কলকাতা হাইকোর্ট।—ফাইল চিত্র।
বুধবার, সকাল সাড়ে ১০টা। কলকাতা হাইকোর্টের ‘বি’ গেটের পাশে দাঁড়িয়ে পূর্ব মেদিনীপুরের তরুলতা মান্না। ছেলে ফৌজদারি মামলায় তমলুক আদালত থেকে জামিন না পাওয়ায় তিনি সেই ব্যবস্থা করতে হাইকোর্টে এসেছেন। কিন্তু তাঁর আইনজীবী জানিয়েছেন, সহকারী (ক্লার্ক) ধর্মঘটের কারণে আসতে না পারায় জামিনের কাগজপত্র বুধবার তৈরি করা যাবে না। পরদিন ফের আসতে হবে ওই মহিলাকে। বেলা ১১টা। দিল্লির গয়াল গুপ্ত হাইকোর্টের অ্যানেক্স বিল্ডিংয়ের দোতলায় বসে। মঙ্গলবার কলকাতায় এসেছিলেন এক আত্মীয়ের বিরুদ্ধে দায়ের হওয়া এফআইআর হাইকোর্টে খারিজের আবেদন জানাতে। কিন্তু পুরুলিয়ার আড়শা থেকে তাঁর আত্মীয় ধর্মঘটের কারণে এসে পৌঁছতে পারেননি। গয়ালকে আইনজীবী জানিয়েছেন, যাঁর বিরুদ্ধে এফআইআর, তিনি না এলে মামলা দায়ের করা যাবে না।
কলকাতা হাইকোর্টের আইনজীবীদের সংগঠনগুলি প্রধান বিচারপতির কাছে আগেই আবেদন জানিয়েছিল, ধর্মঘটের দিন কোনও আইনজীবী আদালতে গরহাজির হলে যাতে বিচারপতিরা একতরফা রায় বা নির্দেশ না দেন তা নিশ্চিত করতে। সেই আবেদনে সাড়া দিয়ে এ দিন কোনও বিচারপতি একতরফা রায় দেননি। তবে কিছু ক্ষেত্রে হাইকোর্টে দু’পক্ষের আইনজীবীর উপস্থিতিতে মামলার শুনানি হয়েছে। ছিলেন প্রধান বিচারপতি-সহ অন্য বিচারপতিরাও। তবে আইনজীবীদের হাজিরা তুলনামূলক ভাবে কম ছিল।
আইনজীবীরা হাজির না থাকায় অথবা মামলার ‘কেস ডায়েরি’ সময়ে না পৌঁছনোয় জামিন বা আগাম জামিন বা অন্য একাধিক মামলার শুনানি কয়েক দিনের জন্য মুলতুবি রাখা হয়। অনেক ক্ষেত্রে বিচারপতিরা আদালতের অফিসারদের দিয়ে তালিকাভুক্ত মামলাগুলি পরের পর ডেকে এজলাস থেকে উঠে যান।
এ দিন ওল্ড পোস্ট অফিস স্ট্রিট, কিরণ শঙ্কর রায় রোডের কয়েক জন আইনজীবীর ঘরে গিয়ে দেখা যায়, মামলার নথি তৈরিতে ব্যস্ত তাঁরা। তাঁরা জানান, কোনও আইনজীবীর মৃত্যুতে আচমকা কর্মবিরতির সিদ্ধান্ত হলে বিচারপ্রার্থীরা বিপদে পড়েন। এ ক্ষেত্রে ধর্মঘটের কথা আগেই ঘোষণা হওয়ায় অনেক বিচারপ্রার্থী এবং আইনজীবী এ দিন আদালতে হাজির হননি। অনেক আইনজীবীর সহকারী বা ক্লার্ক ধর্মঘটের কারণে হাজির হতে পারেননি। তবে রাজ্য সরকার ও হাইকোর্ট প্রশাসন ধর্মঘটে কাজ স্বাভাবিক রাখার নির্দেশ দেওয়ায় হাইকোর্ট ও সেখানে নিযুক্ত রাজ্য সরকারি কর্মীরা হাজির ছিলেন।