শো-রুমের এক দিকে চলছিল আসবাবপত্রের নকশা খুঁটিয়ে দেখার কাজ। অন্য দিকে, হিসাব-নিকাশ নিয়ে ব্যস্ত কর্মীরা। হঠাৎ বিকট শব্দ। মুহূর্তে বদলে গেল ছবিটা।
শো-রুমের দরজা ফাঁক করতেই শুনলাম, ‘‘আগুন লেগেছে। জলদি নেমে এসো।’’ ব্যাগ, মোবাইল নিয়ে চারতলার লিফটের দিকে ছুটলাম সবাই। তত ক্ষণে সব আলো নিভে গিয়েছে। হাতড়ে লিফটের সুইচে চাপ দিলাম। কাজ করল না। বুঝতে পারলাম বিদ্যুৎ বিচ্ছিন্ন করা হয়েছে। ছুটলাম সিঁড়ির দিকে। কয়েক পা নামতেই শ্বাসকষ্ট শুরু হল। তিনতলায় যেতেই আরও কিছু ফাটার শব্দ কানে এল। মনে হচ্ছিল বিল্ডিংয়ে বোমা পড়ছে। ভয়ে হাত-পা তখন ঠান্ডা। একটাই চিন্তা ঘুরপাক খাচ্ছিল সবাইকে নীচে নামতেই হবে। চারপাশ থেকে ধোঁয়া-অন্ধকার যেন গিলতে আসছে। আবার ছুটলাম চারতলায়।
শো-রুম লাগোয়া ফাঁকা জায়গা রয়েছে। সেদিকেই ছুটলাম সবাই। শুধু মনে হচ্ছিল, ফাঁকা জায়গায় পৌঁছে শ্বাস নিতে হবে। টেরাসে পৌঁছে স্যারকে ফোন করতেই তিনি জানালেন, দমকলে খবর দেওয়া হয়েছে, আসছে। যেখানে দাঁড়িয়ে আছি, দমকল আসা পর্যন্ত যেন সেখানেই থাকি। আধ ঘণ্টা পরে দমকলকর্মীরা এসে পৌঁছন। ওই সময়ের প্রতিটি মুহূর্ত তীব্র উৎকণ্ঠায় কেটেছে। বারবার মনে হয়েছে, আমরা বেরোতে পারব তো!
দমকলের কয়েক জন পিছনের সিঁড়ি ধরে উপরে এসে আমাদের নামিয়ে নিয়ে গেলেন। তখনও ঘুটঘুটে অন্ধকার আর ধোঁয়া। নেমেও কেমন একটা ঘোরের মধ্যে ছিলাম। ভাবছিলাম, ‘বেঁচে আছি সকলেই’! কী করে আগুন লেগেছিল তখন বুঝিনি। পরে শুনছি, তিনতলায় একটি অফিস থেকেই আগুন লেগেছিল। টিভিতে দেখেছি স্টিফেন কোর্ট, আমরির ঘটনা। নিজে যে এমন অবস্থায় পড়ব, কোনও দিন ভাবিনি। প্রাণে বাঁচলেও আতঙ্ক কিছুতেই কাটছে না।
(লেখক ওই বহুতলের এক অফিসের কর্মী)