বিপজ্জনক: জীবনের ঝুঁকি নিয়ে ফুটপাত সারাইয়ের কাজ করছেন পূর্ত দফতরের ঠিকা শ্রমিক। ছবি: দেশকল্যাণ চৌধুরী
দুর্ঘটনা থেকে শিক্ষা নিয়ে শ্রমিকদের সুরক্ষায় শহরের রাস্তা সংক্রান্ত যে কোনও কাজ সকাল ৬টার মধ্যে শেষ করতে বার্তা পাঠাচ্ছে লালবাজার। মঙ্গলবার কলকাতা ট্র্যাফিক পুলিশ সূত্রে এই খবর জানা গিয়েছে। শহরের যে সব রাস্তায় ৬টার আগে থেকেই ট্র্যাফিকের চাপ বাড়ে, সেখানে আরও আগে কাজ শেষ করার অনুরোধ করা হবে বলেও পুলিশ সূত্রের খবর।
পুলিশের এক কর্তা জানান, শ্রমিকদের নিরাপত্তার স্বার্থেই রক্ষণাবেক্ষণের কাজে নিযুক্ত প্রতিটি সরকারি দফতরে এই বার্তা পাঠানো হচ্ছে। কলকাতা ট্র্যাফিক পুলিশের তরফে কাজ শেষ করার নির্দিষ্ট সময় বেঁধে দেওয়ার পাশাপাশি জানানো হয়েছে, রাস্তার রক্ষণাবেক্ষণ সংক্রান্ত যে কোনও কাজ শুরুর আগে সংশ্লিষ্ট এলাকার ট্র্যাফিক গার্ডকে তা জানাতে হবে। প্রয়োজনে কাজ চলাকালীন ট্র্যাফিক গার্ডের তরফে রাস্তার একাংশে গার্ডরেল বসিয়ে যান চলাচল নিয়ন্ত্রণ করা হতে পারে। রাতে যে হেতু গাড়ির চাপ কম থাকে এবং শহরের একাধিক উড়ালপুলে যান চলাচল নিয়ন্ত্রণ করা হয়, তাই ওই সময়েই যাতে এই ধরনের কাজ করানো হয়, লালবাজারের তরফে সেটাই জানানো হবে। পাশাপাশি, প্রত্যেক শ্রমিকের জন্য উজ্জ্বল রঙের জ্যাকেট বাধ্যতামূলক করার কথাও বলা হচ্ছে। এ ছাড়া, এই সব কাজে প্রযুক্তির ব্যবহার বাড়ানো যায় কি না, তা-ও ভেবে দেখতে অনুরোধ করা হবে বলে খবর।
সোমবার সকালে এ জে সি বসু উড়ালপুলে দুর্ঘটনায় মৃত্যু হয় পূর্ণিমা দেবী (৫৭) নামে এক শ্রমিকের। তিনি ওই উড়ালপুলের উপরে কাজ করছিলেন। পার্ক সার্কাসের দিক থেকে এসে একটি গাড়ি ওই মহিলাকে ধাক্কা মারে। উড়ালপুলের উপরেই বেশ কিছুটা দূরে ছিটকে পড়েন পূর্ণিমা। শেক্সপিয়র সরণি থানার পুলিশ গুরুতর আহত অবস্থায় তাঁকে উদ্ধার করে এসএসকেএম হাসপাতালে নিয়ে গেলে চিকিৎসকেরা মহিলাকে মৃত বলে জানান।
ওই ঘটনার পরেই নানা মহলে একাধিক প্রশ্ন ওঠে। দিনের ব্যস্ত সময়ে উড়ালপুলের উপরে ঝুঁকি নিয়ে কাজ করানো হচ্ছিল কেন, এমন প্রশ্নও ওঠে। দুর্ঘটনার সময়ে ওই শ্রমিকের গায়ে কোনও উজ্জ্বল রঙের জ্যাকেট ছিল না বলেই তদন্তে নেমে জেনেছে পুলিশ, যা রক্ষণাবেক্ষণকারী সংস্থার দায়িত্ববোধ নিয়েই প্রশ্ন তুলে দেয়।
হুগলি রিভার ব্রিজ কমিশনার্সের (এইচআরবিসি) অধীনে থাকা এ জে সি বসু উড়ালপুলে সোমবার একটি ঠিকাদার সংস্থার কর্মীরা কাজ করছিলেন। সেই সময়েই ঘটে দুর্ঘটনা। দুর্ঘটনার পরেই এইচআরবিসি আশ্বাস দিয়েছিল, কী ভাবে শ্রমিকদের নিরাপত্তা বাড়ানো যেতে পারে, তা খতিয়ে দেখা হবে। কলকাতা ট্র্যাফিক পুলিশের এক কর্তা বলেন, ‘‘শ্রমিকদের নিরাপত্তার স্বার্থেই রাস্তায় যখন ট্র্যাফিকের চাপ তুলনামূলক ভাবে কম থাকে, তখন কাজ করার কথা বলা হচ্ছে। সকাল ৬টার মধ্যেই যাতে এই সংক্রান্ত যাবতীয় কাজ শেষ করা যায়, তা নিশ্চিত করতে বলা হবে।’’