টানাটানি: এই বাড়ির দেওয়াল দখল নিয়েই শুরু লড়াই। ছবি: স্বাতী চক্রবর্তী
মায়ের পছন্দ যাঁদের, মেয়ের আবার তাঁদের পছন্দ নয়! ভরা ভোট মরসুমে মা যাঁর নামে বাড়ির দেওয়াল লেখাতে দিতে চান, মেয়ে আবার তাঁকে জায়গা দিতে নারাজ।
দুই প্রজন্মের ব্যক্তিগত পছন্দের ভিন্নতায় দেওয়াল লিখন নিয়ে গোল বেধেছে কসবায়। এমনকি, দেওয়ালের ‘দখল’ কে নেবে, তা নিয়ে দুই রাজনৈতিক দলের লড়াই গড়িয়েছে থানা পর্যন্ত। এক পক্ষ প্রমাণ হিসেবে মায়ের স্বাক্ষর করা অনুমতিপত্র দেখাচ্ছে। অন্য পক্ষের আবার দাবি, তাদের হাতে আছে মেয়ের অনুমতিপত্র! অভিযোগ, পাল্টা অভিযোগের মুখে মামলা রুজু করে তদন্ত করতে হয়েছে কসবা থানার পুলিশকে। আপাতত মায়ের পছন্দের পক্ষেই ‘রায়’ দিয়েছে পুলিশ! তাদের যুক্তি, যে বাড়ির দেওয়াল নিয়ে ঝামেলা হচ্ছে, তাতে মেয়ের চেয়ে মায়ের অধিকারই বেশি। কারণ, মালিকানা তাঁর নামেই। দু’পক্ষই এখন দাবি করছে, আদর্শ আচরণ-বিধি মাথায় রেখেই তারা এগিয়েছিল। ঝামেলা পাকিয়েছে অন্য পক্ষ।
দক্ষিণ কলকাতা লোকসভা কেন্দ্রের সিপিএম প্রার্থী নন্দিনী মুখোপাধ্যায়ের সমর্থনে গত ১৭ মার্চ কসবার এন কে ঘোষাল রোডের ৩৪টি/১৮ নম্বর বাড়ির একটি দেওয়াল লিখছিলেন কয়েক জন সিপিএম কর্মী। অভিযোগ, সেই সময়েই স্থানীয় কয়েক জন তৃণমূলকর্মী তাঁদের উপরে চড়াও হন। দেওয়ালে লিখতে বাধা দেওয়ার পাশাপাশি সিপিএম কর্মীদের মারধরও করা হয় বলে অভিযোগ। সঞ্জয় ঘোষ নামে এক সিপিএম নেতা থানায় লিখিত ভাবে জানান, নিয়ম মেনে বাড়ির মালিকের থেকে অনুমতি নেওয়া থাকলেও স্থানীয় এক তৃণমূল নেতার নেতৃত্বে দেওয়াল লিখতে তাঁদের বাধা দেওয়া হয়েছে।
অভিযোগপত্রের সঙ্গে থানায় একটি অনুমতিপত্র জমা করে সিপিএম। তাতে দেখা যাচ্ছে, গত ১০ মার্চ ৩৪টি/১৮ নম্বর বাড়ির মালিকের কাছ থেকে বাড়ির একটি দেওয়াল প্রচারে ব্যবহারের অনুমতি নিয়েছে সিপিএম। নিজে অনুমতিপত্রে স্বাক্ষর করেছেন বাড়ির মালিক দেবযানী গুহ। এর পরে পুলিশ কথা বলে স্থানীয় তৃণমূল নেতাদের সঙ্গে। সিপিএমের অনুমতিপত্রটি ভুয়ো দাবি করে পাল্টা একটি অনুমতিপত্র দেখায় তৃণমূল। তাতে আবার বাড়ির দেওয়াল ব্যবহার করার অনুমতি দিয়ে দেবযানীদেবীর মেয়ে স্বাক্ষর করেছেন। বিপাকে পড়ে কসবা থানার পুলিশ কথা বলে দেবযানীদেবীর সঙ্গে। তিনি সিপিএমকেই দেওয়াল দিতে চান বলে জানিয়ে দেন। বছর সাতষট্টির ওই বৃদ্ধার স্বামী মারা গিয়েছেন। ওই বাড়িতে এখন শুধু মা-মেয়েই থাকেন। দেবযানীদেবী বলেন, ‘‘আমার বাড়ির দেওয়াল আমি সিপিএমকেই দিয়েছি। মেয়েকে এর মধ্যে আর জড়াতে চাই না। যা বলার আমিই বলছি।’’
ভোটের দামামা বাজতেই পাড়ায় পাড়ায় ‘দেওয়াল দখলে’র লড়াই শুরু হয়ে গিয়েছে রাজনৈতিক দলগুলির মধ্যে। সাধারণত ক্ষমতায় থাকা দলের দখলেই থাকে বেশির ভাগ দেওয়াল। উল্টোটাও আবার দেখা যায় বিভিন্ন ক্ষেত্রে। এলাকায় ক্ষমতাসীন দলের কাজে অখুশি থাকায় হুগলির পুরশুড়া-১ নম্বর পঞ্চায়েতে দেওয়াল লিখতে দেওয়া হয়নি দিন কয়েক আগেই। জোর করে দেওয়াল লেখানো নিয়ে স্পষ্ট নির্দেশ রয়েছে নির্বাচন কমিশনেরও। সমস্যার কথা জানিয়ে সংশ্লিষ্ট বাড়ির মালিক জেলার রিটার্নিং অফিসারের কাছে অভিযোগ জানাতে পারেন। বিগত বছরগুলিতে নির্বাচন কমিশনের কাছেও এ নিয়ে বেশ কিছু অভিযোগ জমা পড়েছিল।
আগাম সাবধান হয়েই কি কসবার ওই দেয়ালের লড়াই ছেড়ে দিল তৃণমূল? ওই কেন্দ্রের এ বারের তৃণমূল প্রার্থী মালা রায় বলছেন, ‘‘এ নিয়ে ঝামেলায় গিয়ে লাভ নেই। বাড়ির দেওয়াল ব্যক্তিগত সম্পত্তি। যে যাঁকে খুশি দিতে পারেন। দেওয়াল যাঁকেই দিন, ভোটটা আমাকে দিলেই হবে।’’ সিপিএম নেতা সুজন চক্রবর্তী বলছেন, ‘‘মানুষের পছন্দকে গুরুত্ব দিতে ওঁরা ভুলে যাচ্ছেন। ওঁদের বুঝতে হবে, সব ব্যাপারে জোর জবরদস্তি করলে লোকে খারাপ বলে।’’