Durga Puja 2022

থিম জুড়ে পুজোর গানের আবেগের ছোঁয়া

১৯৫১ সালে সলিল চৌধুরীর সুরে সুকান্ত ভট্টাচার্যের পদ্যে হেমন্ত মুখোপাধায়ের ‘রানার চলেছে’! ১৯৫৮-এ আবার লতা মঙ্গেশকরের কণ্ঠে হেমন্তের সুর— ‘প্রেম একবারই এসেছিল নীরবে’।

Advertisement

ঋজু বসু

কলকাতা শেষ আপডেট: ১৯ সেপ্টেম্বর ২০২২ ০৬:১৬
Share:

প্রতীকী ছবি।

এ কাল-সে কালের গানপাগলদের অনেকের সংগ্রহেই রয়েছে পুজোর গন্ধমাখা সেই সব ‘শারদ অর্ঘ্য’। পুজোর গানের সোনার দিনে এ বার মশগুল দক্ষিণ কলকাতার একটি পুজোও।

Advertisement

অনেকের কাছে পুজো মানে সেই এক ফালি বইয়ে নতুন গানের লিরিক। ১৯৫১ সালে সলিল চৌধুরীর সুরে সুকান্ত ভট্টাচার্যের পদ্যে হেমন্ত মুখোপাধায়ের ‘রানার চলেছে’! ১৯৫৮-এ আবার লতা মঙ্গেশকরের কণ্ঠে হেমন্তের সুর— ‘প্রেম একবারই এসেছিল নীরবে’। ১৯৫৭-এ মানবেন্দ্র মুখোপাধ্যায়ের ‘আমি এত যে তোমায় ভালবেসেছি’, ১৯৫৬-এ শচীনকত্তার ‘মন দিল না বধূ’র থেকে কম আদরের নয় ১৯৭৩-এ কিশোরের ‘নয়ন সরসী কেন’ বা ১৯৭৮-এ আরতি মুখোপাধ্যায়ের ‘এই মোম জোছনায় অঙ্গ ভিজিয়ে’! কিছু গান শুনলে আজকের প্রবীণ শ্রোতাও তরুণ হয়ে যান। অথচ সে গান হয়তো তাঁর জন্মেরও আগে বাঁধা হয়েছিল। পুজোর নতুন রেকর্ডের সঙ্গে প্রকাশিত গানের বই ‘শারদ অর্ঘ্য’, বছরের যে কোনও সময় মেলে ধরে আলোয় ভাসা মণ্ডপ।

আজকের পুজোয় গানের বদলে শুধু থিম মিউজ়িক। তবে থিমের ম্যাজিকে ২০২২ সালে ‘পুজোর গান’ ফিরিয়ে আনছে দক্ষিণ কলকাতার সমাজসেবী সঙ্ঘ। পুজোকর্তা অরিজিৎ মৈত্র বলছিলেন, “এ বার আমাদের থিমে এই পুজো শুরুর প্রথম বছর ১৯৪৬-এর পরিবেশ ফিরিয়ে আনাই লক্ষ্য! প্রথম বছর স্থানীয় একটি বাড়ির দালানে পুজোটা হয়েছিল। এখন সেই বাড়িটা ধুলোয় মিশে ফ্ল্যাটবাড়ি উঠেছে। তখনও কিন্তু পুজোর গানের রমরমা কম ছিল না।”

Advertisement

পুজোর গানের শেষ পর্বের তিন মহারথীকে দিয়ে গান গাইয়েছে সমাজসেবী— অমিত কুমার, কুমার শানু, অলকা যাজ্ঞিকরা গান রেকর্ড করেন মুম্বইয়ে। সুরকার জুটি শিলাদিত্য-রাজ। শিলাদিত্য বলছিলেন, “বাঙালির পুজোর শেষ হিট গানে শানুদাও ছিলেন। অমিতদা, অলকাজি, শানুদা মুম্বইয়ে থাকলেও মনেপ্রাণে বাঙালি বা বাংলার।” ইউটিউবে ‘জুক বক্সে’ তিনটি গান সদ্য প্রকাশিত হয়েছে।

রেকর্ডিং শেষে অমিত কুমারের মনে পড়ছে তাঁর একেবারে যুবাবয়সের পুজোর গান ‘মনে মনে কত দিন’ আর ‘জিনিসের দাম বেড়েছে, মানুষের দাম কমেছে’র কথা। প্রত্যাশা ছাপিয়ে হিট করল আনকোরা স্বর। বাড়তি রেকর্ড ছাপতে হল। মিউজ়িক ইন্ডাস্ট্রির বিজয়কিশোর দুবে উচ্ছ্বাসে ভেসে বলেন, ‘এক চুহা (ইঁদুর) নে বাজি মার দিয়া’! এ বার অমিতের গান, ‘এসে গেছি সেই আমি’, শানুর ‘এ ভাবেই গানে গানে’ এবং অলকার ‘অজানা সেই দু’চোখে’!

অলকা উচ্ছ্বসিত— ‘‘পুজোর গান গাইতে গাইতে চোখ বুজে মনে হয়, আমার ছোটবেলার কলকাতায় ফিরে গিয়েছি!” শানুর বিশ্বাস, “সবাই যত্ন নিলে পুজোর গান এখনও হিট করবে।”

ইউনেস্কোর শোভাযাত্রায় সদ্য জিৎ গঙ্গোপাধ্যায়ের সুরে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের লেখা পুজোর ‘থিম গান’ই বেজেছে। এ বারও কেষ্টপুরের প্রফুল্লকাননে সোনু সুদ বা ধনদেবী খন্না রোডের পুজোয় (পূর্ব কলকাতা সর্বজনীন) প্রবীণ প্রতুল মুখোপাধ্যায়েরা গান গেয়েছেন। কিন্তু পুজোর জন্য নতুন গানের আমেজই আলাদা। পুজোকর্তা অরিজিতের ইচ্ছে, বছর বছর পুজোর গান তৈরির ধারাটা এগিয়ে নিয়ে যাবেন। নতুন শিল্পীর নতুন গান! কিন্তু তাতে মিশে থাকবে কিশোর-আরতি-নির্মলা বা লতা-সন্ধ্যা-হেমন্ত যুগের ছোঁয়া।

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement