কলকাতার রাস্তাঘাট মূলত সচল। — নিজস্ব চিত্র।
উত্তেজনার পরিস্থিতির মধ্যেই লেবুতলা পার্কের বাড়ি থেকে বিজেপি কাউন্সিলর সজল ঘোষকে তুলে নিয়ে যায় পুলিশ। তাঁকে গাড়িতে তুলে লালবাজারের উদ্দেশে নিয়ে যাওয়া হয়েছে বলে সূত্রের খবর। তাঁকে আটক করা হয়েছে বলে দাবি পরিবারের। বুধবার সকালেই কোলে মার্কেটে বন্ধের সমর্থনে নেমেছিলেন বিজেপি কর্মী-সমর্থকেরা। নেতৃত্বে ছিলেন সজল। সেখানে তৃণমূলের কর্মীদের সঙ্গে একপ্রস্ত বচসায় জড়িয়েছিলেন সজল ও তাঁর অনুগামীরা। মুচিপাড়া থানার পুলিশ গিয়ে তখনকার মতো পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে এনেছিল। পরে বাড়ি থেকে সজলকে তুলে নিয়ে যান পুলিশকর্মীরা।
বুধবার সকালে গড়িয়াহাটে বন্ধের সমর্থনে রাস্তায় নেমেছিলেন রূপা গঙ্গোপাধ্যায়। বাসচালক ও যাত্রীদের কাছে তিনি অনুরোধ করছিলেন যাতে তাঁরা বন্ধকে সমর্থন করেন। এর কিছু সময় পরেই জানা যায়, রূপা গঙ্গোপাধ্যায়কে আটক করা হয়েছে। অগ্নিমিত্রা পালকেও গড়িয়াহাট থেকে গাড়িতে তুলে নিয়ে গিয়েছে পুলিশ।
কোলে মার্কেটে গোলমালের পর পুলিশ সেখান থেকে সরিয়ে নিয়ে যায় সজল ঘোষকে। এর কিছু ক্ষণ পরেই সজলের বাড়ির সামনে নতুন করে ছড়ায় উত্তেজনা। সজলের অনুগামীদের বক্তব্য, পুলিশ বিজেপি কাউন্সিলরের বাড়ি ঘিরে রেখেছে। সজলকে আবার পুলিশ তুলে নিয়ে যেতে পারে বলে আশঙ্কা করছেন তাঁরা। বিজেপি নেতার বাড়ির সামনের যে দৃশ্য উঠে এসেছে, তাতে এক দিকে পুলিশকর্মীদের ভিড়, অন্য দিকে সজলের অনুগামীদের ভিড়। সজলের বাড়িতে তাঁর সঙ্গে দেখা করতে যান তাপস রায়ও।
বাড়ির ভিতর থেকে সমাজমাধ্যমে সজলের বার্তা, “আমরা হাতজোড় করে অনুরোধ করেছি। পুলিশ সেটি দেখেছে। তারা আমাকে গায়ের জোরে টেনে নিয়ে যেতে চেয়েছিল। পারেনি। তাই এখন আমার বাড়ি ঘিরে রেখেছে।” পাড়ার বাসিন্দাদের উদ্দেশে ওই ভিডিয়োবার্তায় তিনি আরও বলেন, “আমি যদি আপনাদের সেবক হই, আজ আমার এই দিনে আমার পাশে দাঁড়ান। যে ভাবে পুলিশ আমাকে অন্যায় ভাবে গ্রেফতার করার চেষ্টা করছে, আপনারা আমার পাশে দাঁড়ান। আমি আবেদন করছি এলাকার মা-বোনেদের কাছে।”
গড়িয়াহাটে বন্ধের সমর্থনে রাস্তায় নামলেন রূপা গঙ্গোপাধ্যায়। হাতেগোনা কয়েক জন দলীয় কর্মীকে সঙ্গে নিয়ে রাস্তায় দেখা মিলল তাঁর। গড়িয়াহাট চত্বরে বুধবার সকাল থেকেই বাস ও অন্যান্য গাড়ির দেখা মিলেছে। বাসচালক ও যাত্রীদের কাছে রূপা হাতজোড় করে অনুরোধ করেন বন্ধকে সমর্থন করার জন্য। সেই সময়েই তৃণমূলের কর্মী-সমর্থকরা তাঁকে ঘিরে ‘গো ব্যাক’ স্লোগান দিতে শুরু করেন।
বন্ধের সমর্থনে সল্টলেকে বিজেপির একটি কর্মসূচি শুরু করতেই পদক্ষেপ করল পুলিশ।সল্টলেক সেক্টর ফাইভ সংলগ্ন এলাকায় থেকে বিজেপির রাজ্যসভার সাংসদ শমীক ভট্টাচার্যকে গাড়িতে তুলে নিয়ে যায় পুলিশ। ধরপাকড় করা হয়েছে অন্যান্য কর্মী-সমর্থককেও।
শ্যামবাজারে বন্ধের সমর্থনে রাস্তায় নেমেছিলেন লকেট চট্টোপাধ্যায়, রাহুল সিন্হারা। তাঁদের নেতৃত্বে পথ অবরোধ শুরু করেছিলেন বিজেপি কর্মী-সমর্থকেরা। পরিস্থিতি সামলাতে পুলিশ তাঁদের গাড়ি তুলে অন্যত্র নিয়ে যায়।
সল্টলেকের উইপ্রো মোড়ে অবরোধের চেষ্টা শুরু করেন বিজেপির কর্মী-সমর্থকেরা। সকাল থেকে করুণাময়ী বাস স্ট্যান্ডে পরিষেবা সচলই রয়েছে। বেলা গড়াতেই উইপ্রো মোড়ের কাছে কয়েক জন বন্ধ সমর্থনকারী পথ অবরোধের চেষ্টা করেন। পুলিশ তাঁদের হটিয়ে দিয়ে বাস এগোনোর ব্যবস্থা করে দেয়।
শ্যামবাজার পাঁচ মাথার মোড়ে মুখোমুখি তৃণমূল ও বিজেপির কর্মী-সমর্থকেরা। বিজেপির কর্মী-সমর্থকেরা সেখানে অবস্থান শুরু করলে তৃণমূলের কর্মীরা আপত্তি জানান। সেখানে উপস্থিত পুলিশকর্মীরা দু’পক্ষকে দু’দিকে সরিয়ে দেওয়ার চেষ্টা করেন। উত্তেজনার পরিস্থিতি সামলাতে ঘটনাস্থল থেকে বেশ কয়েক জন বন্ধ সমর্থনকারীকে প্রিজ়ন ভ্যানে তুলে নিয়ে যায় পুলিশ।
বেলা গড়াতেই বন্ধের সমর্থনে রাস্তায় নামেন বিজেপি নেতা সজল ঘোষ। কোলে মার্কেট এলাকায় গিয়ে তিনি ব্যবসায়ীদের কাছে আর্জি জানান বন্ধ সমর্থন করার জন্য। অভিযোগ, সেই সময় কাউকে কাউকে দোকান বন্ধ করতে জোর করা হয়েছে। যদিও বিজেপির দাবি, শান্তিপূর্ণ ভাবেই বন্ধে সমর্থনের জন্য আহ্বান জানানো হয়েছিল। তৃণমূলের সমর্থকদের একাংশের সঙ্গে বচসাতেও জড়িয়ে পড়েন সজলের নেতৃত্বে বিজেপির কর্মী-সমর্থকেরা। ধস্তাধস্তিতে অসুস্থ বোধ করেন সজল। পুলিশ তাঁকে সেখান থেকে সরিয়ে অন্যত্র নিয়ে যায়।
বন্ধের সমর্থনে বড়বাজারে বিজেপি কাউন্সিলর বিজয় ওঝার নেতৃত্বে মিছিল পদ্মের কর্মী-সমর্থকদের। মিছিলে রয়েছেন তমোঘ্ন ঘোষও। অভিযোগ উঠছে, সেই এলাকায় জোর করে দোকানপাট বন্ধ করানোর চেষ্টা চলেছে।
বিজেপি কর্মী-সমর্থকেরা সকাল থেকে আসরে নেমে পড়েছেন বন্ধের সমর্থনে। কয়েক জায়গায় পুলিশের সঙ্গে বিক্ষিপ্ত বচসা, ধস্তাধস্তির ছবি ধরা পড়েছে। টালা সেতুর উপর আগুন জ্বালিয়ে বিক্ষোভ প্রদর্শন করেন বিজেপি কর্মী-সমর্থকেরা।
টালা সেতুতে আগুন জ্বালিয়ে বিক্ষোভ। —নিজস্ব চিত্র।
শ্যামবাজার পাঁচ মাথার মোড়, ধর্মতলা চত্বর-সহ কলকাতা ও শহরতলির অন্যান্য গুরুত্বপূর্ণ মোড়ে মোতায়েন রয়েছেন পর্যাপ্ত পুলিশকর্মী। কলকাতার রাস্তায় বন্ধের বিশেষ প্রভাব দেখা যায়নি। সল্টলেক করুণাময়ী বাস স্ট্যান্ড থেকেও স্বাভাবিক রয়েছে পরিষেবা। সকাল থেকেই চলছে বাস, তবে যাত্রীর সংখ্যা অন্যান্য দিনের তুলনায় কিছুটা কম।
কলকাতার অন্যতম প্রাণকেন্দ্র ধর্মতলা। বন্ধের সকালে ধর্মতলা চত্বরে সরকারি বাসের পাশাপাশি দেখা মিলেছে প্রচুর বেসরকারি বাসেরও। ট্যাক্সি ও অন্যান্য গাড়ির সংখ্যাও চোখে পড়ার মতো। যাত্রীসংখ্যা অন্য়ান্য দিনের তুলনায় কিছুটা কম হলেও, তা একেবারে নগণ্য নয়। মোতায়েন রয়েছে পর্যাপ্ত পুলিশও।
রাস্তায় মোতায়েন প্রচুর পুলিশ। —নিজস্ব চিত্র।
ধর্মতলা চত্বরে সকাল থেকে রয়েছে বেসরকারি বাস। —নিজস্ব চিত্র।
এসপ্ল্যানেড মেট্রো স্টেশনে অবরোধ শুরু করেছেন বিজেপির কর্মী ও সমর্থকেরা। এর আগে শ্যামবাজার মেট্রোর শাটার নামানোর চেষ্টা করেছিলেন বিজেপি কর্মীরা। তবে পুলিশকর্মীরা আগে থেকেই প্রস্তুত ছিলেন সেখানে। বিজেপি কর্মীরা শাটার নামানোর চেষ্টা করতেই বাধা দেয় পুলিশ। শ্যামবাজার থেকে বেশ কয়েক জন বিজেপি কর্মীকে আটক করা হয়েছে বলে অভিযোগ পদ্মশিবিরের।
মেট্রো স্টেশনের শাটার নামানোর চেষ্টা বিজেপির। —নিজস্ব চিত্র।
বন্ধ সমর্থনকারীদের ধরপাকড়। —নিজস্ব চিত্র।
সকাল থেকে বন্ধের প্রভাব পড়েছে হাওড়া স্টেশনেও। ব্যান্ডেল ও কাটোয়ায় রেল অবরোধের জেরে বিঘ্নিত হয়েছে ট্রেনের স্বাভাবিক পরিষেবা। সকাল থেকে ভোগান্তির মধ্যে পড়েছেন রেলযাত্রীরা।
বিজেপির ডাকা বাংলা বন্ধের জেরে সকাল থেকে যাত্রীভোগান্তি। শিয়ালদহ শাখায় ট্রেন চলাচল বিঘ্নিত। বনগাঁ, ব্যারাকপুরে রেল অবরোধ করেন বন্ধ সমর্থনকারীরা। শিয়ালদহ দক্ষিণ শাখায় নামখানায় রেল অবরোধ করা হয়েছে। যার জেরে সকাল থেকে স্বাভাবিক পরিষেবা বিঘ্নিত।
সরকারের তরফে আগেই আশ্বস্ত করা হয়েছিল গণপরিবহণ সচল থাকবে। বুধবার সকাল থেকেই কলকাতার রাস্তায় সেই ছবি দেখা গেল। শ্যামবাজার চত্বরে সকালে বেসরকারি বাসের সংখ্যা ছিল চোখে পড়ার মতো। হাওড়া ও যাদবপুর এইট বি-তেও বাস পরিষেবা স্বাভাবিক।
সকাল থেকে রাস্তায় পর্যাপ্ত বেসরকারি বাস। —নিজস্ব চিত্র।
বুধবার সকাল থেকে কলকাতায় রাস্তার বিভিন্ন মোড়ে মোড়ে মোতায়েন রয়েছেন পুলিশকর্মীরা। শহরের বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ মোড়ে সকালে দেখা মিলল পর্যাপ্ত পুলিশের।
শ্যামবাজারের রাস্তায় সকাল থেকে মোতায়েন পুলিশ। —নিজস্ব চিত্র।
বাংলা বন্ধ সফল করতে সকাল থেকে তৎপর পদ্মশিবির। কলকাতায় বিভিন্ন জায়গায় সকাল থেকে পথে নামতে দেখা গিয়েছে বিজেপি কর্মীদের। মোতায়েন রয়েছে পর্যাপ্ত পুলিশও। সকাল শ্যামবাজার মেট্রো স্টেশনের শাটার নামানোর চেষ্টা করেন বিজেপির কর্মী-সমর্থকেরা। তবে পুলিশ গিয়ে বন্ধ সমর্থনকারীদের সেখান থেকে হটিয়ে দেয়।