কলকাতা মেডিক্যাল কলেজ। —ফাইল চিত্র।
দিনটা ছিল ১৮৩৫ সালের ২৮ জানুয়ারি, বুধবার। তৎকালীন গভর্নর জেনারেল উইলিয়াম বেন্টিঙ্কের হাত ধরে কলকাতায় প্রতিষ্ঠিত হল ভারতের প্রথম মেডিক্যাল কলেজ ‘ক্যালকাটা মেডিক্যাল কলেজ’। তৈরি হল ৩৫ দফা নিয়মাবলী। সেই প্রতিষ্ঠানেই ঘোড়ার গাড়িতে চড়ে এসে নামলেন প্রথম সুপারিন্টেন্ডেন্ট (পরে অধ্যক্ষ), চিকিৎসক মাউন্টফোর্ড জোসেফ ব্রামলি।
১৮৯ বছর আগের সেই ঘটনা আলো-ধ্বনির সমন্বয়ে আবার জীবন্ত হয়ে উঠবে আজকের প্রজন্মের কাছে। শুধু তা-ই নয়, কলকাতা মেডিক্যাল কলেজের পরতে পরতে জড়িয়ে থাকা ইতিহাস আবার ‘কথা’ বলবে আগামী ২৯ জানুয়ারি। এশিয়ার প্রাচীনতম মেডিক্যাল কলেজের ১৯০তম বর্ষে পদার্পণ উপলক্ষে প্রাক্তনীরা এই অভিনব স্মৃতিচারণার আয়োজন করেছেন। চিত্রনাট্য থেকে ভাষ্য পাঠ, আলোর কারিকুরির প্রস্তুতি চলছে পুরোদমে। কলকাতা মেডিক্যালের অধ্যক্ষ ইন্দ্রনীল বিশ্বাস বললেন, ‘‘এই প্রতিষ্ঠান সকলের কাছেই একটা আবেগ।’’
আর উপাধ্যক্ষ অঞ্জন অধিকারী বলছেন, ‘‘কলকাতা মেডিক্যাল কলেজের প্রতিটি বাড়িই যেন আজও অতীতের গল্প বলে। সেটাই এ বার প্রযুক্তির মাধ্যমে সকলের সামনে আনার চেষ্টা হচ্ছে।’’ ১৮৩৬ সালের ১০ জানুয়ারি দেশের চিকিৎসা বিজ্ঞানের ইতিহাসে দ্বিতীয় মাইলফলক তৈরি করেছিল কলকাতা মেডিক্যাল। চিকিৎসক হেনরি হ্যারি গুভিডের সঙ্গে মৃতদেহের সামনে এসে দাঁড়িয়েছিলেন মধুসূদন গুপ্ত। শক্ত হাতে ছুরি ধরে চিরে দিয়েছিলেন সেই দেহের বুক। যা ছিল দেশে প্রথম শব-ব্যবচ্ছেদ। আলো-ধ্বনিতে সেই ঘটনাই তুলে ধরার সময়ে জ্বলে উঠবে অ্যানাটমি বিল্ডিংয়ের আলো। এ ভাবেই এমসিএইচ, ডেভিড হেয়ার ব্লক, ইডেন বিল্ডিং, এজরা বিল্ডিং, অ্যাকাডেমিক বিল্ডিং-সহ আরও ঐতিহ্যবাহী ভবনগুলির গল্প শোনা যাবে। জানা যাবে, কী ভাবে পাশ্চাত্য চিকিৎসা ব্যবস্থাকে জনপ্রিয় করে তোলা হয়েছিল।
আর ওই সমস্ত ভবনের সঙ্গে জড়িয়ে থাকা প্রাক্তনীদের চরিত্রগুলিও ‘জীবন্ত’ হয়ে উঠবে প্রযুক্তির হাত ধরে। বিধানচন্দ্র রায় থেকে উপেন্দ্রনাথ ব্রহ্মচারী, নীলরতন সরকার, রাধাগোবিন্দ কর, কাদম্বিনী গঙ্গোপাধ্যায়, বিধুমুখী বসু, বিজয়কৃষ্ণ গোস্বামী-সহ বহু প্রাক্তনী আবার বিচরণ করবেন কলকাতা মেডিক্যালের চত্বরে। জানা যায়, লন্ডন বিশ্ববিদ্যালয়ের তালিকাভুক্ত হয়ে কলকাতা মেডিক্যাল কলেজে প্রথম ক্লাস শুরু হয়েছিল ১৮৩৫-এর ১ জুন। ১০০ জন প্রার্থীর মধ্যে সুযোগ পেয়েছিলেন ৪৯ জন। ইতিহাসের পাতায় থাকা সেই সমস্ত তথ্যই মায়াবি আলোয় ফুটে উঠবে।
আবার, সিপাহী বিদ্রোহ থেকে জাতীয়তাবাদী আন্দোলনের ঢেউও আছড়ে পড়েছে এই কলেজের আঙিনায়। তবে, কালের ধারাবাহিকতায় কলকাতা মেডিক্যালেও এসেছে পরিবর্তন। তা-ও তুলে ধরা হবে ১০-১২ মিনিটের আলো-ধ্বনির মেলবন্ধনে। কলেজের প্রাক্তনী, চিকিৎসক শঙ্করকুমার নাথ বলেন, ‘‘ইতিহাসকে তুলে ধরার এই প্রয়াস বর্তমান প্রজন্মের পড়ুয়া থেকে ইতিহাসবিদ ও সাধারণ মানুষের কাছে আকর্ষণীয় হয়ে উঠবে।’’ আর এক প্রাক্তনী, চিকিৎসক অনির্বাণ দলুই বললেন, ‘‘এটি হল আমাদের দ্বিতীয় পরিবারের প্রতি শ্রদ্ধার্ঘ্য নিবেদন।’’