কলকাতায় রাতের পাহারা আরও জোরদার
করতে উদ্যোগী ট্র্যাফিক পুলিশ। রাতে দায়িত্বপ্রাপ্ত ট্র্যাফিক আধিকারিকদের জন্য
একটি নির্দেশিকা (এসওপি) জারি করা হয়েছে। যে নিয়মগুলি আগে থেকেই প্রচলিত ছিল,
সেগুলি নির্দেশিকার মাধ্যমে আবার মনে করিয়ে দেওয়া হল আধিকারিকদের। কিন্তু প্রশ্ন
উঠছে, নতুন করে এই সমস্ত নির্দেশিকা এবং কর্মপদ্ধতি মনে করিয়ে দিতে হচ্ছে কেন
বাহিনীকে? আরজি করের ঘটনার পর উদ্ভুত পরিস্থিতিতে ট্র্যাফিক পুলিশের এই
নির্দেশিকার আলাদা তাৎপর্য রয়েছে বলে মনে করছেন অনেকে।
রাত-পাহারা নিয়ে ট্র্যাফিক পুলিশের
নির্দেশিকায় রাতে নাকাতল্লাশিতে জোর দেওয়া হয়েছে। প্রত্যেক আধিকারিকের
শরীরে ক্যামেরা লাগানো থাকে। সেই ক্যামেরায় রাতের প্রতি মুহূর্ত যাতে
রেকর্ড হয়, তা নিশ্চিত করতে বলা হয়েছে। কাজের সময়ে আধিকারিকদের সব সময় সজাগ থাকতে
বলা হয়েছে। কোনও রকম সন্দেহজনক ঘটনা নজরে পড়লেই প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ করবেন তাঁরা। অথবা প্রয়োজন মনে করলে খবর দেবেন লালবাজারের কন্ট্রোল রুমে।
ট্র্যাফিক পুলিশের নির্দেশিকায় বলা
হয়েছে—
- রাতে কাজের সময়ে নির্দিষ্ট স্থানে
উপস্থিত থাকতে হবে আধিকারিকদের। এলাকা পাহারা দিতে হবে।
- এক জন আধিকারিক রাতে গাড়িগুলিতে
নাকাতল্লাশির দায়িত্বে থাকবেন। ট্র্যাফিক নিয়ম মেনে গাড়ি চালানো হচ্ছে কি না, গতি
নিয়ন্ত্রণে থাকছে কি না, কেউ হেলমেট ছাড়া গাড়ি চালাচ্ছেন কি না এবং কোনও গাড়ির
চালক মত্ত অবস্থায় রয়েছেন কি না, তা দেখবেন ওই আধিকারিক।
- আর এক আধিকারিক নিজের এলাকায়
বাহিনী নিয়ে টহল দেবেন। হাসপাতাল, সরকারি প্রতিষ্ঠান, বহুতল, শপিং মলের মতো
গুরুত্বপূর্ণ এলাকায় বিশেষ নজর রাখতে হবে।
মহিলা এবং শিশুদের সুরক্ষাব্যবস্থা সঠিক রয়েছে কি না, তা-ও নজরে রাখতে হবে।
- কোথাও কোনও সন্দেহজনক ঘটনা দেখলেই
ট্র্যাফিক কন্ট্রোল রুমে খবর দেবেন আধিকারিকেরা। প্রয়োজনে খবর দিতে হবে সংশ্লিষ্ট
বিভাগের ডেপুটি কমিশনারকেও।
- কোনও অপরাধের ঘটনা দেখলে দ্রুত
পদক্ষেপ করতে হবে রাত-পাহারার দায়িত্বে থাকা আধিকারিকদের।
- এই সমস্ত আধিকারিকদের নাম, কাজের
খতিয়ান প্রতি দিন নথিভুক্ত করে লালবাজারের মূল কন্ট্রোল রুমে পাঠাতে হবে।
- ট্র্যাফিক পুলিশের ওসি-কে প্রতি
দিন কাজ সম্বন্ধে রাতের দায়িত্বে থাকা আধিকারিকদের বোঝাতে হবে এবং তাঁদের পরিচালনা
করতে হবে।
- রাতের রাস্তায় যে সমস্ত
খোঁড়াখুঁড়ির কাজ চলে, তার দিকেও সর্বদা নজর দিতে হবে ট্র্যাফিক পুলিশের আধিকারিকদের।
কোথাও কোনও সমস্যা হলে উপরমহলে জানাতে হবে।
- রাতের এই ট্র্যাফিক আধিকারিকেরা
‘বডি ক্যামেরা’ ব্যবহার করবেন। অর্থাৎ, তাঁদের শরীরের সঙ্গে ক্যামেরা লাগানো
থাকবে। তা প্রতি মুহূর্তে চালু রাখতে হবে এবং সব ঘটনা তাতে রেকর্ড করতে হবে।
- রাতের দায়িত্বপ্রাপ্ত আধিকারিকেরা
ঠিকমতো কাজ করছেন কি না, সজাগ রয়েছেন কি না, তার উপর নজরদারি চালাবেন এসি বা
ইনস্পেক্টর পদমর্যাদার আধিকারিক।
- প্রত্যেক আধিকারিককে নির্দিষ্ট
অস্ত্র সঙ্গে রাখতে হবে।
উল্লেখ্য, আরজি কর হাসপাতালে গত ৯
অগস্ট ভোরে এক মহিলা চিকিৎসককে ধর্ষণ এবং খুনের ঘটনা ঘটেছে। যা নিয়ে রাজ্য এখন
উত্তাল। এই ঘটনার পর রাতে শহরের নিরাপত্তা ব্যবস্থা আরও এক বার প্রশ্নের মুখে
পড়েছে। সমালোচিত হয়েছে পুলিশ। এই পরিস্থিতিতে ট্র্যাফিক পুলিশের তরফে রাতের
নিরাপত্তার কড়াকড়িতে জোর দেওয়া হচ্ছে। নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে এবং অপ্রীতিকর
ঘটনা এড়াতে পুলিশ নতুন করে তৎপর হয়ে উঠেছে বলে মনে করছেন অনেকে।