিন পরে বাকি ২ লক্ষ টাকা সে শ্যামদের কাছে দিয়ে আসবে। আর সব মিটে গেলে কাজল ও সমীর চলে যাবে বিশাখাপত্তনমে। কয়েক দিন পরে সেখানে পৌঁছে যাবে কার্তিকও। কার্তিক ও কাজলের নতুন সংসার করাতে আপত্তি ছিল না সমীরের। পুলিশ জেনেছে, ৭.৬২ পিস্তলটি থেকে গুলি চালিয়েছিল বিশাল।

ধৃত বিশাল, শ্যাম, প্রসান্ন ও কার্তিককে রবিবার ব্যারাকপুর আদালতে তোলা হলে তাদের ৯ দিনের পুলিশি হেফাজতের নির্দেশ হয়েছে।

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement