শুক্রবার প্রকাশিত আনন্দবাজার অনলাইনের সেই প্রতিবেদন।
পার্থ চট্টোপাধ্যায়কে ইডি গ্রেফতার করার পর থেকেই তাঁর পোষ্যেরা জল-খাবার পাচ্ছে না, তাদের দেখাশোনা করার লোক আসছে না বলে অভিযোগ উঠেছিল। গত শুক্রবার আনন্দবাজার অনলাইন প্রথম এ বিষয়ে আলোকপাত করে। অভিনেত্রী শ্রীলেখা মিত্র ফেসবুকে আনন্দবাজার অনলাইনের প্রতিবেদন শেয়ার করে পোষ্যদের নিয়ে একটি পোস্ট করেন। একাধিক পশুপ্রেমী সংগঠনও পুলিশের দ্বারস্থ হয়।
এই প্রেক্ষিতেই পার্থের পোষ্যদের অবস্থা দেখতে টালিগঞ্জের ডায়মন্ড সিটি আবাসনে যায় পুলিশ। পোষ্যদের অবস্থা ভিডিয়ো করার পাশাপাশি তাদের দেখাশোনার দায়িত্বে থাকা ব্যক্তির সঙ্গে কথাও বলে তারা। এর পরে সবটাই লালবাজারের শীর্ষ কর্তাদের জানানো হয়েছে বলে পুলিশ সূত্রের খবর।
জানা গিয়েছে, বিষয়টি নিয়ে শোরগোল পড়তে পুলিশ কমিশনার নিজে স্থানীয় থানাকে ওই আবাসনে যেতে বলেন। সেই মতো রবিবার হরিদেবপুর থানার ওসি ওই আবাসনে যান। পুলিশের দাবি, ইডি-র হেফাজতে থাকা পার্থের ঘনিষ্ঠ অর্পিতা মুখোপাধ্যায়ের নামে ওই আবাসনে তিনটি ফ্ল্যাট রয়েছে। ২ নম্বর টাওয়ারে একটি ফ্ল্যাটের নম্বর ১এ। এ ছাড়াও রয়েছে ১৮ডি এবং ১৮ই ফ্ল্যাট দু’টি। শেষের দু'টি ফ্ল্যাট একসঙ্গে জুড়ে রাখা হত কুকুর। ওসি গিয়ে দেখেন, ১৮ডি এবং ১৮ই ফ্ল্যাট দু’টিতে মোট আটটি কুকুর রয়েছে। তার মধ্যে দু’টি ল্যাব্রাডর, একটি করে পাগ, ফ্রেঞ্চ বুলডগ, ইংলিশ বুলডগ, রটওয়াইলার, গোল্ডেন রিট্রিভার এবং বিগল। ফ্ল্যাট এবং ফ্ল্যাটের ছাদ মিলিয়ে রাখা হয় তাদের।
পার্থর ফ্ল্যাটে সারমেয়দের দেখতে গেল পুলিশ। ছবি: কলকাতা পুলিশের ভিডিয়ো সূত্রে পাওয়া।
ফ্ল্যাটে উপস্থিত এক ব্যক্তির সঙ্গে কথা বলে পুলিশ জানতে পারে, কুকুরগুলিকে দেখাশোনা করার জন্য সর্বক্ষণের এক ব্যক্তি রয়েছেন। এ ছাড়াও দু’জন আসেন কুকুরগুলিকে প্রশিক্ষণ দেওয়ার জন্য। কিন্তু পার্থ গ্রেফতার হওয়ার পর থেকে প্রথম দু'দিন তাঁদের দেখা যায়নি। পরে তাঁরা নিজেরাই ফের আসেন। পোষ্যদের দেখাশোনার দায়িত্বে থাকা ব্যক্তি পুলিশকে জানিয়েছেন, দুই প্রশিক্ষক প্রথমটায় ভয়ে না আসার কথা জানালেও পরে প্রাণীগুলোর কী হবে ভেবে আসতে শুরু করেছেন। কুকুরগুলির জন্য দু'দিন খাবার আসত ওই ফ্ল্যাটে। এখন থেকে তাদের খাওয়ানোর দায়িত্ব পার্থের এক আত্মীয় নিয়েছেন বলে পুলিশ জেনেছে।
এই বিষয়ে খোঁজখবর নিতে শুরু করা এক পশুপ্রেমী সংগঠনের তরফে প্রান্তিক চট্টোপাধ্যায় বলেন, “এ বার আশ্বস্ত লাগছে। যত দূর জানি, পার্থবাবু কুকুরগুলির লাইসেন্স করিয়ে রেখেছিলেন। তাঁর পরিবার থেকেই ওদের দায়িত্ব নেওয়া হচ্ছে, এটা ভাল ব্যাপার। কিছু হলে এই অবোলা প্রাণীগুলিকে ভুগতে হয়। আইনি লড়াই শেষে বহু ক্ষেত্রেই ওরা না পায় ভাল অভিভাবক, না পায় ভাল থাকার জায়গা। অনেক ক্ষেত্রেই বন্দি হয়ে থাকতে হয় কোনও পশু হাসপাতালে বা আশ্রয়স্থলে।” পশু চিকিৎসকেরা যদিও বলছেন, “আপাতত সব ঠিক থাকলেও পশুপ্রেমী সংগঠনগুলির উচিত মাঝেমধ্যে ওদের খোঁজ নেওয়া। মনিবের দেখা না পেয়ে ওরা কেমন থাকে আর প্রতিপালনে যাতে কোনও সমস্যা না হয়, সেটা অবশ্যই দেখা দরকার।"