স্কুল বাস। প্রতীকী ছবি।
পড়ুয়াদের নিয়ে যাওয়া ও নিয়ে আসার জন্য ব্যবহৃত যে সমস্ত স্কুলবাস এবং স্কুলগাড়ি কোনও বিদ্যালয়ের নিয়ন্ত্রণাধীন নয়, আগামী ১৬ নভেম্বর অফলাইনে ক্লাস শুরু হওয়ার আগে সেগুলির স্বাস্থ্য-পরীক্ষা করানোর নির্দেশ দিয়েছে লালবাজার। দীর্ঘ দিন বসে থাকায় ওই সমস্ত যানবাহন আদৌ চলার অবস্থায় রয়েছে কি না, অথবা সেগুলির মেরামতি দরকার কি না, মূলত সে সব বিষয়ে নিশ্চিত হতেই এই নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।
সম্প্রতি একটি স্কুলগাড়ি সংগঠনকে চিঠি লিখে লালবাজার বলেছে, করোনার জন্য দেড় বছরেরও বেশি সময় ধরে স্কুল বন্ধ। চলছে না স্কুলগাড়ি বা বাসও। দীর্ঘ দিন বসে থাকার ফলে যন্ত্রাংশ থেকে ব্যাটারি, ব্রেক, ইঞ্জিন, টায়ার— অনেক কিছুই খারাপ হয়ে গিয়ে থাকতে পারে। তাই পরিষেবা পুনরায় শুরুর আগে সব কিছু পরীক্ষা করিয়ে নিতে হবে। যে সমস্ত স্কুলের নিজস্ব বাস রয়েছে, তাদের অবশ্য লালবাজারের তরফে কিছু জানানো হয়নি।
১৬ তারিখ নবম থেকে দ্বাদশের পড়ুয়াদের জন্য স্কুল খুলছে। স্কুলবাস ও স্কুলগাড়ির চালক এবং মালিকেরা তাই খুশি। কিন্তু শুধুমাত্র চারটি ক্লাস চালু হওয়ায় আয় কতটা হবে, তা নিয়ে সংশয়ে তাঁরা। তার উপরে করোনা পরিস্থিতিতে কত জন পড়ুয়া আদৌ স্কুলে যাবে, তা-ও এখনও স্পষ্ট নয়। স্কুলবাস মালিকদের সংগঠন ‘ওয়েস্ট বেঙ্গল কন্ট্র্যাক্ট ক্যারেজ ওনার্স অ্যান্ড অপারেটর্স অ্যাসোসিয়েশন’-এর সাধারণ সম্পাদক হিমাদ্রি গঙ্গোপাধ্যায় বলেন, ‘‘কলকাতা ও বৃহত্তর কলকাতা মিলিয়ে আমাদের চার হাজারের উপরে স্কুলবাস চলে। কিন্তু স্কুল খোলার প্রথম দিন থেকেই সব বাস চলতে শুরু করবে, এমনটা নয়। কত পড়ুয়া বাসে ওঠে, সেটাও দেখতে হবে। বাস খালি গেলে এত দিন পরে তা চালু করেও ফের লোকসানের মুখে পড়তে হবে। তাই বাসে পড়ুয়ার সংখ্যা বাড়াতে আমরা দু’টো রুটকে জুড়ে দিতে পারি।’’ হিমাদ্রিবাবুর দাবি, বাস চালানো হবে করোনা-বিধি মেনেই। প্রতিটি আসনে এক জন করে বসবে। বাসে থাকবে জীবাণুনাশক। তিনি বলেন, ‘‘অনেক দিন বন্ধ থাকায় বাসের ব্যাটারি থেকে শুরু টায়ার, সব পরীক্ষা করাতে হচ্ছে। কোনও বাসমালিককে নতুন দামি যন্ত্রাংশ কিনতে হলে সংগঠনের তরফে সাহায্য করা হচ্ছে।’’
আর একটি স্কুলগাড়ি সংগঠন ‘পুলকার ওনার্স ওয়েলফেয়ার অ্যাসোসিয়েশন’-এর ভাইস প্রেসিডেন্ট অরুপম দত্ত জানান, স্কুলগাড়িতে কত জন পড়ুয়া উঠবে, তা তাঁরা খতিয়ে দেখছেন। অরুপম বলেন, ‘‘ছেলেমেয়েদের স্কুলে পাঠানোর জন্য এখনও পর্যন্ত খুব বেশি অভিভাবক আমাদের ফোন করেননি। ফাঁকা গাড়ি নিয়ে গেলে তো আমাদেরই লোকসান। তবে আমরা ১৬ তারিখ থেকেই যত বেশি সংখ্যায় সম্ভব স্কুলগাড়ি চালাতে চাই।’’
যে সমস্ত স্কুলের নিজস্ব বাস রয়েছে, তারা জানিয়েছে, যন্ত্রাংশ পরীক্ষা করিয়ে বাসগুলি
চলাচলের জন্য কতটা প্রস্তুত, তা দেখার কাজ চলছে। কয়েকটি স্কুলের কর্তৃপক্ষ আবার জানিয়েছেন, ১৬ তারিখ থেকেই বাস নামাচ্ছেন না তাঁরা। কারণ, প্রত্যেক পড়ুয়াকে প্রতিদিন ডাকা হচ্ছে না। সাউথ পয়েন্ট
স্কুলের ট্রাস্টি বোর্ডের সদস্য কৃষ্ণ দামানি এবং মডার্ন হাইস্কুল ফর গার্লসের ডিরেক্টর দেবী কর জানাচ্ছেন, তাঁরা এখনই বাস পরিষেবা চালু করছেন না। কৃষ্ণ বলেন, ‘‘আমরা একটি শ্রেণির প্রত্যেক
পড়ুয়াকে প্রতিদিন ডাকছি না। ফলে খুব কম সংখ্যক পড়ুয়াই স্কুলে আসবে। আপাতত তাদের নিজেদের ব্যবস্থায় আসতে হবে।’’
আবার ডিপিএস রুবি পার্ক কর্তৃপক্ষ জানাচ্ছেন, তাঁরা ১৬ তারিখ থেকেই বাস চালাবেন। বাসের যন্ত্রাংশ পরীক্ষা ও জীবাণুনাশের কাজ চলছে। স্কুল চালু হওয়ার পরে বাসগুলি প্রতিদিন দু’বার করে জীবাণুমুক্ত করা হবে। বাসে পড়ুয়াদের মাস্ক পরে থাকা বাধ্যতামূলক। বাসে তোলার আগে প্রত্যেক পড়ুয়ার শরীরের তাপমাত্রা পরীক্ষা করা হবে। বাসে একটি আসনে এক জন করে পড়ুয়া বসবে।