ফাইল চিত্র।
কয়েক হাজার ক্যামেরা লাগানো থাকলেও সেগুলিতে ওঠা ছবি সংশ্লিষ্ট দফতরে পৌঁছয় না। এলাকার অধিকাংশ রাস্তার কোনও দৃশ্যই ধরা পড়ে না দফতরের কম্পিউটারে বা দেওয়াল জুড়ে লাগানো জায়ান্ট স্ক্রিনে। তাই কলকাতা পুলিশের ট্র্যাফিক কন্ট্রোল (দক্ষিণ) রুম মাস দুয়েকেরও বেশি সময় কার্যত ‘অন্ধ’ হয়ে আছে বলে পুলিশ সূত্রের খবর। ফলত, লালবাজারের মূল কন্ট্রোল রুমে ফোন করে পরিস্থিতি শুনে ফোনেই ট্র্যাফিক গার্ডগুলিকে সতর্ক করে তাদের কাজ চলাতে হচ্ছে।
পরিস্থিতি এমনই যে, তাঁদের এলাকায় বাঁশদ্রোণী থানার সামনের রাস্তায় সম্প্রতি একটি গাড়ি দাপিয়ে বেড়ালেও কিছু দেখতে পাননি ট্র্যাফিক কন্ট্রোল (দক্ষিণ) রুমের কর্মীরা। একটি সাইকেল ভ্যান ও একটি গাড়িকে দুমড়ে রাস্তার ধারের রেলিং ভেঙে মন্দিরে ঢুকে যায় গাড়িটি। ওই ট্র্যাফিক কন্ট্রোলের এক পুলিশকর্মী বলেন, “এলাকার কোথায় কী ঘটছে, কিছুই দেখতে পাচ্ছি না। বড় কোনও দুর্ঘটনা ঘটলে, তা আমাদের নজরের বাইরে। ভিআইপি-দের আসা-যাওয়ার সময়েও একই পরিস্থিতি। যে সব ক্যামেরা কাজ করছে, সেগুলির ফিড লালবাজারের মূল কন্ট্রোল রুমে যায়। ফোন করে সেখান থেকে পরিস্থিতি শুনে কাজ সামলাতে হয়।’’
কলকাতা পুলিশ সূত্রের খবর, শহরের ২৫টি ট্র্যাফিক গার্ডের মধ্যে ১০টি রয়েছে দক্ষিণ কলকাতায়, পুলিশের সংযুক্ত এলাকায়। সিসি ক্যামেরার মাধ্যমে নজর রেখে এবং সিগন্যালিং ব্যবস্থা নিয়ন্ত্রণ করে এই ট্র্যাফিক গার্ডগুলির মধ্যে সমন্বয় সাধনের জন্যই তৈরি হয়েছিল ট্র্যাফিক কন্ট্রোল (দক্ষিণ) রুম। ওই ট্র্যাফিক কন্ট্রোল রুম যে ভবনে, সেখানেই রয়েছে ডিসি ট্র্যাফিকের (দক্ষিণ) অফিস। সেখানে এক ওসির নেতৃত্বে এই ভিডিয়ো নজরদারির কাজ চলত। ওই ওসির সহযোগিতায় ডিসি ট্র্যাফিক (দক্ষিণ) ডিসি ট্র্যাফিক (১)-এর সঙ্গে সমন্বয় রেখে কাজ করেন। তবে গত দু’মাসে এই পদ্ধতিই ব্যাহত হয়েছে।
বাঁশদ্রোণীর ঘটনার পরে ঘটনাস্থলে গিয়ে পুলিশ কমিশনার সৌমেন মিত্র জানিয়েছেন, সংযুক্ত এলাকার সিগন্যাল ব্যবস্থার মানোন্নয়ন নিয়ে নতুন করে ভাবনাচিন্তা করা হচ্ছে। ওই এলাকার বেশ কিছু জায়গায় নতুন করে ট্র্যাফিক সিগন্যাল বসানো ও বিট তৈরির পরিকল্পনাও হচ্ছে বলে ট্র্যাফিক পুলিশ সূত্রের খবর। যদিও প্রশ্ন থেকে যায়, কন্ট্রোল রুমের দৃষ্টিপথ অবরুদ্ধ থাকলে নতুন সিগন্যাল ব্যবস্থাতেও কাজ হবে কি?
ডিসি ট্র্যাফিক (দক্ষিণ) অতুল বিশ্বনাথন সমস্যার কথা মেনে নিয়েই জানান, সব ক’টি না হলেও তাঁর ঘরের মনিটরে কয়েকটি রাস্তার ফিড পাওয়া যায়। ট্র্যাফিক কন্ট্রোল (দক্ষিণ) রুমের এক পুলিশকর্তা যদিও বলেন, “২০১১ সালে কন্ট্রোল রুমে যে যন্ত্র বসানো হয়েছিল, তাতে এখনকার সফটওয়্যার কাজ করে না। নতুন যন্ত্রের দরকার। কিন্তু কোভিডের পরে নতুন যন্ত্র কেনার খরচের ব্যাপারে সতর্ক হতে বলা হয়েছে। ফলে ট্র্যাফিককর্তারা রিকুইজ়িশন দিলেও তা অ্যাকাউন্টস বিভাগে আটকে রয়েছে। সব পক্ষকেই বুঝতে হবে যে, এটা নতুন কিছু কেনা নয়। যা ছিল, কাজের প্রয়োজনে তারই মানোন্নয়ন দরকার। নয়তো বড় কিছু ঘটলে সামলানো মুশকিল হতে পারে।”