Road Accident

Drunken Driver: কড়া নজরের অভাবেই কি মত্ত চালকের দৌরাত্ম্য

কলকাতা পুলিশের নিচুতলার ট্র্যাফিক কর্মীদের বড় অংশই মত্ত চালকদের বিরুদ্ধে কড়াকড়ির ব্যাপারে দ্বিধায় ভুগছেন।

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

কলকাতা শেষ আপডেট: ১৮ জুন ২০২২ ০৭:৪৭
Share:

ফাইল চিত্র।

রাতের শহরে যেখানে সিগন্যাল না-মেনেই গাড়ি বা মোটরবাইক ছোটান অনেকে, সেখানে নিয়ম মেনে সিগন্যালে দাঁড় করানো গাড়িতেই প্রাণ গেল এক মহিলার! তাঁর জখম স্বামীকে হাসপাতালে ভর্তি করানো হয়েছিল। অল্পের জন্য রক্ষা পেয়েছেন মহিলার দুই সন্তান ও গাড়ির চালক। ইএম বাইপাসের বেলেঘাটা মোড়ের এই ঘটনায় প্রশ্ন উঠেছে, সিগন্যালে দাঁড়ানোর পরেও এমন ঘটনা ঘটে কী করে? জানা গিয়েছে, ধাক্কা মারা বেপরোয়া চালক মত্ত অবস্থায় ছিলেন। সিগন্যাল অমান্য করে এগোতে গিয়েই দুর্ঘটনা ঘটান তিনি। তবে কি মত্ত চালকদের ধরপাকড়ের ক্ষেত্রে পুলিশি নজরদারিতেই ঘাটতি থাকছে?

Advertisement

কলকাতা পুলিশের নিচুতলার ট্র্যাফিক কর্মীদের বড় অংশই মত্ত চালকদের বিরুদ্ধে কড়াকড়ির ব্যাপারে দ্বিধায় ভুগছেন। সমাধান খুঁজে পাচ্ছেন না ট্র্যাফিক গার্ডগুলির ওসি-রাও। তাঁদের দাবি, এমনিতেই রাতে রাস্তায় ডিউটি করার লোক মেলে না। তাই কাউকে ১৪ ঘণ্টা, কাউকে আবার তারও বেশি সময় কাজ করাতে হয়। নামাতে হয় সিভিক ভলান্টিয়ারদেরও। ওই সিভিক ভলান্টিয়ারদের বিরুদ্ধেও অভিযোগ রয়েছে বিস্তর। এর উপরে রাতে নাকা তল্লাশি চালিয়ে ব্রেথ অ্যানালাইজ়ার দিয়ে পরীক্ষায় নতুন ঝক্কি পোহাতে হচ্ছে। সেই পরীক্ষায় ধরা পড়লে থানার হাতে গাড়ি বা মোটরবাইক-সহ চালককে তুলে দেন সংশ্লিষ্ট ট্র্যাফিক পুলিশকর্মী। এর পরে মামলা রুজু করে ব্যবস্থা নেওয়ার কথা থানার কর্তব্যরত অফিসারের। কিন্তু বেশির ভাগ ক্ষেত্রেই দেখা যায়, পরদিন আদালতে হাজিরা দেওয়ার শর্তে নিয়মভঙ্গকারী থানা থেকে জামিন নিয়ে সেই রাতেই বেরিয়ে এসেছেন। কোনও মতে তাঁর লাইসেন্স বা গাড়ির নথি জমা রাখা হয়েছে। এর পরে যেখানে তাঁকে ধরা হয়েছিল, সেখানে গিয়ে তিনি দেখে নেওয়ার হুমকি দিতে শুরু করেন। কিছু ক্ষেত্রে এলাকার লোক ডেকে শাসানোর ঘটনাও ঘটে।

এক ট্র্যাফিক পুলিশকর্মী বললেন, ‘‘মুখে পাইপ দিয়ে পরীক্ষা করব কী, গাড়ি দাঁড় করানোর কিছু ক্ষণের মধ্যেই উঁচুতলা থেকে ছেড়ে দেওয়ার নির্দেশ চলে আসছে। যাঁকে দাঁড় করানো হয়েছে, তিনি সঙ্গে সঙ্গে চেনাজানা লোককে ফোন করতে শুরু করে দিচ্ছেন। তাঁরা আবার বড় কর্তাদের ফোন করছেন।’’ উত্তর কলকাতার একটি ট্র্যাফিক গার্ডের এক পুলিশকর্মীর মন্তব্য, ‘‘এমনও হচ্ছে যে, পরীক্ষা করানোয় বাড়ি ফিরে পরদিনই পুলিশকর্তাদের কাছে ইমেলে অভিযোগ করছেন কেউ কেউ। পরীক্ষার নামে নাকি অভদ্রতা করা হয়েছে। এর পরে সেই কর্তা আমাদেরই ডেকে লিখিত জবাব চাইছেন। বলা হচ্ছে, কিছু মেলেনি যখন, তখন কেন জোর করে পরীক্ষা করানো হল? গাড়ির পরিবেশ দেখে-বুঝে তবে পরীক্ষা করাতে বলা হচ্ছে। বহু গাড়িতেই কালো কাচ থাকে। এ ভাবে কি বোঝা যায়! কে কার বন্ধু, বুঝতে না পেরে অনেকেই দেখেশুনে পদক্ষেপ করতে চাইছেন।’’

Advertisement

এই ‘বুঝে’ পদক্ষেপ করার সুযোগেই কি বুধবার রাতে মত্ত অবস্থায় গাড়ি ছোটাচ্ছিলেন দুর্ঘটনা ঘটানো ব্যক্তি? পুলিশি হেফাজতে থাকা রাহুল কেডিয়া নামে ওই ব্যক্তিকে জিজ্ঞাসাবাদ করছেন তদন্তকারীরা। তদন্তভার নিয়েছে কলকাতা পুলিশের ফেটাল স্কোয়াড। জেরায় ধৃতের দাবি, তিনি বাবার ওষুধ আনতে বেরিয়েছিলেন। তাই তাড়াহুড়ো ছিল। কিন্তু ওষুধ আনার সঙ্গে নেশাগ্রস্ত অবস্থায় স্টিয়ারিংয়ে বসার সম্পর্ক কী, সেই উত্তর মেলেনি। কলকাতা পুলিশের ট্র্যাফিক বিভাগের এক কর্তা বলেন, ‘‘মত্ত চালকদের ধরতে আগের মতোই কড়াকড়ি চলছে। গাফিলতির প্রশ্নই নেই।’’

এ দিনই হাসপাতাল থেকে ছাড়া পাওয়া, মৃত মিনু ঢনঢনিয়ার স্বামী দেবকিষাণকে নিয়ে যেতে আসা এক আত্মীয় বললেন, ‘‘বিধি মেনে সিগন্যালে দাঁড়িয়েই এ ভাবে মৃত্যু হল। ওই গাড়িচালক মত্ত অবস্থায় এতটা পথ এলেন কী করে, সেই জবাবকে দেবে?’’

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement