Durga Puja 2020

কাজ গিয়েছে করোনায়, মাথায় হাত ডেকরেটরদের

শহর, শহরতলি ও জেলার ডেকরেটিং ব্যবসায়ীরা বলছেন, ‘‘রথ মিটলেই প্রস্তুতি শুরু হত। কিন্তু এ বার সেপ্টেম্বরের শেষ হতে চললেও এখনও তেমন ভাবে বরাতই আসেনি।

Advertisement

শান্তনু ঘোষ

কলকাতা শেষ আপডেট: ২২ সেপ্টেম্বর ২০২০ ০২:৫৫
Share:

প্রতীকী চিত্র।

‘আরে বাঁশ কবে ফেলবে...?’

Advertisement

ফি-বছর জুনের শেষ থেকেই এ হেন ফোনে নাজেহাল হতে হয় ওঁদের। রথের দড়িতে টান পড়তেই শুরু হয় ব্যস্ততা। কত ফুটের বাঁশ কোথায় ক’টা লাগবে থেকে শুরু করে কোন কারিগর নিখুঁত কাঠামো বানাতে পারবেন— ভাবনাচিন্তার বিরাম থাকে না। কিন্তু করোনায় তাল কেটেছে সেই চেনা ব্যস্ততার!

শহর, শহরতলি ও জেলার ডেকরেটিং ব্যবসায়ীরা বলছেন, ‘‘রথ মিটলেই প্রস্তুতি শুরু হত। কিন্তু এ বার সেপ্টেম্বরের শেষ হতে চললেও এখনও তেমন ভাবে বরাতই আসেনি। কোথাও আবার কাজ শুরু হলেও তা চলছে ঢিমেতালে।’’ তাঁরা আরও জানাচ্ছেন, সম্প্রতি মুখ্যমন্ত্রী খোলামেলা মণ্ডপের কথা বলেছেন। তাই সেই বিষয়টি স্পষ্ট না হওয়া পর্যন্ত মণ্ডপের কাজ শুরু করতে রাজি নন অনেকেই। পাশাপাশি, করোনার প্রভাবে পুজোর বাজেট কমে যাওয়ায় মণ্ডপ তৈরি করে আদৌ লাভের মুখ দেখা যাবে কি না, তা নিয়েও সংশয়ে রয়েছেন অধিকাংশ ব্যবসায়ী।

Advertisement

ওই ব্যবসায়ীরা জানালেন, গত বছর এক-এক জন কারিগরকে প্রতিদিনের খাওয়া-দাওয়া ছাড়াও ৬০০-৮০০ টাকা মজুরি দিতে হয়েছিল। এ বছর সেই মজুরি বেড়েছে। কিন্তু পুজোর বাজেট কম হওয়ায় ওই টাকা দেওয়া কতটা সম্ভব হবে, তা নিয়েও ধন্দে রয়েছেন অনেকেই। আবার জেলা থেকে শহরে কাজ করতে এসে কারিগরেরা করোনায় আক্রান্ত হলে সেই দায়িত্ব কে নেবে, সেটাও ভাবার বিষয় বলে জানাচ্ছেন ‘ডেকরেটর্স সমন্বয় সমিতি, পশ্চিমবঙ্গ’-এর সাংগঠনিক সম্পাদক অরুণ বিশ্বাস। গত বছর কলেজ স্কোয়ারের মণ্ডপ তৈরি করেছিলেন তিনি। ওই ব্যক্তির কথায়, ‘‘এ বছর অনেক পুজো কমিটিই স্থানীয় ডেকরেটরদের দিয়ে কাজ করানোর পরিকল্পনা করেছেন। অন্যান্য বছর এই সময়ের মধ্যে ৫০ শতাংশ কাজ হয়ে যায়। নাওয়া-খাওয়ার সময় থাকে না। এ বার সেখানে অধিকাংশই বসে রয়েছেন।’’

সাধারণত, জুনের শেষ দিকে দুই মেদিনীপুর, ডায়মন্ড হারবার, সুন্দরবন, ক্যানিং ও দক্ষিণ বারাসত থেকে কারিগরেরা এসে শহরের দুর্গোৎসবের মণ্ডপ তৈরিতে যোগ দেন। অধিকাংশই ফেরেন কালীপুজো এবং জগদ্ধাত্রী পুজো কাটিয়ে। কিন্তু এ বার পরিচিত মালিকদের বার বার ফোন করেও ডাক পাচ্ছেন না তাঁরা। হুগলির উত্তরপাড়ার এক ডেকরেটর স্বপন জানার কথায়, ‘‘কাজই তো নেই। কারিগরদের ডেকে কী করব? বড়-মাঝারি-ছোট মিলিয়ে অন্তত ২০টা কাজ করি। এ বার তো কাজই নেই।’’

প্রতি বছরই জুন-জুলাইয়ের মধ্যে ডেকরেটরদের সঙ্গে পুজো কমিটিগুলির চুক্তি হয়ে যায়। অগ্রিম নিয়ে শিল্পী বা উদ্যোক্তাদের পরামর্শ মতো মণ্ডপের কাঠামো বাঁধার জন্য বিভিন্ন মাপের বাঁশ, নতুন ত্রিপল ও কাপড় কিনে ফেলেন ওই ব্যবসায়ীরা। কুমোরটুলি এলাকার এক ডেকরেটর দেবাশিস ভট্টাচার্য বললেন, ‘‘শুধু কী মণ্ডপ! বিজ্ঞাপনের ব্যানার, হোর্ডিং লাগানোর জন্যও কত বাঁশ বাঁধতে হত। এ বার রাস্তায় বিজ্ঞাপন কোথায়!’’

আবার বাধ্য হয়ে কম টাকাতেই কাজ নিতে হচ্ছে বলে জানালেন বেনিয়াটোলার ব্যবসায়ী স্বর্ণদীপ নাগ। তিনি বলেন, ‘‘পরিস্থিতি খুবই খারাপ। কারিগরদের মজুরি বেড়ে গিয়েছে। ধরা যাক, ১০ হাজার টাকার কাজে খরচ খুব কম করেও আট হাজার টাকা। তাতে আর লাভ কী হবে?’’

অন্য দিকে, কিছু ডেকরেটিং ব্যবসায়ী ইতিউতি কাজের বরাত পেলেও এখনই মণ্ডপ তৈরি শুরু করতে রাজি নন। তাঁদের দাবি, ২৪ সেপ্টেম্বর পুজো কমিটির সঙ্গে মুখ্যমন্ত্রীর বৈঠকের পরেই কাজে হাত দেবেন। ডেকরেটরদের সংগঠনের আর এক সম্পাদক গোপাল সরকার বলেন, ‘‘সমস্যার কথা জানিয়ে কয়েক বার মুখ্যমন্ত্রীকে চিঠিও দিয়েছি। আবারও দেওয়া হবে।’’

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement