প্রস্তুতি: ব্রিগেডের মঞ্চে টাঙানো হচ্ছে বিশাল ব্যানার । শনিবার। ছবি: সুমন বল্লভ
মাঠ বাড়িয়েই ‘ভোটের ময়দান’ ঘেরার পরিকল্পনা করছে বাম ও কংগ্রেস। রবিবারের জনসভার আগের দিন, শনিবার ব্রিগেড প্যারেড গ্রাউন্ডে তাদের প্রস্তুতি দেখে অন্তত তেমনটাই মালুম হয়। জানা গেল, ভিক্টোরিয়ার দিকে মঞ্চ আরও পিছিয়ে নিয়ে গিয়ে এ বার ব্রিগেড ময়দানে আরও কিছুটা বেশি জায়গা পেতে চাইছেন বাম ও কংগ্রেস নেতারা। শুধু তা-ই নয়, অন্য বারের তুলনায় দৈর্ঘ্যে-প্রস্থে বড় করা হয়েছে মঞ্চ। অনেকেই একে দূরত্ব-বিধি মানার উদ্যোগ বলে ব্যাখ্যা করলেও বামেদের দাবি, “ব্রিগেড যে জনসমুদ্রের চেহারা নেবে, তা আগাম আঁচ করেই মাঠ বাড়ানোর ওই পরিকল্পনা।”
এ দিন ব্রিগেডে গিয়ে দেখা গেল, শেষ মুহূর্তের প্রস্তুতি চলছে জোরকদমে। মঞ্চ বাঁধার কাজ প্রায় শেষ। ময়দানে দেখা গেল পুলিশ আধিকারিকদেরও। দফায় দফায় আসছেন পুলিশকর্তারা। নিরাপত্তা সংক্রান্ত শেষ মুহূর্তের প্রস্তুতির বিষয়টি খতিয়ে দেখছেন তাঁরা। আনা হয়েছে স্নিফার ডগও। পাশাপাশি, মঞ্চের পিছনে স্বেচ্ছাসেবকদের জন্যও জায়গা করা হয়েছে। সেখানে কলকাতা জেলা নেতৃত্ব রয়েছেন সকাল থেকেই। ২০১৯ সালের লোকসভা ভোটের আগে শেষ বার ব্রিগেডে সভা করেছিল বামেরা। সে বার ভিক্টোরিয়ার দিক থেকে বেশ কিছুটা জায়গা ছেড়ে মঞ্চ এগিয়ে এনে মাঠ ছোট করা হয়েছিল। কিন্তু এ বার পরিস্থিতি ভিন্ন। গত বারের চেয়ে এ বার অনেক বেশি লোক ব্রিগেডে আসবেন বলেই আশা বাম নেতৃত্বের। পাশাপাশি, কংগ্রেসের কর্মী-সমর্থকেরাও ব্রিগেডে থাকবেন বলে জানিয়েছেন। আর তা আঁচ করেই এ বার মাঠ বড় করা হয়েছে। তাই এ বার ভিক্টোরিয়ার দিকে যতটা সম্ভব পিছিয়ে মঞ্চ তৈরি করা হয়েছে। পাশাপাশি, আয়তনেও গত বারের থেকে বেশ কিছুটা বাড়িয়ে তৈরি হয়েছে মঞ্চ। মঞ্চের সামনে দু’টি ‘ডি’ তৈরি করা হয়েছে। একটি ‘ডি’-তে উদ্বোধনী অনুষ্ঠানের জন্য ছোট মঞ্চ তৈরি করা হয়েছে।
এ দিন সকাল থেকেই শেষ মুহূর্তের প্রস্তুতি খতিয়ে দেখতে দফায় দফায় ব্রিগেড প্যারেড গ্রাউন্ডে আসেন বাম ও ছাত্র নেতারা। দুপুর আড়াইটে নাগাদ আসেন সিপিএম নেতা রবীন দেব ও আভাস রায়চৌধুরী। এর পরে আসেন ছাত্র নেতা সৃজন ভট্টাচার্য-সহ অন্য নেতারা। তাঁরা প্রত্যেকেই ব্রিগেডের শেষ মুহূর্তের প্রস্তুতি খতিয়ে দেখেন। সেই সঙ্গে প্রয়োজনীয় নির্দেশও দেন। এ দিকে, শনিবারই বিভিন্ন জেলা থেকে বাম কর্মী-সমর্থকেরা আসতে শুরু করে দিয়েছেন। তাঁদের জন্য ময়দানের শেষ প্রান্তে থাকার জায়গা করা হয়েছে।
শুক্রবার রাতেই ব্রিগেডে পৌঁছে গিয়েছেন হালিশহরের বাসিন্দা রবি দাস। জন্ম থেকেই বিশেষ ভাবে সক্ষম রবি দাঁড়াতে পারেন না। তাঁর চলার জন্য ভরসা হাতে টানা তিন চাকার গাড়ি। আর সেই গাড়ি করেই চলে এসেছেন তিনি। ২৩ ফেব্রুয়ারি বাড়ি থেকে বেরিয়ে ২৬ ফেব্রুয়ারি রাতে ব্রিগেডের মাঠে পৌঁছে যান রবি। পেশায় লটারির টিকিট বিক্রেতা মাঝবয়সি রবি অবিবাহিত। বাড়িতে আছেন বৃদ্ধ বাবা-মা। ব্রিগেডের সভা শেষ করেই বাড়ি ফিরবেন তিনি। আপাতত ব্রিগেডের মঞ্চের পিছনে থাকছেন। জন্ম থেকেই বাম রাজনীতির সঙ্গে যুক্ত রবি বললেন, ‘‘প্রতিরোধ গড়ে তুলতে হবে। প্রতিরোধ গড়ে তুললেই বিজেপি-তৃণমূল হারবে।’’ পাশাপাশি, সিঙ্গুরে কারখানা করতে না পারার আক্ষেপও শোনা গেল রবির গলায়। তাঁর কথায়, ‘‘কারখানাটা তৈরি হলে রাজ্যের চেহারাই বদলে যেত। না হওয়ায় রাজ্যের হাজার হাজার বেকার যুবক-যুবতীর ক্ষতি হল।’’
এ দিন মাঠে দেখা গেল বাম ছাত্র রাজনীতির সঙ্গে যুক্ত বালির বাসিন্দা শুভঙ্কর দে-কেও। তিনি বাইক চালিয়ে বালি থেকে ময়দানে চলে এসেছেন ব্রিগেডের প্রস্তুতি দেখতে। রবিবার সকাল থেকেই মাঠে থাকবেন বলে জানালেন। শুভঙ্কর বলেন, ‘‘রবিবার সকাল থেকেই মাঠে থাকব। আবেগতাড়িত হয়েই প্রস্তুতি দেখতে চলে এলাম।’’
এ দিকে, ব্রিগেড ঘিরে যান নিয়ন্ত্রণের পরিকল্পনার কথা শনিবারই জানিয়ে দিয়েছে লালবাজার। রবিবার ভোর পাঁচটা থেকে দুপুর দুটো পর্যন্ত শহরের ভিতরে সমস্ত রকম পণ্যবাহী লরি চলাচল নিষিদ্ধ ঘোষণা করা হয়েছে। পাশাপাশি, ভিক্টোরিয়া মেমোরিয়াল চত্বর-সহ ময়দান সংলগ্ন বেশ কিছু এলাকায় গাড়ি পার্কিং নিষিদ্ধ করা হয়েছে।
এ ছাড়া, শিয়ালদহ এবং হাওড়া হয়ে যে সমস্ত মিছিল কলকাতায় ঢুকবে, তাদের জন্য বাড়তি পুলিশকর্মী মোতায়েন থাকবে বলেও জানানো হয়েছে। কোনও রকম অপ্রীতিকর ঘটনা এড়াতে ড্রোনের মাধ্যমে নজরদারি চালানো হবে কলকাতা পুলিশের তরফে।