ঊর্ধ্বতনের কাছে, বিশেষ করে বেসরকারি সংস্থার ঊর্ধ্বতনের কাছে ছুটি চাওয়া মানে যেন বাঘের খাঁচায় হাত ঢোকানো। অন্তত তেমনটাই মনে করেন অনেক কর্মী।
ছুটি চাইতে গেলে অনেক সময় নিরাশ হয়ে ফিরে আসতে হয় তাঁদের। তবে অনেক কর্মীই নিজের অথবা গুরুজনদের শরীর খারাপের অজুহাত দিয়ে দিব্যি ছুটি বাগিয়ে নেন দিনের পর দিন।
আর ওই ধরনের কর্মীদের নিয়েই নাকি তিতিবিরক্ত জার্মানির বহু সংস্থা। ওই কর্মীদের শিক্ষা দিতে অভিনব এক পদ্ধতি বার করেছে ওই সব সংস্থা। ছুটি নেওয়া কর্মীদের পিছনে নাকি রীতিমতো গোয়েন্দা ছেড়ে দিচ্ছে তারা। অন্তত তেমনটাই উঠে এসেছে একটি রিপোর্টে।
চিনা সংবাদমাধ্যম ‘সাউথ চায়না মর্নিং পোস্ট’-এর এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, কর্মীদের ছুটি নেওয়া নিয়ে জার্মানির অনেক সংস্থার কপালে চিন্তার ভাঁজ পড়েছে। কারণ, ওই সব সংস্থার অনেক কর্মীই নাকি ঘন ঘন ‘অসুস্থ’ হয়ে পড়ছেন।
অনেক ক্ষেত্রে ছুটির পরিমাণ লাগামছাড়া হয়ে যাচ্ছে। কারণ, অসুস্থতা দেখিয়ে ৪০ থেকে ১০০ দিন পর্যন্তও ছুটি নিচ্ছেন কেউ কেউ।
‘অর্গানাইজ়েশন ফর ইকোনমিক কো-অপারেশন অ্যান্ড ডেভেলপমেন্ট (ওইসিডি)’ দ্বারা সংগৃহীত তথ্য অনুযায়ী, ‘অসুস্থতা’র কারণে ২০২৩ সালে জার্মানরা গড়ে তাঁদের কাজের সময়ের ৬.৮ শতাংশ ছুটি নিয়ে কাটিয়েছেন।
এই দিক থেকে ফ্রান্স, ইটালি এবং স্পেনের মতো ইউরোপীয় ইউনিয়নের অন্য দেশগুলির নিরিখে জার্মানির অবস্থা সবচেয়ে খারাপ। সেই প্রবণতার কারণে উৎপাদন মন্দা এবং রফতানির দিক থেকে দুর্বল হয়ে ইতিমধ্যেই ধুঁকছে, এমন সংস্থাগুলির উপর আরও চাপ সৃষ্টি হচ্ছে।
এই পরিস্থিতিতে কর্মীরা সত্যিই ন্যায্য কারণে ছুটি নিচ্ছেন, না মিথ্যা অজুহাতে ছুটি নিচ্ছেন তা জানতে তৎপর হয়ে উঠেছে জার্মান সংস্থাগুলি। আর সে কারণেই নাকি ছুটি নেওয়া কর্মীদের পিছনে গোয়েন্দা পাঠাচ্ছে তারা।
ছুটি নেওয়ার আসল কারণ জানতে মূলত বেসরকারি গোয়েন্দাদের উপরেই ভরসা করছে সংস্থাগুলি। মিথ্যা বলে ছুটি নেওয়া কর্মীদের হাতেনাতে ধরিয়ে দিতে পারলেই মিলছে মোটা টাকা।
মার্কাস লেন্টজ় জার্মানির একজন নাম করা গোয়েন্দা। সংবাদ সংস্থা এএফপিকে তিনি জানিয়েছেন, বিভিন্ন সংস্থার কাছ থেকে তাদের কর্মীদের উপর নজরদারি চালানোর প্রস্তাব পেয়েছেন তিনি।
তিনি জানিয়েছেন, সংস্থাগুলির দাবি মূলত একটাই। কোনও কর্মী মিথ্যা অজুহাত দিয়ে ছুটি নিচ্ছেন কি না তা খুঁজে বার করা।
যদি কোনও কর্মী সত্যিই অসুস্থ হয়ে পড়েন বা ন্যায্য কারণে ছুটি নেন, তা হলে ঠিক আছে। কিন্তু যদি মিথ্যা হয়, তা হলে সঙ্গে সঙ্গে প্রমাণ সমেত তা সংস্থাগুলির হাতে তুলে দেন সে দেশের ফেলুদা, ব্যোমকেশ বক্সীরা।
তবে সংস্থার ফাঁকিবাজদের খুঁজে বার করতে গোয়েন্দারা ঠিক কত টাকা নিচ্ছেন, তা স্পষ্ট নয়। গোপনীয়তা বজায় থাকছে না বলে ইতিমধ্যেই বিষয়টি নিয়ে উদ্বেগপ্রকাশ করেছেন জার্মান কর্মীদের একাংশ।
এক দিকে জার্মানির কর্মীদের যখন এ রকম হাল বলে জানা গিয়েছে, সেখানে চিনের কয়েকটি সংস্থা মনখারাপ হলেও কর্মীদের ছুটি দিচ্ছে। গত বছরই চিনের এক সংস্থা প্যাং ডং লাইয়ের কর্ণধার ইউ ডংলাই ঘোষণা করেন যে, তাদের কর্মীরা মনখারাপ হলেও ছুটি নিতে পারেন।
ডংলাই ঘোষণা করেছিলেন মন ভাল না থাকলে তাঁর কর্মীরা ১০ দিন পর্যন্ত ছুটি নিতে পারেন। তিনি বলেছিলেন, ‘‘এমন অনেক সময় আসে, যখন আমাদের মনখারাপ হয়, তাই মন ভাল না থাকলে অফিসে আসার দরকার নেই।’’