কলকাতার কড়চা

অলোকেন্দ্র-পারুলদেবীর জ্যেষ্ঠ সন্তান অমিতেন্দ্র তাঁর পারিবারিক শিল্প-সংস্কৃতির চর্চায় সম্পূর্ণ স্বতন্ত্র আঙ্গিকে সংযোজন করেছিলেন প্রাচীন চিনা-সাহিত্যের গবেষণা।

Advertisement
শেষ আপডেট: ১১ জুন ২০১৮ ০০:০০
Share:

ছবি: অর্ণব নাগ

স্মৃতি-যাপনে অমিতেন্দ্রনাথ

Advertisement

বর্তমানে জোড়াসাঁকো ঠাকুরবাড়ির প্রবীণতম সদস্য তিনি। বাবা অলোকেন্দ্রনাথ ছিলেন অবনীন্দ্রনাথ ঠাকুরের জ্যেষ্ঠ পুত্র, মা পারুলদেবী দেবেন্দ্রনাথ-কন্যা সৌদামিনীর দৌহিত্রী। অলোকেন্দ্র-পারুলদেবীর জ্যেষ্ঠ সন্তান অমিতেন্দ্র তাঁর পারিবারিক শিল্প-সংস্কৃতির চর্চায় সম্পূর্ণ স্বতন্ত্র আঙ্গিকে সংযোজন করেছিলেন প্রাচীন চিনা-সাহিত্যের গবেষণা। আনুমানিক খ্রিস্টপূর্ব চতুর্থ শতাব্দীতে রচিত প্রাচীনতম চিনা সাহিত্য, লাওৎসে-র লেখা ‘তাও-তে-চিং’ নিয়ে তাঁর গবেষণা, বঙ্গানুবাদ চিনদেশের সংস্কৃতি চর্চায় দিকচিহ্নপ্রতিম। বেজিং বিশ্ববিদ্যালয়ের স্নাতকোত্তর ও বিশ্বভারতীর ডক্টরেট অমিতেন্দ্রনাথ ন্যাশনাল ডিফেন্স অ্যাকাডেমি, বিশ্বভারতী, মিশিগানের ওকল্যান্ড বিশ্ববিদ্যালয়-সহ দেশবিদেশের খ্যাতনামা বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানে চিনা ভাষা ও সাহিত্যের পাঠ দিয়েছেন, চিনদেশীয় গল্প-কবিতার বাংলা-ইংরেজি অনুবাদও প্রকাশ করেছেন। সম্প্রতি প্রকাশিত হয়েছে তাঁর স্মৃতিচারণা— অমিতকথা (অনুলিখন মিতেন্দ্র গঙ্গোপাধ্যায়, সিগনেট প্রেস)। বইটি এক অসামান্য অভিজ্ঞান, এক দিকে যেমন এতে রয়েছে পারিবারিক নানা কাহিনি, তেমনই আছে শান্তিনিকেতনের চিনা-ভবনের অধ্যক্ষ তান য়ুন শানের কথা; যিনি ১৯৬২-তে ভারত-চিন যুদ্ধের সময় নিজের রোজগারের অর্থ, এমনকি স্ত্রীর হাতের বালাও খুলে দেন ভারতের প্রতিরক্ষা-তহবিলে। ২০০১-এ অমিতেন্দ্রনাথের স্মৃতিকথা শ্রুতি-স্মৃতি প্রকাশিত হয়েছিল, যেখানে তাঁর দেখার সঙ্গে শোনা-কথারও মেলবন্ধন ঘটেছিল। অমিতকথা-য় বিবরণ প্রত্যক্ষদর্শীরই, জোড়াসাঁকো ঠাকুরবাড়ির অস্তমিত গরিমা থেকে চৌ এন লাই, নেহরুর সঙ্গে তাঁর সাক্ষাৎ— স্মৃতিভাণ্ডারের বিচিত্র রসদ। ছিয়ানব্বইয়ের কোঠায় পৌঁছেও কর্মচাঞ্চল্যে ভরপুর প্রাণবন্ত অমিতেন্দ্রনাথ মুখোমুখি হবেন কলকাতার নাগরিকদের, ১৬ জুন বিকেল পাঁচটায় আইসিসিআরের যামিনী রায় গ্যালারিতে। এই ‘সুধী-সঙ্গম’ অনুষ্ঠানের বিষয় ‘স্মৃতি-যাপনে অমিতেন্দ্রনাথ’। আয়োজনে ইনস্টিটিউট অব সোশ্যাল অ্যান্ড কালচারাল স্টাডিজ়।

Advertisement

নিখিল-কথা

ছবি: কৃষ্ণজিৎ সেনগুপ্ত

‘‘সংগীতের কোনও তুলনা নেই, সে হল জগতের সকল শিল্পের মধ্যে শ্রেষ্ঠতম।... আমাদের দেশে সংগীতের দুটি দিক আছে। একদিকে সে মানুষকে বিনোদন দেয়। অন্যদিকে তার মধ্যে আছে চিরন্তন সত্য ও পরমেশ্বরকে উপলব্ধি করার পথ।’’ সেতার-শিল্পী নিখিল বন্দ্যোপাধ্যায়ের এই সাক্ষাৎকারভিত্তিক আত্মকথন নিখিল-কথা (সূত্রধর) গ্রন্থনা করেছেন কৃষ্ণজিৎ সেনগুপ্ত। শিল্পীর জীবনপঞ্জি, বংশতালিকা, প্রকাশিত গ্রামোফোন রেকর্ড, ক্যাসেট ও সিডি-তালিকা, দুর্লভ রেকর্ডগুলির প্রচ্ছদও আছে বইটিতে। বিশ্ব সঙ্গীতদিবস উপলক্ষে ২১ জুন সন্ধে ৬টায় স্টার থিয়েটারের নটী বিনোদিনী মেমোরিয়াল আর্ট গ্যালারিতে বইটির আনুষ্ঠানিক প্রকাশ। আলোচনায় স্বপনকুমার বন্দ্যোপাধ্যায় শ্রীকান্ত আচার্য প্রত্যুষ বন্দ্যোপাধ্যায়। শিল্পীকে নিয়ে শঙ্খ ঘোষের রচনা থেকে পাঠ করবেন রত্না মিত্র। দ্বিতীয় পর্বে গ্রামোফোন রেকর্ডে শিল্পীর সেতারবাদন ও স্বকণ্ঠে আত্মকথার অংশবিশেষ শোনা যাবে। আয়োজনে সূত্রধর।

গীতা-স্মরণ

জন্মেছিলেন ১৬ জুন ১৯২২ সালে, কলকাতায়। তবে বাবা আইনজীবী দুর্গানন্দের কর্মসূত্রে তাঁর ছোটবেলা কেটেছিল মালয়ে। অল্প বয়সে বাবা-মাকে হারিয়ে ফেরেন কলকাতায়। কমলা গার্লস স্কুল থেকে আইএ পাশ করে পাড়ি দেন বোম্বাইয়ে, ইংরেজি পত্রিকার কলমচি হিসেবে। ছাত্র ফেডারেশনের প্রতিনিধি হয়ে ইউরোপে যান। সমাজবিদ্যা নিয়ে গবেষণা হাঙ্গেরিতে। বিয়ে করেন সুভাষ মুখোপাধ্যায়কে। শিশুসাহিত্যিক হিসেবে ধীরে ধীরে পরিচিতি বাড়ছিল। সিগনেট থেকে ববির বন্ধু প্রকাশিত হওয়ার পর তাঁকে আর ফিরে তাকাতে হয়নি। প্রয়াত হন ২০০৪-এ। এ বার তাঁরই ৯৬তম জন্মবর্ষপূর্তি উপলক্ষে ১৬ জুন সন্ধে ৬ টায় থীমা-র ঘরে (৪৬ সতীশ মুখার্জি রোড, কল-২৬) দে’জ ও থীমার উদ্যোগে একটি অনুষ্ঠানে তাঁকে নিয়ে কথা বলবেন শমীক বন্দ্যোপাধ্যায় ও রুশতী সেন। সঙ্গীত পরিবেশনে ইন্দিরা শিল্পীগোষ্ঠী। সুভাষ মুখোপাধ্যায়ের কবিতা ও গীতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের রচনা থেকে পড়বেন অমিয় দেব ও পারমিতা রায়।

বইঘর

মানুষীর বইঘর শুরু হচ্ছে। নাগরিক মঞ্চের শশীপদ বন্দ্যোপাধ্যায় রিসোর্স সেন্টারে (বাইপাস-চিংড়িহাটার মোড়ে, আরএ ৪৪৯)। মেয়েদের নিয়ে বিভিন্ন প্রকাশনার বাংলা ও ইংরেজিতে লেখা প্রবন্ধ গল্প উপন্যাস নাটক কবিতা যেমন থাকবে, তেমনই থাকবে গবেষণার তথ্য, সিডি ডিভিডি, বই সম্পর্কিত হাতের কাজ, ছবি। সব কিছুর বিষয় নারী এবং উদ্দেশ্য নারী। পাঠাগার এবং বিপণির এক একত্র প্রয়াস। আয়োজিত হবে আলোচনাসভাও। সপ্তাহে চার দিন, সোম বুধ বৃহস্পতি ও শনিবার ২-৭টা। সূচনা ১৬ জুন।

লিখন তোমার

মেয়েদের লিখনশৈলীর, বাচনভঙ্গির, মননের স্বকীয়তা— যা থেকে চিনে নেওয়া যায় আদি ও অকৃত্রিম নারীভাষ্যের অভিজ্ঞান, তা কি দেশ-কাল-সংস্কৃতির চৌহদ্দি টেনে দেয়? ভিন্নতা এনে দেয় তাদের প্রকাশভঙ্গি ও আখ্যানে? এ নিয়ে আলোচনা বা তর্কের কোনও শেষ নেই। সে সব সূত্রের সঙ্গে ব্যক্তিগত অভিজ্ঞতার রেশ জড়িয়ে নিজের ভাবনা বলবেন অপরাজিতা দাশগুপ্ত। অষ্টম কল্যাণ মৈত্র স্মারক বক্তৃতায়, ‘লিখন তোমার: বাঙালি মেয়ের মন, মনন, স্বর’। বর্তমানে পশ্চিমবঙ্গ রাজ্য পুস্তক পর্ষদের মুখ্য নির্বাহী আধিকারিক অপরাজিতার গবেষণা বা লেখালিখিতেও এসে পড়ে জাতীয়তাবাদী আন্দোলনে নারীর ভূমিকা, আবার এ সমস্তই অন্তর্লীন জড়িয়ে থাকে তাঁর রচিত উপন্যাস বা স্মৃতির আখ্যানেও। সিনে অ্যাকাডেমি ও ফোরাম ফর ফিল্ম স্টাডিজ় অ্যান্ড অ্যালায়েড আর্টস আয়োজিত এই বক্তৃতাটি শোনা যাবে নন্দন-৩-এ, ১৫ জুন সন্ধে ৬টায়।

স্থাপত্য চিত্র

‘‘আসলে ভারতের বিভিন্ন জায়গায় বার্ড ফটোগ্রাফি করতে যাওয়ার সুবাদেই ভাস্কর্যের ছবি তোলার প্রতি ঝোঁক বাড়ে। ঝোঁকটা আরও বেড়েছে গোলপার্কের রামকৃষ্ণ মিশনে ভারতীয় শিল্পকলা ও ভাস্কর্য বিষয়ক একটা কোর্স করায়, যেটা আমায় এ ধরনের ফটোগ্রাফিতে প্রভূত সাহায্য করেছে।’’ বলছিলেন বছর উনচল্লিশের আলোকচিত্রী সৌম্য সেনগুপ্ত। সম্প্রতি হয়ে গেল তাঁর তোলা প্রায় সত্তরটি ভারতীয় স্থাপত্যের আলোকচিত্র নিয়ে রামকৃষ্ণ মিশন ইনস্টিটিউট অব কালচার-এর মিউজ়িয়ামে ‘ষড়ঙ্গ’ শীর্ষক প্রথম একক প্রদর্শনী। দেখা গেল ভারতবর্ষের প্রাগৈতিহাসিক গুহাচিত্র থেকে আঠারো শতক পর্যন্ত শিল্প-ইতিহাস। বিভিন্ন প্রদেশের হিন্দু বৌদ্ধ ও জৈন শিল্প‌ঐশ্বর্যের কালানুক্রমিক বিবর্তনও ছবিগুলিতে ধরা পড়েছে।

ইন্দ্রমিত্র

হাফহাতা পাঞ্জাবি আর লুঙ্গি, মুখে পান, হাতে পানের বোঁটায় চুন। সারা জীবন ছাতা ও ঘড়িবিহীন মানুষটি ঠিক সাড়ে এগারোটায় দরজায় দাঁড়িয়ে। মাথায় কাঠফাটা রোদ। সঞ্চয়িতা-র ওই পাতাটা দেখো তো? কিংবা করুণাসাগর বিদ্যাসাগর নিয়ে কথা চলছে— হঠাৎ বলে উঠলেন ‘‘বিদ্যাসাগরের উত্তরাধিকারী তো দূরের কথা, তাঁর পায়ের নখের উত্তরাধিকারী হওয়ার যোগ্য কোনও বাঙালির ছায়া আজ পর্যন্ত দেখিনি।’’ ‘‘আচ্ছা বলতে পারো এক জীবনে মানুষ এত বই লেখে কী করে?’’ তাঁর কত কথা আজ শুধু নানা ঘনিষ্ঠ জনের স্মৃতিধার্য। ২০ ডিসেম্বর ১৯২৮, বরিশালে জন্ম অরবিন্দ গুহ’র। পাড়ায় তিনি সকলের ‘বড়দা’। কবি জীবনানন্দ দাশের ছাত্র, পঞ্চাশের দশকের বিশিষ্ট কবি, প্রাবন্ধিক-গবেষক, সরস গল্পকার অরবিন্দ গুহ তথা ইন্দ্রমিত্র সৃষ্টি করে গিয়েছেন সাজঘর, করুণাসাগর বিদ্যাসাগর, ইতিহাসে আনন্দবাজার, শরৎ কথামালা, বিদ্যাসাগরের ছেলেবেলা, মহারাজ, বাংলার কয়েকটি কিংবদন্তি, দক্ষিণনায়ক, জানলার কাছে, দেখাসাক্ষাত, সময় অসময়, আপনজন, আনপাবলিশড লেটার্স অব বিদ্যাসাগর-সহ বহু মূল্যবান সম্পদ। কয়েকটি ইচ্ছার মধ্যে পূর্ণ হল না বরিশালে কীর্তনখোলা নদীর কাছে শ্মশানে বাবার পাশে নিজের জায়গা করে নেওয়া। ৩ জুন চলে গেলেন ইন্দ্রমিত্র।

শতবর্ষে

তাঁর কাজের বিস্তৃতি ছিল স্বদেশি আন্দোলন থেকে শুরু করে সংস্কৃতি জগৎ হয়ে খেলাধুলার প্রাঙ্গণ অবধি। সুরেন্দ্রনাথ ও কিরণময়ীর চতুর্থ সন্তান বিজয় রায় (১৯১৯-২০১৭) ছোট থেকেই পড়াশোনার পাশাপাশি এক অভূতপূর্ব সাংগঠনিক ক্ষমতার অধিকারী ছিলেন। আর ছিল সাংবাদিকতার প্রতি প্রগাঢ় আকর্ষণ। জন্মেছিলেন হাওড়ার বালিতে। এখান থেকেই তিনি ‘গড়ের মাঠ’, ‘৪ এর পল্লী’ শীর্ষক পাক্ষিকের সম্পাদনাও করেছেন। বিভিন্ন সংবাদপত্রে জেলার প্রতিনিধি হিসেবে তিনি সাংবাদিকজীবন শুরু করেন। অতুল্য ঘোষের বিশেষ নজরে পড়ে তাঁর ‘জনসেবক’ পত্রিকায় চিফ রিপোর্টারের দায়িত্ব সামলান। পরবর্তীতে ‘দৈনিক বসুমতী’র চিফ রিপোর্টারের দায়িত্বে থেকে সংবাদ পরিবেশনে আম বাঙালির দৃষ্টি আকর্ষণ করেছিলেন। চলচ্চিত্র সাংবাদিকতার প্রতিও তাঁর বিশেষ আগ্রহ ছিল। সাংবাদিকতার সূত্রে গত ছ’দশক ধরে রাজনীতির শীর্ষ ব্যক্তিত্বের পাশাপাশি বাংলা চলচ্চিত্রের অভিনেতা-অভিনেত্রীরাও তাঁর বিশেষ অনুরাগী ছিলেন। দু’বার বিএফজেএ-র সভাপতি হন। সম্প্রতি কলকাতা প্রেস ক্লাবে তাঁর জন্মশতবর্ষের অনুষ্ঠানে ‘শতবর্ষে সাংবাদিক বিজয় রায়’ শীর্ষক স্মারক পুস্তিকা প্রকাশ পেল।

কবির ছবি

১৯৭৯-তে কাব্যগ্রন্থ ‘অলীক কুকাব্য রঙ্গে’ প্রকাশে যেমন তোলপাড় বাংলা কবিতার জগতে, তেমনই বাঙালি কবিদের মধ্যে চোখে-পড়ার মতো আত্মপ্রকাশ কবি তুষার চৌধুরীর। কবিতা লেখার পাশাপাশি ছবি আঁকা-র ভিতরেও খুঁজে নিতেন তুষার বেঁচে-থাকার আনন্দ, কিন্তু জীবৎকালে (১৯৪৯-২০১১) আড়ালেই রেখে দিয়েছিলেন সেই সব ছবি। গত ১৫ মে কবির ৭০তম জন্মদিনকে স্মরণে রেখে দেবভাষা-র নতুন আবাসে তাঁর আঁকা ছবির একক প্রদর্শনী শুরু হল গতকাল, চলবে ১৭ জুন অবধি। উদ্বোধনে ছিলেন সুশোভন অধিকারী সঞ্জয় মুখোপাধ্যায়। তাঁর স্মৃতিচারণ ও কবিতাপাঠে সৌরভ দে ও দেবজ্যোতি মুখোপাধ্যায়। আয়োজনে দেবভাষা।

শহরের করিডর

যত পালাতে চাই, ততই যেন এই শহর ধেয়ে আসে আমার পিছু পিছু: কলকাতা নিয়ে এই এক নাজেহাল ‘অভিযোগ’ কলকাতাবাসীর। কী এক আশ্চর্য মায়ায় প্রজন্মের পর প্রজন্ম বাসিন্দাকে প্রিয় শহরটি এ ভাবেই আচ্ছন্ন করে রাখে। অথচ ইতিমধ্যে তো পাল্টেছে অনেক কিছুই, শহরের চেহারা, চরিত্র। বদলেছে শহরের সাঙ্গীতিক পরিমণ্ডলও। এই বিবর্তনের ধরনটাকে কি তবে তুলে ধরা যায় গানের মধ্য দিয়েও? গানেই কি তৈরি করা যায় একটা পরিবর্তনশীল সময়ের কোলাজ? এমন একটা ভাবনা নিয়ে তৈরি হয়েছে ‘শহরের করিডর’ নামের অনুষ্ঠানটি, যেখানে একই আসরে নানা পর্বের বাংলা গানের সমৃদ্ধ সম্ভার তুলে ধরবেন দুই প্রজন্মের শিল্পী প্রবুদ্ধ রাহা ও প্রত্যয় রাহা। সম্পর্কেও তাঁরা দুই প্রজন্ম: পিতা ও পুত্র। তাঁদের সঙ্গে গল্প জমাবেন চান্দ্রেয়ী ঘোষ ও সুজয়প্রসাদ, ভাষ্য রচনা করেছেন সোহম কর। আইসিসিআর-এর সত্যজিৎ রায় প্রেক্ষাগৃহে ১৬ জুন সন্ধ্যা সাড়ে ৬টায় শুরু এই সঙ্গীত-সন্ধ্যা।

লাদাখ চলে...

এক রিকশাচালককে গন্তব্য জানিয়ে রিকশায় উঠতে যাবেন ইন্দ্রাণী চক্রবর্তী, খেয়াল করলেন, চালক অন্যমনস্ক। দ্বিতীয় বার শুধোতে চালক সংবিৎ ফিরে পেয়ে বললেন, ‘‘ওহ্ হো, আপনি ডাকছিলেন না? আসলে আমি তো মনে-মনে লাদাখ পৌঁছে গিয়েছিলাম। উঠুন দিদি, উঠুন।’’ যেতে-যেতে ইন্দ্রাণী জানতে পারেন, চালকের নাম সত্যেন, ইতিমধ্যেই তিনি নিজের রিকশা নিয়ে ভারতের বিভিন্ন জায়গায় সস্ত্রীক ঘুরে এসেছেন, রিকশা থামার পর সে সব বেড়ানোর ছবিও দেখালেন। এ বারে তাঁর পরিকল্পনা লাদাখ যাওয়ার। ‘‘ছবি-করিয়ে হিসাবে এমন সুযোগ ছাড়তে পারি? সত্যেনের জার্নি-টা তো স্থিরচিত্রে আটকে রাখার বিষয় না, চলচ্চিত্রের বিষয়। অতএব ওর কথা শুনতে-শুনতেই সিদ্ধান্ত নিয়ে ফেললাম এ নিয়ে ছবি করার।’’ বলছিলেন ইন্দ্রাণী, ‘‘সত্যেনের মধ্যে সেই মানুষটাকে খুঁজে পেলাম যে অদম্য, অ্যাডভেঞ্চার-প্রিয়, দারিদ্রের তোয়াক্কা করে না। এমন একটা মানুষের কথা সকলকে জানানোর জন্যেই তো ছবি করা।’’ ছবির নাম ‘লাদাখ চলে রিকশাওয়ালা’, ফিল্মস ডিভিশন-এর প্রযোজনা, এ বারের জাতীয় পুরস্কারে অকাহিনিমূলক বিভাগে ‘এক্সপ্লোরেশন/ অ্যাডভেঞ্চার’ ফিল্ম হিসাবে সেরা-র শিরোপা পেয়েছে। ইন্দ্রাণী অবশ্য দেশের বাইরেও স্বীকৃতি পেয়েছেন নিজের আগের ছবিগুলির জন্যে, উল্লেখ্য— ডেসটিনি, স্টোরি অব দ্য উইচ, একটি ছোট ছবি। গত ৪ জুন ফেডারেশন অব ফিল্ম সোসাইটিজ় আয়োজিত এ বারের জাতীয় সম্মানপ্রাপ্ত শিল্পীদের সংবর্ধনা অনুষ্ঠানে দেখানো হল তাঁর এই নতুন ছবিটি।

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement