প্রতীকী ছবি।
এক বৃদ্ধা খুনের ঘটনায় দোষী যুবককে যাবজ্জীবন কারাদণ্ডের সাজা শোনালেন আলিপুরের অতিরিক্ত দায়রা বিচারক শুভাশিস ঘোষাল। আলিপুর আদালত সূত্রে জানা গিয়েছে, ২০১৫ সালের ১৯ ডিসেম্বর বজবজ থানা এলাকার বাসিন্দা সুমিত্রা জাসু (৬৪) নামে এক বৃদ্ধাকে শ্বাসরোধ করে খুন করেছিল অমিতাভ প্রামাণিক ওরফে সম্রাট সেন নামে ওই যুবক। সোমবার কারাদণ্ডের পাশাপাশি দোষীর ২৫ হাজার টাকা জরিমানার নির্দেশও দিয়েছেন বিচারক।
আলিপুর আদালত সূত্রে জানা গিয়েছে, অমিতাভ একটি স্বেচ্ছাসেবী সংস্থার গাড়িচালক ছিল। নিজের একটি জমি সংক্রান্ত সমস্যা নিয়ে ওই সংস্থায় যাতায়াত করতেন সুমিত্রাদেবী। সেখানেই অমিতাভের সঙ্গে সুমিত্রাদেবীর পরিচয় হয়। পরে সুমিত্রাদেবীর ফ্ল্যাটে নিয়মিত যাতায়াত শুরু করেছিল অমিতাভ। এমনকি, মাঝেমধ্যে সুমিত্রাদেবীর ফ্ল্যাটে থেকেও যেত সে। পুলিশ সূত্রে জানা গিয়েছে, ২০১৫ সালের ১৮ ডিসেম্বর ফ্ল্যাটে গিয়ে সুমিত্রাদেবীর কাছ থেকে কিছু টাকা চেয়েছিল অমিতাভ। টাকা নেই বলে অমিতাভকে ফিরিয়ে দেন সুমিত্রা। পরের দিন রাতে ফের ওই ফ্ল্যাটে যায় অমিতাভ। ওই রাতে ফ্ল্যাটেই থেকে যায় সে।
তদন্তকারীরা জানিয়েছেন, সুমিত্রা তাঁর অবিবাহিত বোন সুচিত্রার সঙ্গে ওই ফ্ল্যাটে থাকতেন। ফ্ল্যাটের একমাত্র শোওয়ার ঘরে বোনের সঙ্গে ছিলেন সুমিত্রাদেবী। ঘরের বাইরে বারান্দায় একটি খাটে শুয়েছিল অমিতাভ। রাতে আচমকা ঘুম ভেঙে যায় সুচিত্রার। তিনি দেখেন, দিদির সঙ্গে অমিতাভের ধস্তাধস্তি হচ্ছে। ওই ঘটনা দেখার পরেই উচ্চ রক্তচাপ ও সুগারের রোগী সুচিত্রা অজ্ঞান হয়ে যান। জ্ঞান ফেরার পরে তিনি দেখেন, হাত-পা বাঁধা, মুখে কাপড় গোঁজা অবস্থায় সুমিত্রাদেবী বারান্দার খাটে পড়ে রয়েছেন। এর পরেই আত্মীয়দের খবর দেন সুচিত্রা। পরে পুলিশ ও চিকিৎসকেরা আসেন। সুমিত্রাদেবীকে মৃত বলে ঘোষণা করা হয়। গলা টিপে তাঁকে খুন করা হয়েছিল বলে জানিয়েছে পুলিশ।
পুলিশ জানায়, ঘটনার পরে ফেরার হয়ে গিয়েছিল অমিতাভ। সরকারি আইনজীবী সন্তু মজুমদার বলেন, ‘‘২৮ ডিসেম্বর দক্ষিণ ২৪ পরগনার ফ্রেজারগঞ্জ এলাকা থেকে অমিতাভকে গ্রেফতার করা হয়। ঘটনার পরে সুমিত্রাদেবীর মোবাইলটি সঙ্গে নিয়ে গিয়েছিল অমিতাভ। ওই মোবাইল থেকে সুমিত্রাদেবীর সিমটি খুলে ফেলে দেয় সে। নতুন সিম ভরে বেশ কয়েকটি জায়গায় ফোন করেছিল অমিতাভ। ওই ফোনের সূত্র ধরেই তাকে গ্রেফতার করা হয়। এ দিন এজলাসে অমিতাভ বলে, ‘‘আমার সাজা কিছুটা কমিয়ে দেওয়া হোক। আমার স্ত্রী মারা গিয়েছেন। বৃদ্ধা মা ও যমজ মেয়েরা রয়েছে। ওরা আমার উপরে নির্ভরশীল।’’ অভিযুক্তের আইনজীবী শুভময় সমাদ্দার বলেন, ‘‘দোষীকে লিগাল এড থেকে আইনজীবী দেওয়া হয়েছে। আমি ওর হয়ে মামলা লড়েছি। এই নির্দেশের প্রেক্ষিতে আমরা উচ্চ আদালতে আবেদন করব।’’