গল্ফগ্রীনে কংগ্রেসের বিক্ষোভ। নিজস্ব চিত্র।
কলকাতা পুরসভায় ‘অবাধ ভোটে’ বাধা দিলে শাস্তির মুখে পড়তে হবে বলে হুঁশিয়ারি দিয়েছেন তৃণমূল কংগ্রেসের শীর্ষ নেতৃত্ব। কিন্তু ভোটের দিন যত কাছে আসছে, বিরোধীদের প্রচারে বাধা দেওয়া ও হুমকির অভিযোগ ততই বাড়ছে। অভিযোগের তির শাসক দলের দিকেই। আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি যে দিকে যাচ্ছে তাতে সুষ্ঠু নির্বাচন হওয়া নিয়ে সংশয় দেখা দিচ্ছে— কলকাতার পুলিশ কমিশনারের কাছে এই অভিযোগ জানাল বামেরা। একই অভিযোগ নিয়ে প্রদেশ কংগ্রেস দ্বারস্থ হল রাজ্য নির্বাচন কমিশনের। তৃণমূল নেতৃত্ব অবশ্য অভিযোগ নস্যাৎ করে পাল্টা বলছেন, ভোটের মুখে ‘দিশাহারা’ হয়েই এমন কথা বলছে বিরোধীরা।
সিপিএমের সাংসদ ও আইনজীবী বিকাশরঞ্জন ভট্টাচার্য কলকাতার পুলিশ কমিশনার সৌমেন মিত্রকে চিঠি দিয়ে সোমবার অভিযোগ করেছেন, বিভিন্ন ওয়ার্ডেই বিরোধী দলের কর্মী-সমর্থক এবং ভোটারদের ভয় দেখানো শুরু হয়েছে। উদাহরণ দিয়ে তিনি জানিয়েছেন, ৯১ নম্বর ওয়ার্ডে কিছু পরিচিত দুষ্কৃতী এলাকায় ভয় দেখাচ্ছে, কসবা থানার প্রচ্ছন্ন মদত তাতে আছে বলে অভিযোগ। আবার ১১৮ নম্বর ওয়ার্ডে শাসক দলের তরফেই একটি ফোন নম্বর দিয়ে বলা হচ্ছে সেখানে অভিযোগ জানাতে। সেই নম্বর স্থানীয় ওসি-র বলে জানা যাচ্ছে! পুলিশ সক্রিয় হয়ে এই ভীতির পরিবেশ কাটাতে না পারলে সুষ্ঠু ভোট হওয়া দুষ্কর, তাই প্রয়োজনীয় পদক্ষেপের জন্য সিপি-র কাছে দাবি জানিয়েছেন সাংসদ।
একই ভাবে প্রদেশ কংগ্রেসের তরফে নেপাল মাহাতো, অসিত মিত্র, মুস্তাক আলম, প্রীতম ঘোষ ও আশুতোষ চট্টোপাধ্যায়কে নিয়ে প্রতিনিধিদল এ দিনই রাজ্য নির্বাচন কমিশনার সৌরভ দাসের সঙ্গে দেখা করে আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি নিয়ে অভিযোগ জানিয়েছে। কংগ্রেস নেতাদের অভিযোগ, নানা জায়গায় তাঁদের প্রার্থীরা প্রচার করতে বাধা পাচ্ছেন। কোথাও তৃণমূল, কোথাও আবার বিজেপি-র দুষ্কৃতীরা পতাকা-ফেস্টুন ছিঁড়ে দিচ্ছে। শান্তিপূর্ণ ভোটের জন্য কমিশনের উপযুক্ত পদক্ষেপ দাবি করেছেন তাঁরা। প্রচারে বাধা ও ব্যানার-হোর্ডিং খুলে দেওয়ার প্রতিবাদে এ দিন গল্ফগ্রিন থানার সামনে বিক্ষোভ হয়েছে দক্ষিণ কলকাতা জেলা কংগ্রেস সভাপতি প্রদীপ প্রসাদের নেতৃত্বে। পুলিশকে কাজে লাগিয়ে ভয় দেখানোর অভিযোগ তুলেছেন ভবানীপুরের ৭২ নম্বর ওয়ার্ডের নির্দল প্রার্থী সচ্চিদানন্দ বন্দ্যোপাধ্যায়ও। প্রার্থীর অভিযোগ, তাঁর সমর্থনে নির্বাচনী কাজ করায় এক জনকে গ্রেফতার করে পার্ক স্ট্রিট থানার পুলিশ। ধৃতের নামে মোটরবাইক চুরির অভিযোগ আনা হয়েছে। তৃণমূল তাঁদের সমর্থকদের ভয় দেখাচ্ছে।
বিরোধীদের এমন অভিযোগে অবশ্য আমল দিতে চাননি তৃণমূলের মহাসচিব পার্থ চট্টোপাধ্যায়। তাঁর পাল্টা বক্তব্য, ‘‘শহরের কোথাও নির্দিষ্ট কোনও ঘটনার অভিযোগ করতে পারছেন না বিরোধীরা। এ সব প্রচার করে নির্বাচনী লড়াইয়ে থাকতে চাইছেন।’’ তাঁর আরও কটাক্ষ, ‘‘কর্মী নেই, সংগঠন নেই। সারা বছর পুর-পরিষেবা দিয়েছে তৃণমূল। দুর্যোগে, দুর্ভোগে তৃণমূলই মানুষের পাশে আছে। হঠাৎ ভোটের সময় উদয় হলে এই রকম দিশাহারা অবস্থাই হয়!’’