লালবাজার জানতে পেরেছে, হাওড়া ব্রিজ থেকে ট্যাক্সি নিয়ে ভিক্টোরিয়া ঘুরে আবার হাও়ড়া স্টেশন ফেরত আসতে, অভিযুক্ত যুবকের খরচ হয় মোট ৭৫০ টাকা। রাত ৯টা ৫০ নাগাদ হাওড়া ব্রিজ থেকে ট্যাক্সিতে উঠে আবার ১০টা ৩২ নাগাদ তাঁরা হাওড়া স্টেশনে পৌঁছন। অর্থাৎ মোট ৪২ মিনিট সময় লাগে।
গ্রাফিক— শৌভিক দেবনাথ।
সঙ্গের ব্যাগে কড়কড়ে নগদ ২৫ লক্ষ টাকা। তবুও ট্যাক্সিচালককে বাড়তি টাকা দিতে রাজি ছিলেন না অভিযুক্ত। লি রোডে গয়না ব্যবসায়ীর রহস্যমৃত্যুর তদন্তে এমনই তথ্য জানতে পারছেন লালবাজারের গোয়েন্দারা।
কলকাতায় ট্যাক্সি চাপলেই চালকের বাড়তি টাকা চাওয়ার আবদার ইদানীং নিয়ম হয়ে দাঁড়িয়েছে। এমনই ঘটনা ঘটেছিল লি রোডে শান্তিলাল বৈদ হত্যাকাণ্ডেও। পুলিশ সূত্রে খবর, ঘটনার দিন রাত ৯টা ৫০ মিনিটে হাওড়া ব্রিজ থেকে ট্যাক্সিতে চেপে অভিযুক্ত যুবক চালককে জানান, তিনি বাড়িতে একটা ব্যাগ ফেলে এসেছেন। তাঁর দাদা সেই ব্যাগ নিয়ে এক্সাইড মোড়ে আসছেন, ব্যাগ নিতে এক্সাইড পৌঁছতে হবে তাঁকে। সেখান থেকে ফিরতে হবে হাওড়া স্টেশন। ১০টা ৪০-এ হাওড়া থেকে ছেড়ে যাবে তাঁর ট্রেন। তাই ট্যাক্সিচালককে বার বার ট্যাক্সির গতি বাড়ানোর জন্য তাড়া দিচ্ছিলেন অভিযুক্ত যুবক।
ট্যাক্সি এক্সাইড মোড়ে পৌঁছলে সওয়ারি চালককে বলেন, তাঁর দাদা ভিক্টোরিয়া মেমোরিয়ালের গেটের সামনে অপেক্ষা করছেন। সেখানে যেতে হবে। ভিক্টোরিয়ার দক্ষিণ দিকের গেটের কাছে গাড়ি থেকে না নেমেই বৈদ পরিবারের কাছ থেকে ২৫ লক্ষ টাকা ভরা ব্যাগ ট্যাক্সিতে তুলে নেন অভিযুক্ত। এ বার সেই ট্যাক্সিচালককেই হাওড়া স্টেশন ফিরতে বলেন তিনি।
২৫ লক্ষ টাকা ভরা ব্যাগ নিয়ে হাওড়া স্টেশন ফেরার পথে যথারীতি বাড়তি টাকা দাবি করেন ট্যাক্সিচালক। পুলিশের কাছে ট্যাক্সিচালক রবীন্দ্র পটেল দাবি করেছেন, তাঁর ধারণা ছিল না ওই ব্যাগে মুক্তিপণের টাকা আছে।
জানা গিয়েছে, প্রথমে হাওড়া ব্রিজ থেকে এক্সাইড মোড় পর্যন্ত আসার জন্য ট্যাক্সি ভাড়া করেন ওই যুবক। চালকের সঙ্গে ২৫০ টাকায় রফা হয়। সেখান থেকে আবার ট্রেন ধরার জন্য হাওড়া যেতে ৩০০ টাকা দেবেন বলেন সওয়ারি অভিযুক্ত যুবক। ট্যাক্সিচালক তাঁকে জানান, হাওড়া থেকে তাঁকে দক্ষিণ কলকাতা ফিরতে হবে। তাই ৫০০ টাকা দিতে হবে। যুবক ৩০০ টাকার বেশি দিতে রাজি হননি। যদিও হাওড়ায় নেমে চালককে ৫০০ টাকাই দেন অভিযুক্ত যুবক। পাশাপাশি হাও়ড়া থেকে ভিক্টোরিয়া যাওয়ার জন্য আড়াইশো টাকা। অর্থাৎ হাওড়া ব্রিজ থেকে ট্যাক্সি নিয়ে ভিক্টোরিয়া ঘুরে আবার হাও়ড়া স্টেশন ফেরত আসতে, অভিযুক্ত যুবকের খরচ হয় মোট সাড়ে সাতশো টাকা। রাত ৯টা ৫০ নাগাদ হাওড়া ব্রিজ থেকে ট্যাক্সিতে উঠে আবার ১০টা ৩২ মিনিটে তাঁরা হাওড়া স্টেশনে নামেন। অর্থাৎ মোট ৪২ মিনিট সময় লাগে। ট্যাক্সিচালকের দাবি, যুবক নামার আগে তাঁকে জানিয়েছিলেন ট্রেন ছাড়তে তখনও ৮ মিনিট সময় আছে।
সোমবার রাতে ভবানীপুরের এক অতিথিশালা থেকে উদ্ধার করা হয় গয়না ব্যবসায়ী শান্তিলাল বৈদের দেহ। ওই দিন সন্ধেয় লি রোডের বাড়ি থেকে পান খেতে বেরিয়েছিলেন শান্তিলাল। সন্ধেতেই বাড়িতে ২৫ লক্ষ টাকা মুক্তিপণ চেয়ে ফোন আসে। ভিক্টোরিয়ার দক্ষিণ দিকের গেটের কাছে টাকা ভরা ব্যাগ হাতে পান অভিযুক্ত। তদন্ত নেমে পুলিশ জানতে পারে, হলুদ ট্যাক্সিতে কালো পোশাক এবং মাস্ক পরা এক ব্যাক্তি হলুদ ট্যাক্সিতে এসে টাকার ব্যাগ নেন।
মঙ্গলবার রাতের মধ্যে ট্যাক্সিটিকে চিহ্নিত করা হয়। বুধবার লালবাজারে ট্যাক্সিচালককে ডেকে পাঠিয়ে কথা বলেন পুলিশ আধিকারিকরা।