তন্ময় ভট্টাচার্য।
এলাকার দু’টি পুরসভাই তৃণমূলের পরিচালিত। অন্য দিকে এলাকার বিধায়ক সিপিএমের। তাঁর অভিযোগ, এলাকার উন্নয়নে তিনি বিধায়ক তহবিলের টাকা দিতে রাজি। কিন্তু সেই টাকা খরচে অনীহা পুরসভার। এমনটাই অভিযোগ করলেন দমদম উত্তর বিধানসভার সিপিএম বিধায়ক তন্ময় ভট্টাচার্য।
স্থানীয় নিউ ব্যারাকপুর এবং উত্তর দমদম— ওই দুই পুরসভার বিরুদ্ধে টাকা খরচ করতে না চাওয়ার অভিযোগ করেছেন তন্ময়বাবু। তাঁর দাবি, গত চার বছরে তিনি প্রায় এক কোটি চোদ্দো লক্ষ টাকার কাজের সুপারিশ করলেও তাতে খরচ
হয়েছে নামমাত্র। সিংহভাগ টাকাই পড়ে রয়েছে।
তন্ময়বাবু বলেন, ‘‘বিষয়টি দু’বার মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কে জানিয়েছি। তিনি ধৈর্য সহকারে আমার কথা শুনে পুরমন্ত্রীকে নির্দেশ দিয়েছিলেন বিষয়টি দেখতে।
পুরমন্ত্রী ফিরহাদ হাকিমও দুই পুরসভাকে বিধায়ক তহবিলের টাকা নিতে বলেছিলেন। তার পরেও
কিছু হয়নি।’’
ফিরহাদ নিজেও বলেন, ‘‘মুখ্যমন্ত্রীর নির্দেশ মতো আমি দুই পুরসভাকেই বলেছি বিধায়ক তহবিলের টাকা খরচ করতে। তবে বিধায়ক যদি একটু পুরসভার সঙ্গে আলোচনা করে কাজের সুপারিশগুলি করেন তা হলে ভাল হয়।’’
দমদম উত্তর বিধানসভার অধীনে উত্তর দমদম ও নিউ ব্যারাকপুর— দু’টি পুর এলাকায় ভোটার প্রায়
২ লক্ষ ৭০ হাজার। ফিরহাদের
কথার প্রসঙ্গ টেনেই সিপিএম বিধায়কের দাবি, ‘‘আমি মৌখিক
এবং লিখিত ভাবে কাজের প্রস্তাব চাইলেও পুরসভা দেয়নি।’’ তিনি জানান, তহবিলের টাকা খরচে অনীহা কেন তা জানতে উত্তর দমদম পুরসভায় তাঁরা বিক্ষোভও দেখিয়েছেন।
২০১৬-য় তৃণমূলের প্রার্থী চন্দ্রিমা ভট্টাচার্যকে হারিয়ে দমদম উত্তর কেন্দ্রের বিধায়ক হন তন্ময়বাবু। তিনি বলেন, ‘‘সেই আর্থিক বছরে ৩০ লক্ষ টাকার কাজের সুপারিশ করা হয়। তার মধ্যে নিউ ব্যারাকপুর পুরসভার জন্য ৯ লক্ষ এবং উত্তর দমদমের জন্য ২১ লক্ষ টাকার কাজ ছিল। নিউ ব্যারাকপুর সেই টাকা খরচ করেনি। আবার প্রকল্প বাতিল করেছে বলেও জানায়নি। উত্তর দমদম ওই একবারই ২৩ লক্ষ ৭৫ টাকার কাজ করেছিল।’’ তাঁর অভিযোগ, নিউ ব্যারাকপুর প্রথম থেকেই টাকা খরচে নারাজ ছিল। তবে ২০১৭ সালে পুকুরের পাড় বাঁধানো, গার্ডওয়াল-সহ রাস্তা নির্মাণ, ঢালাই রাস্তা-সহ চারটি প্রকল্পের কাজের জন্য ১৬ লক্ষ ৮৫ হাজার টাকা উত্তর দমদম পুরসভা গ্রহণ করলেও কিছু দিন পরে তা জেলাশাসককে ফেরত
পাঠিয়ে দেয়।
ওই বছরের শেষের দিকেই ফের দুই পুরসভাকে চিঠি দিয়ে তন্ময়বাবু জানান, প্রতিটি ওয়ার্ডে ২-৩টি করে সোলার নিয়ন্ত্রিত হাইমাস্ট লাগানো হোক। তাঁর অভিযোগ, ‘‘উন্নয়ন নিয়ে রাজনীতি ঠিক নয়। নিউ ব্যারাকপুর জানিয়ে দেয় হাইমাস্ট তাদের দরকার নেই। আর উত্তর দমদম কোনও জবাবই দেয়নি।’’
নিউ ব্যারাকপুর পুরসভার তৃণমূল চেয়ারম্যান তৃপ্তি মজুমদার অবশ্য বলেন, ‘‘আগে কী হয়েছে বলতে পারব না। তবে আমার সময়ে উনি দু’বার এসেছিলেন। যে রাস্তার কাজের সুপারিশ করেছিলেন, তার পরিকল্পনা আমাদের আগেই হয়ে থাকায় নেওয়া সম্ভব হয়নি। এর পরে আর যোগাযোগ হয়নি।’’ অন্য দিকে উত্তর দমদম পুরসভার চেয়ারম্যান সুবোধ চক্রবর্তী বলেন, ‘‘টাকা নিতে না চাইলে বিধায়ক উপর মহলে অভিযোগ করবেন বলে আমায় শাসানি দেন। উপর
মহলের নির্দেশ না পেলে আমার কিছু করার নেই।’’
বিধায়কের হিসেবে চার বছরে এক কোটি চোদ্দো লক্ষের মধ্যে নিউ ব্যারাকপুরের জন্য ২৪ লক্ষ ২৫ হাজার এবং উত্তর দমদমের জন্য ৮৯ লক্ষ ৭৫ হাজার টাকার কাজের সুপারিশ করা হয়েছিল। অভিযোগ, নিউ ব্যারাকপুর কোনও টাকা খরচ করেনি। আর প্রথমবার খরচের পরে বাকি ৬৬ লক্ষ টাকার এক পয়সাও নেয়নি উত্তর দমদম।