আত্মনির্ঘোষের এই যুগে ক্রমশ ভাবাই কঠিন যে, এমন মানুষেরা কিছু দিন আগেই এই বঙ্গে ছিলেন, যাঁরা একাগ্রমনে কাজ করতেন জীবনের বিভিন্ন ক্ষেত্রে, কোনও জনপ্রিয়তা বা সঙ্কীর্ণ স্বার্থের চিন্তা ছাড়াই। শিশির কুমার বসুর জন্মশতবর্ষে (১৯২০-২০০০) সেই বিগত সমাজের জন্য আবারও কষ্টবোধ হয়। পেশাগত ভাবে ব্যস্ত ও নিবেদিতপ্রাণ শিশু-চিকিৎসক, নিরলস প্রতিষ্ঠান-নির্মাতা শিশির বসু নিশ্চয় বুঝেছিলেন তাঁর বাবা শরৎচন্দ্র বসু ও রাঙাকাকাবাবু নেতাজি সুভাষচন্দ্র বসু যে দেশটি স্বাধীন করার কাজে তাঁদের জীবন উৎসর্গ করেছিলেন, স্বাধীনতার পর সেই দেশের প্রয়োজন— কর্মী মানুষের কর্ম। নেতাজি ও আজাদ হিন্দ ফৌজ বিষয়ক সমস্ত লেখাপত্র এক জায়গায় আনতে শিশির বসু যখন তৈরি করছিলেন নেতাজি রিসার্চ বুরো, প্রথম দিকে তিনি কোনও সরকারি সাহায্যও পাননি। প্রথমে ভাই অমিয় বসু, এবং পরে সহধর্মিণী কৃষ্ণা বসু ও পুত্রদ্বয় সুগত বসু ও সুমন্ত্র বসু সাহায্য করেছেন তাঁকে।
কেমন ভাবে কাজ করায় বিশ্বাস ছিল তাঁর, তার চমৎকার ছবি মেলে লেনার্ড গর্ডনের স্মৃতিচারণে। ইতিহাসবিদ গর্ডন গবেষণা করেছিলেন নেতাজি ভবনে, একাধিক বই লিখেছিলেন সুভাষচন্দ্র ও শরৎচন্দ্রের উপর। কাজের সূত্রে বুঝলেন তিনি, নেতাজির বন্দিজীবনের বেশ কিছু লেখাপত্র পরিবারের অন্য কেউ নিয়ে গিয়ে আর ফেরত দেননি। হতাশ গবেষক আক্ষেপ শুরু করলেন, ওই লেখাগুলি পেলে কতই-না ভাল হত তাঁর বই। শিশির বসু সংক্ষেপে বললেন, ‘‘চিন্তা কোরো না। অনেকটাই পেয়েছ তুমি। তাই দিয়ে কাজ শুরু করো, লিখে ফেলো।’’ গর্ডন কোনও দিন ভোলেননি, তাঁর অস্থির মন কত শান্ত হয়েছিল স্থিত-সংযত সেই পরামর্শে। শান্ত আত্মপ্রত্যয়ী শিশির জানতেন, খেদ কিংবা সঙ্কীর্ণতা বিদ্যালাভে সাহায্য করে না, কর্মব্রতে তো নয়ই।
সুভাষচন্দ্রের সেই নেতাজি-জীবনের অজানা অভিযানে ভ্রাতুষ্পুত্র শিশির বসুই ছিলেন প্রথম পর্বের বিশ্বস্ত সঙ্গী। বিশ্ব-রাজনীতির সঙ্গে সে দিন এক নতুন বন্ধনে যুক্ত হয়েছিল ভারতের রাজনীতি। নতুন, তবে আকস্মিক নয়। ভারতীয় বিপ্লবীরা প্রথম বিশ্বযুদ্ধের সময় থেকেই পৃথিবীর নানা প্রান্তে ছড়িয়ে পড়ছিলেন সাম্রাজ্যবাদ-বিরোধী কাজের সূত্রে। ২ ফেব্রুয়ারি নেতাজি রিসার্চ বুরো আয়োজিত অনুষ্ঠানে তাই কেমব্রিজ ইউনিভার্সিটির টিমোথি নর্মান হার্পারের বক্তৃতার বিষয় ছিল: ইন্ডিয়া’জ় অ্যান্টি-কলোনিয়াল রেভলিউশনারিজ় অ্যাক্রস এশিয়া অ্যান্ড টু ওয়ার্ল্ড ওয়ার্স। তার পর প্রমিতা মল্লিক ও সৌরেন্দ্র-সৌম্যজিৎ-এর সঙ্গীত। আর, সেই নীরব কর্মী মানুষটির ব্রোঞ্জ-প্রতিকৃতি উন্মোচন, যাঁকে ছাড়া ভারতের স্বাধীনতা সংগ্রামের ইতিহাসের নেতাজি-পর্বটি সুসম্পন্ন ও সুরক্ষিত হত না। সঙ্গে বাঁ দিকে ১৯৪৫ সালে জেল থেকে ছাড়া পাওয়ার পর শিশির বসু, আর ডান দিকের ছবিটি ২০০০ সালে তোলা।
নীল ধ্রুবতারা
জাতীয় ঐক্য, ঐতিহ্য ও সাংস্কৃতিক পরম্পরাকে তুলে ধরতে, ২০০০ সালে সুখেন্দুশেখর রায়ের নেতৃত্বে এক দল উৎসাহী গড়ে তুলেছিলেন ‘হেরিটেজ বেঙ্গল’। পলাশির যুদ্ধের ২৫০ বছর, ১৮৫৭ সালের মহাবিদ্রোহের ১৫০ বছর, রবীন্দ্রনাথ-বিবেকানন্দের সার্ধশতবর্ষ-সহ নানা ইতিহাসকে স্মরণ করে বিভিন্ন অনুষ্ঠান ছাড়াও ‘বাংলা গানের ১০০ বছর’, বেগম আখতারের শতবর্ষ নিয়ে অনুষ্ঠান আয়োজন করেছে সংস্থাটি। এ বার তাদের শ্রদ্ধার্ঘ্য সঙ্গীতের এক মহানক্ষত্রকে। হেমন্ত মুখোপাধ্যায় ১৬ জুন শতবর্ষ পূর্ণ করবেন। ১৪ ও ১৫ ফেব্রুয়ারি বিকেল সাড়ে ৪টেয় রবীন্দ্রসদনে শিল্পীর প্রতি শ্রদ্ধা নিবেদিত হবে। দেখানো হবে শিল্পীকে নিয়ে তৈরি ৩৫ মিনিটের একটি তথ্যচিত্র। শিল্পীর গাওয়া সমস্ত গানের তালিকা ও বিশিষ্টদের লেখা ও দুর্লভ ছবির একটি সঙ্কলন গ্রন্থ ‘নীল ধ্রুবতারা’ প্রকাশিত হবে। রাগপ্রধান সুরে শিল্পীর কিছু জনপ্রিয় গান সেতারে শোনাবেন শিল্পী শুভজিৎ ও কল্যাণ মজুমদার। সঙ্গে তাঁর স্মরণীয় কিছু গান পরিবেশন করবেন শ্রীকান্ত আচার্য ও জয়তী চক্রবর্তী।
অনুষ্ঠানে প্রদর্শিত হবে শিল্পীর ব্যবহৃত গাড়িটি। দু’দিনের অনুষ্ঠান উদ্বোধন করবেন আরতি মুখোপাধ্যায় ও সৌমিত্র চট্টোপাধ্যায়।
রবীন্দ্রগান
ব্রিটিশ আমলে উত্তরপ্রদেশের মজফ্ফরনগরে সরকারি হাইস্কুলে হেডমাস্টারি করেছেন। ইলাহাবাদ বিশ্ববিদ্যালয় থেকে এমএ পাশ করা আদিত্যকুমার দেব মজুমদার (জন্ম ১৮৮২) রবীন্দ্রনাথের ১৫৩টি গান ইংরেজিতে অনুবাদ করেছিলেন একটি ছোট্ট ডায়েরিতে। আর একটি ডায়েরিতে বিশদে লিখে গিয়েছেন তাঁর অসুস্থ স্ত্রীকে নিয়ে সুইৎজ়ারল্যান্ড বাসের বিবরণ। শখ ছিল তাঁর ছবি তোলা, কবিতা লেখার। হোমিয়োপ্যাথি চর্চার কারণে প্রতিবেশীরা তাঁকে ‘ডাক্তারবাবু’ বলে ডাকতেন। সম্প্রতি তাঁর বডোদরাবাসিনী পৌত্রী মিতা দাস মজুমদারের আগ্রহে ডায়েরি থেকে বাছাই ৫০টি রবীন্দ্রগানের অনুবাদ সিলেক্টেড সংস (সম্পাদনা গোপাল লাহিড়ী) নামে প্রকাশ করছে অভিযান প্রকাশনী। গ্রন্থটির আনুষ্ঠানিক প্রকাশ ঘটবে ১১ ফেব্রুয়ারি সন্ধে ৬টায় রবীন্দ্র ওকাকুরা ভবনে। ওই উপলক্ষে পাঠে গানে থাকছেন শান্তনু গঙ্গোপাধ্যায়, শিবানী ভৌমিক শ্রীনন্দা মুখোপাধ্যায়। সঙ্গে থাকছে বহুভাষিক কবি-সম্মেলন।
ইলিশ কথা
ইলিশ নিয়ে বাঙালির সাধ, আহ্লাদ, স্বপ্ন ও স্মৃতিচর্চার কোনও সীমাপরিসীমা নেই। ইলিশ নিয়ে ঈর্ষা এবং রেষারেষির ইতিহাসও নেহাত কম নয়। আর এই সব নিয়েই ‘ইতিকথা’র আলোচনাসভা ‘প্রীতির ইলিশ, স্মৃতির ইলিশ’। আলোচনায় থাকবেন ইলিশ বিশেষজ্ঞ দিগেন বর্মন, কলকাতা বিশেষজ্ঞ হরিপদ ভৌমিক, কবি মন্দার মুখোপাধ্যায়, খাদ্যগবেষক দামু মুখোপাধ্যায়, কবি-প্রাবন্ধিক রজতেন্দ্র মুখোপাধ্যায় এবং চিত্রকর হিরণ মিত্র। ১৪ ফেব্রুয়ারি সন্ধে ছ’টায়, অবনীন্দ্র সভাঘরে এই অনুষ্ঠানে প্রকাশিত হবে রজতেন্দ্র মুখোপাধ্যায় বিরচিত, হিরণ মিত্র চিত্রিত ‘তোমার ইলিশ, আমার ইলিশ...’ বইটি। এই বইতে আছে রজতেন্দ্রর ইলিশ নিয়ে তিনটি মৌলিক প্রবন্ধ ও হিরণ মিত্রের সাতটি নতুন অলঙ্করণ। আলোচনায় উঠে আসবে ইলিশ মাছের সমুদ্র পর্যটন, পুরনো কলকাতার ইলিশের হালচাল, হারিয়ে যাওয়া ইলিশের রান্না, নানা জায়গার ইলিশ। অনুষ্ঠানের শেষে উপস্থিত দর্শকদের মনে ইলিশ নিয়ে কোনও প্রশ্ন জাগলে তার উত্তরও দেবেন আলোচকেরা ।
শতবর্ষে স্মরণ
বসুমতী সাহিত্য মন্দিরের প্রতিষ্ঠাতা ছিলেন উপেন্দ্রনাথ মুখোপাধ্যায়। তাঁর পুত্র সতীশচন্দ্রের প্রয়াস এই প্রকাশনা সংস্থাকে বহুগুণে প্রসারিত করেছিল। তৃতীয় প্রজন্ম রামচন্দ্র, জন্ম ৩১ জানুয়ারি ১৯২০। সদ্য তাঁর শতবর্ষ পূর্ণ হল। দুরন্ত ছেলেটির বাল্যশিক্ষা হিন্দু স্কুলে, ১৯৩৫-এ ম্যাট্রিকে নবম। প্রেসিডেন্সি কলেজ থেকে আইএতে তৃতীয়, গণিত লজিক এবং সংস্কৃতে সর্বোচ্চ নম্বর, কলিকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের দু’টি পুরস্কার-সহ বৃত্তি পঁচিশ টাকা। ১৯৩৯ সালের স্নাতক রামচন্দ্র ঈশান স্কলার। পারিবারিক বিপর্যয়ের মধ্যে ১৯৪১ সালে এমএ পরীক্ষায় দ্বিতীয় স্থান পেলেও অশোকনাথ শাস্ত্রীর কথায়, ‘‘বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপকবৃন্দ একবাক্যে স্বীকার করিয়া থাকেন যে, পরীক্ষায় প্রথম স্থান অধিকারের যথার্থ যোগ্যতা একমাত্র রামচন্দ্রেরই ছিল— …রামচন্দ্রের মত কৃতি ক্ষুরধার-বুদ্ধিমান ছাত্র আর একটির অধিক দেখি নাই।’’ আবাল্য বসুমতী অফিসে সব কাজের সঙ্গেই মন জড়াত, সাহিত্য সঙ্গীত অভিনয় পত্রিকা প্রকাশ সবেতেই উৎসাহী। ‘কিশলয়’ পত্রিকা প্রকাশ করেন ১৯৩৬ সালে, নাবালক বলে সম্পাদক হিসেবে হেমেন্দ্রপ্রসাদ ঘোষের নাম। এগিয়ে চলার মন উন্নততর প্রযুক্তির তাগিদে যখন রাতদিন মগ্ন, মাত্র চব্বিশ বছর বয়সে অকালপ্রয়াণ। আচার্য প্রফুল্লচন্দ্র রায়ের আক্ষেপ ‘‘অন্য কোনও বিশেষ কার্যভার গ্রহণ করিবার জন্য রামচন্দ্রের ডাক পড়িল…।’’
বিজ্ঞান মেলা
প্রকৃতিবিজ্ঞানী গোপালচন্দ্র ভট্টাচার্যর ১২৫তম জন্মবর্ষ উদ্যাপন চলেছে ২০১৯-২০ সাল মিলিয়ে, ‘গোপালচন্দ্র ভট্টাচার্য বিজ্ঞান প্রসার সমিতি’-র উদ্যোগে। ১ অগস্ট ২০১৯ এক বিশেষ অনুষ্ঠানের মাধ্যমে যার সূচনা। তারই অংশ হিসেবে ১৪-১৬ ফেব্রুয়ারি কলেজ স্কোয়ারে অনুষ্ঠিত হবে গোপালচন্দ্র ভট্টাচার্য স্মারক বিজ্ঞান মেলা (২-৭টা)। মেলার মূল বিষয় অবশ্যই গোপালচন্দ্র ভট্টাচার্যর জীবন ও কাজ নিয়ে প্রদর্শনী। এ ছাড়া বিভিন্ন স্কুলের ছাত্রছাত্রীরা বিজ্ঞান-মডেল নিয়ে অংশ নেবে গোপালচন্দ্রর নামাঙ্কিত বিজ্ঞান-মডেল প্রতিযোগিতায়। সেই সঙ্গে প্রতি দিন মেলায় থাকছে বিজ্ঞানের বিভিন্ন দিককে সহজ ভাবে সাধারণ মানুষের কাছে তুলে ধরার মতো বিভিন্ন বিষয়ের আকর্ষক প্রদর্শনী। যেমন, অলৌকিক নয় লৌকিক, খাবারে ভেজাল ধরার সহজ উপায়, সাপ নিয়ে কিংবদন্তি, টেলিস্কোপের মাধ্যমে আকাশ দেখা ইত্যাদি।
স্মারক বক্তৃতা
বড়দা সুকুমার রায়ের কথায় খুব অল্প বয়সেই ‘সন্দেশ’-এ একটি গল্প লিখেছিলেন। কিন্তু তাঁকে সাহিত্যিক হিসেবে প্রতিষ্ঠিত করার মূল কারিগর সামান্য আড়ালে থাকা ‘সন্দেশ’ সম্পাদক, লীলা মজুমদারের মণিদা সুবিনয় রায়। মূলত তাঁরই উৎসাহে দ্বিতীয় পর্যায়ের ‘সন্দেশ’-এ একের পর এক গল্প লিখে ছোটবড় সবার মন জয় করেছিলেন লীলা রায় ওরফে লীলা মজুমদার। দীর্ঘ জীবনে (১৯০৮-২০০৭) ছোটদের জন্য লিখেছেন অজস্র গল্প, উপন্যাস, নাটক, স্মৃতিকথা, ফিচার। দীর্ঘ চল্লিশ বছর ছিলেন ‘সন্দেশ’ সম্পাদক। ‘সন্দেশ’ পত্রিকার গ্রাহকদের কাছে তিনি ছিলেন বড় সম্পাদক (ছোট সম্পাদক ও সম্পাদক মশাই যথাক্রমে নলিনী দাশ ও সত্যজিৎ রায়), আর সবার কাছেই ‘লীলাদি’। ‘সন্দেশ’ এবং ‘বিচিত্রপত্র’ ১৩ ফেব্রুয়ারি নন্দন ৩-এ বিকেল সাড়ে ৫টায় আয়োজন করেছে লীলা মজুমদার স্মারক বক্তৃতা। প্রথম বছরের বক্তৃতা দেবেন শীর্ষেন্দু মুখোপাধ্যায়। প্রধান অতিথি সৌমিত্র চট্টোপাধ্যায়। প্রসাদরঞ্জন রায় বলবেন লীলা মজুমদারকে নিয়ে আগামী দিনের পরিকল্পনা। প্রকাশিত হবে লীলা মজুমদারের কিছু বই।
উপল ভাদুড়ী
অভিনয় জগতের জীবন্ত কিংবদন্তি চপল ভাদুড়ী। যাত্রা জগতে যিনি ‘চপল রানি’ নামে খ্যাত। অভিনয়ের স্বীকৃতি স্বরূপ নানা পুরস্কারের পাশাপাশি পেয়েছেন বঙ্গভূষণ সম্মানও। আজ এই ৮৩ বছর বয়সেও মঞ্চেই তিনি তাঁর সত্তাকে খুঁজে পান। শিল্পীর ব্যক্তিগত জীবন, অভিনয় জীবনের প্রাপ্তি-অপ্রাপ্তি নিয়ে তৈরি ‘দমদম শব্দমুগ্ধ’ প্রযোজিত ‘উপল ভাদুড়ী’ নাটকটি ইতিমধ্যে কলকাতায় বেশ সাড়া ফেলেছে। রাকেশ ঘোষ নির্দেশিত এই নাটকটি এ বার মঞ্চস্থ হতে চলেছে সর্ববৃহৎ স্তরে, ২১তম ভারতরঙ্গ মহোৎসবে। ১২ ফেব্রুয়ারি মঞ্চস্থ হবে উপল ভাদুড়ী নাটকটি। তাই স্বাভাবিক ভাবে খুবই উচ্ছ্বসিত চপল ভাদুড়ী। তাঁর কথায়, ‘‘রাকেশ আমার থেকে অনেক ছোট হলেও আমার বন্ধুর মতো। আমার জীবনের ছায়া অবলম্বনে লেখা উপল ভাদুড়ী নাটকটি প্রতিটি জায়গায় সুনাম এবং সুযশের সঙ্গে অভিনীত হয়ে চলেছে। আমি এতে খুব তৃপ্ত। নাটকটি উৎসবে ডাক পেয়েছে জেনে খুব ভাল লাগছে।’’
তীর্থমঙ্গল
‘অল্প কর্যা দ্রব্য লৈল যার কিছু নাই। শীল জাঁতা লয়্যা কৈল নৌকায় বোঝাই।।’ কবি বিজয়রাম সেনের নিবাস ছিল ২৪ পরগনার ভাজনঘাট। তিনি ছিলেন বৈদ্য-চিকিৎসক। পলাশি যুদ্ধের সমসময়ে কৃষ্ণচন্দ ঘোষাল নামের এক ধনাঢ্য ব্যবসায়ী বহু নৌকা-সহ কাশী যাত্রাকালে পুঁটিমারিতে উপস্থিত হন। সে সময় দুই ব্রাহ্মণ কৃষ্ণচন্দের সহযাত্রী হলে, বিজয়রামও তাঁদের সঙ্গে কাশী যাওয়ার ইচ্ছা প্রকাশ করেন। অতঃপর চিকিৎসক সঙ্গে থাকবে এই ভাবনায়, তাঁর সে ইচ্ছা মঞ্জুর হয়। এই যাত্রাপথের নিপুণ বর্ণনা করেছিলেন বিজয়রাম সেন, এটিই পরিচিতি লাভ করে ‘তীর্থমঙ্গল’ নামে। মঙ্গল শব্দের ব্যাপক অর্থে এই কাব্যের মধ্যেই ধরা পড়েছে সে কালের স্থান কাল পাত্রের বিস্তৃত বিবরণ। বাংলার মঙ্গলকাব্যগুলি নিয়ে দীর্ঘ দিন ধরেই নিবিড় কাজ করে চলেছেন আমেরিকার ওয়েস্টার্ন ওয়াশিংটন ইউনিভার্সিটির অধ্যাপক ডেভিড কার্লে। সম্প্রতি এশিয়াটিক সোসাইটির হুমায়ুন কবীর হলে ‘রিলিজিয়ন অ্যান্ড পলিটিক্স ইন বিজয়রাম সেন’স তীর্থমঙ্গল’ শীর্ষকে বললেন তিনি। উঠে এল সমসময়ের আর্থসামাজিক নানা ভাবনা। আশ্চর্য, এমত সভায় উপস্থিতির হার ছিল অতি নগণ্য!
গল্পওয়ালা
বছর দুই আগের কথা। কর্মসূত্রে বেঙ্গালুরুবাসী প্রযুক্তিবিদ সৌমাল্য সেনগুপ্ত সরস্বতী পুজোর ভোগ খেতে খেতে বন্ধুদের সঙ্গে আড্ডা মারছিলেন। দেখা গেল গত দু’বছরের মধ্যে তাঁদের এক জনেরও কোনও বাংলা বই পড়া হয়ে ওঠেনি। বন্ধুর দলে সকলেই কলকাতায় বাংলা মিডিয়াম স্কুলে পড়াশোনা করেছেন, ছাত্রজীবনে কবিতা ভালবাসতেন, সুনীল-শীর্ষেন্দু-শঙ্কর পড়ে মুগ্ধ হতেন। কয়েক বছর কলকাতা ছাড়া বলেই কি তা হলে বাংলা সাহিত্যের সঙ্গে আড়ি হয়ে গেল? সৌমাল্য ভাবতে লাগলেন তা হলে কি আমাদের একাধিক শতাব্দীর সম্পদ ও ঐতিহ্য ভবিষ্যৎ প্রজন্মের কাছে লোপ পেয়ে যাবে? তাঁর মনে পড়ল বিদেশে অডিয়োবুকের সঙ্গে প্রথম পরিচয়ের কথা, সেখানে মানুষ গাড়িতে বসেই মোবাইলে অ্যাপ চালিয়ে দিব্যি কানে হেডফোন গুঁজে গান গল্প নাটক কত কিছু শোনে। সেটা এ দেশেই বা হবে না কেন? কিছু দিন চিন্তাভাবনা করে ঝাঁপ দিলেন বাংলা সাহিত্যের সঙ্গে নতুন যুগের প্রযুক্তিবিদ্যার মেলবন্ধন করে একটি অ্যাপের মাধ্যমে শব্দতরঙ্গে ছড়িয়ে দেওয়ার প্রকল্প। নাম দিলেন ‘গল্পওয়ালা’। সহযোগিতায় এগিয়ে এসেছেন বিশিষ্ট বাচিকশিল্পীরা। এই প্রয়াস কিন্তু নিছক সাহিত্যপাঠ নয়, আবহ ও সঙ্গীতাংশ যোগ করে এক সম্পূর্ণ শব্দপ্রতিমা নির্মাণ। গল্পওয়ালার যাত্রা শুরু রবীন্দ্রনাথের লেখা দিয়ে, আছে বঙ্কিমচন্দ্র, শ্রীঅরবিন্দ, অবনীন্দ্রনাথ, বিভূতিভূষণের লেখার অডিয়ো বুক, তৈরি হয়েছে ভূতের গল্পের সঙ্কলন, স্মৃতিকথার সম্ভার।
ফোকাস দেশ
মানুষের ভাব প্রকাশের যে কয়েকটি মাধ্যম আছে, তার মধ্যে অন্যতম আলোকচিত্র। কলকাতার বেঙ্গল ফটোগ্রাফি ইনস্টিটিউট আলোকচিত্র চর্চা ও শিক্ষার সঙ্গে দীর্ঘ দিন যুক্ত। এই প্রতিষ্ঠানের ছাত্রছাত্রীরা কর্ণধার সঞ্জয় ভট্টাচার্যের তত্ত্বাবধানে প্রতি বছর এক আলোকচিত্র প্রদর্শনীর আয়োজন করে যার নাম ‘লেন্সভিশন’। এখানে ছাত্রছাত্রীদের আলোকচিত্র ছাড়াও একটি বিশেষ অংশ থাকে ‘ফোকাস দেশ’। প্রতি বছর সেই দেশের কিছু বিখ্যাত আলোকচিত্র সেখানে প্রদর্শন করা হয়। উদ্দেশ্য দু’টি ভিন্ন দেশের মধ্যে সংস্কৃতির বিনিময়। এই বছরের ফোকাস দেশ জার্মানি। সেই দেশের ২২জন আলোকচিত্রীর ৪৪টি ছবি এবং ইনস্টিটিউটের ছাত্রছাত্রীদের ৬২টি ছবি নিয়ে এই বছরও প্রদর্শনীর আয়োজন করা হয়েছে গগনেন্দ্র প্রদর্শশালায়। প্রদর্শনী চলবে ১৩ ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত (২-৮টা)।
উমা সেহানবিশ
২৪ জানুয়ারি যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ের ত্রিগুণা সেন প্রেক্ষাগৃহে পালিত হল শিক্ষাব্রতী উমা সেহানবিশের জন্মশতবর্ষ। যৌথ উদ্যোক্তা পাঠভবন কলকাতা, পাঠভবন ডানকুনি এবং ‘ইন্দিরা’ সঙ্গীত শিক্ষায়তন। পাঠভবন স্কুলের অন্যতম প্রতিষ্ঠাতা ও রূপকার ছিলেন উমা সেহানবিশ। ১৯৬৫ সালে তাঁর হাত ধরেই তৈরি হয় অন্য রকম স্কুল পাঠভবন, যেখানে রবীন্দ্রনাথের আদর্শে লেখাপড়ার চর্চা হয়। বাংলা ও ইংরেজি দুই মাধ্যমেই পড়াশোনা শুরু হয় এই কো-এডুকেশনাল স্কুলটিতে। সেখানে খোলামেলা চিন্তার পরিসর এবং সংবেদনশীল মন তৈরিই ছিল শিক্ষকদের দায়িত্ব। এ দিনের অনুষ্ঠানে উমা সেহানবিশ সম্পর্কে বলেন পাঠভবন সোসাইটির সভাপতি পার্থ ঘোষ, স্কুলের অন্যতম প্রতিষ্ঠাতা শমীক বন্দ্যোপাধ্যায়, চিত্র পরিচালক ও প্রাক্তন ছাত্র সন্দীপ রায় এবং প্রাক্তন শিক্ষক দীপঙ্কর সরকার। অনুষ্ঠানে রবীন্দ্রসঙ্গীত এবং জ্যোতিরিন্দ্র মৈত্রের গান পরিবেশন করে পাঠভবনের ছাত্রছাত্রীরা।
জন্মদিনে
নিজেকে তিনি উৎসর্গ করেছিলেন শ্রীঅরবিন্দের আদর্শে কাজের মধ্যে। এই আদর্শ রূপায়ণের জন্য জয়া মিত্র দক্ষিণ কলকাতায় স্থাপন করেছিলেন একটি বিদ্যালয়, শিল্প গ্যালারি এবং নারীশক্তির উন্মেষের জন্য শক্তি সেন্টার। শিল্প-সংস্কৃতিতে তাঁর আগ্রহ ছিল অসীম। এই কারণেই তাঁর আহ্বানে রাণীকুঠির শ্রীঅরবিন্দ আশ্রমে বিভিন্ন সময়ে এসেছেন পণ্ডিত বিরজু মহারাজ, রবিশঙ্কর, পণ্ডিত যশরাজ, পণ্ডিত হরিপ্রসাদ চৌরাশিয়া অথবা উস্তাদ আমজাদ আলি খানের মতো শিল্পী। শ্রীঅরবিন্দ কলকাতার যে সব বাড়িতে থেকেছেন, সেগুলি শনাক্তকরণে ওঁর উদ্যোগ ছিল প্রশংসনীয়। আলিপুর বোমার মামলার বেশ কিছু নথি তাঁরই উদ্যোগে উদ্ধার হয়েছিল। তাঁর ৮৪তম জন্মদিনের অনুষ্ঠানটি হল ২ ফেব্রুয়ারি বিকেল সাড়ে পাঁচটায় শ্রীঅরবিন্দ ইনস্টিটিউট অব কালচারের উদ্যোগে। রিজেন্ট পার্কের লক্ষ্মী হাউসে এই অনুষ্ঠানে বললেন বিশ্বনাথ রায়। সরোদ শোনালেন আয়ান আলি বঙ্গাস।
ফ্রেমবন্দি
পেশায় তিনি সরকারি আমলা। তবু সরকারি ফাইলে কলম ঘষার ফাঁকে আশপাশের বিভিন্ন মুহূর্ত স্টিল ক্যামেরায় ফ্রেমবন্দি করতে পছন্দ করেন আইএএস অফিসার অত্রি ভট্টাচার্য। পেশাগত কারণে এখনও পর্যন্ত চারটি মহাদেশের প্রায় ৪০টি দেশ ঘুরে ফেলেছেন রাজ্যের প্রাক্তন স্বরাষ্ট্রসচিব এবং অধুনা ক্রেতাসুরক্ষা দফতরের প্রধান সচিব অত্রিবাবু। সেই সব দেশের দেখা-না-দেখা অনেক কিছুই তিনি ফ্রেমবন্দি করেছেন প্রায় দু’দশক ধরে। এ বার সেগুলির মধ্যে থেকে বাছাই করা ছবি প্রদর্শনীর মাধ্যমে সাধারণের সামনে তুলে ধরতে চলেছেন তিনি। আইসিসিআর-এ ১৩-১৬ ফেব্রুয়ারি চলবে এই প্রদর্শনী। অত্রিবাবুর কথায়, ‘‘এত দিন শুধুমাত্র নিজের জন্য ছবি তুলেছি।
এখন অন্যদের পছন্দমতো ছবি তোলা শিখতে চাইছি। এটা তার প্রথম পদক্ষেপ।’’
মুসলিম মহিলা
শেফালিকা বসুর বাবা জগদীশচন্দ্র সরকার ছিলেন কলকাতার প্রথম স্থায়ী নগর স্থপতি। স্বামী রবীন্দ্রনাথ বসু বর্ধমান জেলার মধ্যে ম্যাট্রিকে প্রথম স্থানাধিকারী, পরবর্তীতে সরকারি বহু গুরুত্বপূর্ণ পদে ছিলেন। শেফালিকা অল্প বয়সে বৈবাহিক সূত্রে আবদ্ধ হওয়ায় প্রথাগত শিক্ষা সম্ভব হয়নি। তবে লাইব্রেরি থেকে আনা নিত্য নতুন বই, সঙ্গে বাড়িতে নিয়মিত আসা পত্রিকা পড়তেন। তাঁর ছোট ছেলে স্বপন বসুর উদ্যোগে ১৬ ফেব্রুয়ারি বিকেল ৫টায় ‘শেফালিকা বসু স্মারক বক্তৃতা’-র আয়োজন বঙ্গীয় সাহিত্য পরিষৎ সভাকক্ষে। ‘ব্যবহারিক বাস্তবতায় এদেশের মুসলিম মহিলা’ বিষয়ে বলবেন সুরেন্দ্রনাথ কলেজ ফর উইমেন-এর বাংলার অধ্যাপিকা আফরোজা খাতুন। আফরোজা মুর্শিদাবাদ ডোমকলের প্রত্যন্ত গ্রাম মেহেদিপাড়ায় বেড়ে ওঠায় প্রত্যক্ষ করেছেন মেয়েজীবনের বৈচিত্র। তাঁর বক্তৃতায় আসবে তালাক, হিল্লা বা হালালা বিবাহ, বহুবিবাহ, কন্যা সন্তানের অধিকার-সহ নানা প্রসঙ্গ।
তিতাস
‘‘তিতাস’ পূর্ববাংলার একটা খণ্ডজীবন... এর মধ্যে আছে প্রচুর নাটকীয় উপাদান, আছে দর্শনধারী ঘটনাবলী, আছে শ্রোতব্য বহু প্রাচীন সংগীতের টুকরো; সব মিলিয়ে একটা অনাবিল আনন্দ ও অভিজ্ঞতার সৃষ্টি করা যায়, আমার মনে হয়েছিল, তাই এটা করছি।’’— সত্তর দশকের প্রথম দিকে ‘তিতাস একটি নদীর নাম’ নির্মাণকালে এক সাক্ষাৎকারে জানিয়েছিলেন ঋত্বিককুমার ঘটক (নভেম্বর ১৯২৫ - ফেব্রুয়ারি ১৯৭৬)। তাঁর এই প্রয়াণ মাসেই ‘তিতাস’-এর বিশেষ প্রদর্শনের আয়োজন আলিয়াঁস ফ্রঁসেজ-এ, ১৪ ফেব্রুয়ারি সন্ধে ৬টা ১৫-য়। রেস্টোর্ড ভার্শন দেখানো হবে ছবিটির, আর তা নিয়ে বলবেন অভীক মজুমদার। আলিয়াঁস-এর সঙ্গে যৌথ উদ্যোগে ‘দৃশ্য’, ‘কালচার মঙ্কস’, ‘তাঁতঘর ফিল্মস’।
রেকর্ডের পোশাক
গ্রামোফোন রেকর্ড বাঙালি সংস্কৃতির একটি বিশেষ দিকচিহ্ন। রেকর্ড মানে তো শুধু গান নয়, বিশ শতক জুড়ে রেকর্ডগুলি বিচিত্র সুন্দর প্রচ্ছদ শোভিত হয়ে প্রকাশিত হত। কিন্তু সেই সব দৃষ্টিনন্দন রেকর্ড আভরণের কোনও ইতিহাস আজ পর্যন্ত লেখা হয়নি। এরই নানা কথা নিয়ে গড়ে উঠেছে কৃষ্ণজিৎ সেনগুপ্তর বই রেকর্ডের পোশাক, যার মধ্যে সঙ্কলিত হয়েছে শতাধিক রেকর্ডের প্রচ্ছদ (রঙিন ও সাদাকালো মিলিয়ে ১০৯টি রেকর্ড কভার ও বেশ কিছু অলঙ্করণ) ও রেকর্ডের প্রচ্ছদশিল্পীদের অন্তরঙ্গ আলাপচারী। সেই বইয়েরই প্রকাশ ১৯ ফেব্রুয়ারি সন্ধে ৬টায় অবনীন্দ্র সভাগৃহে ‘বাঙালির রেকর্ডসজ্জা’ শীর্ষক অনুষ্ঠানে। মুখ্য আলোচক দেবদত্ত গুপ্ত। কৃষ্ণজিৎ সেনগুপ্ত সুনির্বাচিত রেকর্ড কভার দেখিয়ে তার নান্দনিকতা বিষয়ে আলোচনা করবেন। বইটি প্রকাশ করবেন বিখ্যাত রেকর্ড-কভার শিল্পী অমর পাল। অনুষ্ঠানটি সঞ্চালনা ও প্রাক্কথকের ভূমিকায় থাকবেন শ্রীকান্ত আচার্য। বইয়ের প্রকাশনা ও সমগ্র অনুষ্ঠানটির আয়োজক ‘উদ্ভাস।’ সঙ্গে অমর পাল অঙ্কিত প্রচ্ছদ।
নায়িকা সংবাদ
‘‘কোনও সময় যাতে অভিনেতার— বিশেষ করে প্রায় কিশোরী/ শিশু অভিনেতার প্রত্যয় বা সেল্ফ-এসটিম কোনও ভাবে চলে না যায় বা নষ্ট না হয়। সেই দিকে খুব খেয়াল ছিল। এবং আমাদের সঙ্গে ব্যবহার করতেন বা কথা বলতেন যেন আমরা তাঁর সমবয়সি।’’ অপর্ণা সেন এক ভাষণে বলছিলেন সত্যজিৎ রায় সম্পর্কে, তাঁর ছবির অভিনেত্রী হিসেবে অপর্ণাকে সে সন্ধ্যায় সম্মাননা জ্ঞাপন করা হয়েছিল ‘এখন সত্যজিৎ’ পত্রিকার (সম্পাদক: সোমনাথ রায়) তরফ থেকে। এই বইমেলায় বেরলো সে পত্রিকা-র বিশেষ সংখ্যা: ‘নায়িকা সংবাদ’, এই ভাষণটি যাতে সঙ্কলিত। সত্যজিতের ছবির অভিনেত্রীদের নিয়ে তৈরি এই সংখ্যাটিতে তাঁদের সাক্ষাৎকার-আত্মকথনের সঙ্গে আছে তাঁদের নিয়ে নানা রচনাও। করুণা বন্দ্যোপাধ্যায়, শর্মিলা, মাধবী, সিমি, মমতাশঙ্করের সঙ্গে পার্শ্ব অভিনেত্রী পারমিতা চৌধুরী কৃষ্ণা বসু কণিকা মজুমদার সম্পর্কেও জানতে পারবেন পাঠক। এমনকি সত্যজিতের অভিনয় করানোর পদ্ধতি নিয়েও বলেছেন প্রত্যক্ষদর্শী সন্দীপ রায়, ‘‘একটা অদ্ভুত আনক্যানি ব্যাপার ছিল (বাবার মধ্যে)— এ কী করতে পারে আমি জানি— এটা বাবা খুব সহজেই বুঝে নিতেন। ...আর যদি বুঝতেন অভিনেত্রী (বা অভিনেতা) আর একটু চ্যালেঞ্জ নিতে পারবেন, তাঁকে আর একটু কমপ্লেক্স ব্যাপার দিতেন।... ফারাক একটু থাকত আনকোরা এবং অভিজ্ঞ অভিনেত্রীর মধ্যে।’’
সমীর বিশ্বাসের অপ্রকাশিত ছবির সম্ভার
নয়নচাঁদ দত্ত স্ট্রিটের একটি বাড়ির ছবি আঁকার পর কয়েক দিন বাদে ফিরে গিয়ে দেখেন বাড়িটি আর নেই। তাঁর চোখের সামনে এলগিন রোড পাল্টে গিয়েছে, বালিগঞ্জ সার্কুলার রোড পাল্টে গিয়েছে, চিৎপুর নিয়ে বছরের পর বছর কাজ করে দেখেছেন সব কী ভাবে বদলে গিয়েছে। ঐতিহ্য ধ্বংস নিয়ে খুবই সরব ছিলেন শিল্পী সমীর বিশ্বাস। নিজে যে হেতু অলিতে গলিতে ঘুরে ছবিতে ধরে রেখেছেন কলকাতার অতীত বর্তমান, তাই তাঁর বড় প্রাণে বাজত পুরনো বাড়ি ভেঙে বহুতল উঠলে। আসলে কলকাতার সঙ্গে তাঁর নাম ওতপ্রোত। কলকাতা নিয়ে অনেকেই ছবি এঁকেছেন, কিন্তু সবার মধ্যে তাঁকে আলাদা করে চিনতে অসুবিধা হয় না। এক সময় বইমেলায় তাঁর ছবি ছিল অন্যতম আকর্ষণ। ১৯৫২ সালে জন্ম, সরকারি আর্ট কলেজ থেকে পাশ করে সংবাদপত্রের দফতরে চাকরি করেছেন। পাশাপাশি কলকাতার ছবি আঁকা চলেছে। প্রথম ছবির অ্যালবাম প্রকাশিত হয় ১৯৮২ সালে। তার পর একে একে অনেক অ্যালবাম। তবে শুধু কলকাতা নয়, এঁকেছেন উত্তরবঙ্গ মুর্শিদাবাদ বর্ধমানের ছবিও। রেখাচিত্রের পাশাপাশি জলরং। দীর্ঘ অসুস্থতার পর প্রয়াত হন ২০১৪ সালে। স্ত্রী মধুমিতা বিশ্বাসের নিরন্তর চেষ্টায় তাঁর ছবি আজও নিয়মিতই পাওয়া যায় বিভিন্ন বিপণিতে। এ বার তাঁরই উদ্যোগে প্রকাশিত হল সমীর বিশ্বাসের ‘রিমেমবারিং কলকাতা’ নামে জলরঙে আঁকা অপ্রকাশিত তিনটি ছবি। শিল্পীর প্রিয় বিষয় ভিক্টোরিয়া মেমোরিয়ালের সঙ্গে আছে হুগলি নদী আর রেড রোড। এ ছাড়াও প্রকাশ পেয়েছে বড় আকারে মার্বেল প্যালেসের একটি চমৎকার রঙিন ছবি।