Partha Chatterjee

Partha Chatterjee: অর্পিতার সেই ফ্ল্যাটে অনাদরে বন্দি পার্থের লক্ষ লক্ষ টাকা দামের শখের সারমেয়রা

টালিগঞ্জের ওই আবাসনের এক তলায় অর্পিতার ফ্ল্যাট থেকে মিলেছে বিপুল টাকা। কিন্তু ১৯ তলার দিকে নজর নেই কারও। বন্দি না-মানুষরা।

Advertisement

পিনাকপাণি ঘোষ

কলকাতা শেষ আপডেট: ২৯ জুলাই ২০২২ ১৭:৫৩
Share:

সব মিলিয়ে ওই ফ্ল্যাটে থাকা কুকুরের দাম চার লাখ টাকার বেশিও হতে পারে। গ্রাফিক: শৌভিক দেবনাথ

টালিগঞ্জের ডায়মন্ড সিটি সাউথ আবাসনে অর্পিতা মুখোপাধ্যায়ের একটি ফ্ল্যাট থেকে উদ্ধার হয়েছে কোটি কোটি টাকা। কিন্তু ওই আবাসনেই অর্পিতার নামে থাকা একটি ফ্ল্যাটে বন্দি হয়ে রয়েছে অন্তত ন’টি উন্নত প্রজাতির সারমেয়। যাদের মোট দাম চার লাখ টাকারও বেশি।

Advertisement

অর্পিতার তত্ত্বাবধানে থাকলেও ওই সারমেয়গুলি রাজ্যের প্রাক্তন মন্ত্রী পার্থ চট্টোপাধ্যায়ের বলেই জানেন ওই আবাসনের বাসিন্দারা। উন্নত প্রজাতির ওই গৃহপালিত কুকুরগুলি কী ভাবে রয়েছে, কী খাচ্ছে, তা নিয়ে চিন্তা করার মতো অবস্থায় নেই ইডির হেফাজতে-থাকা প্রাক্তন মন্ত্রী বা তাঁর ‘ঘনিষ্ঠ’ অর্পিতা। যদিও গভীর ভাবে চিন্তিত আবাসনের পশুপ্রেমী বাসিন্দারা।

আবাসনের বাসিন্দাদের একাংশের বক্তব্য, ওই আবাসনের ১৯তলায় পাশাপাশি (১৮-ই এবং ১৮-ডি) দু’টি দু’কামরার ফ্ল্যাট রয়েছে অর্পিতার। যদিও মাঝের দেওয়াল ভেঙে দু’টি ফ্ল্যাটকে মিলিয়ে এক করে নেওয়া হয়েছিল। পাশের ফ্ল্যাটগুলির মাপ অনুযায়ী ১৯তলার ওই দু’টি ফ্ল্যাটের মোট আয়তন বড়জোর ১,৬০০ বর্গফুট। তার মধ্যেই রয়েছে অন্তত ন’টি সারমেয়। প্রতিবেশীদের বক্তব্য, ওই সারমেয়গুলির মধ্যে একটি রটওয়েলার, একটি ইংলিশ বুলডগ, একটি ফ্রেঞ্চ বুলডগ। তা ছাড়াও রয়েছে একটি করে পাগ এবং বিগ্‌ল প্রজাতির কুকুর। রয়েছে দু’টি করে ল্যাব্রাডর এবং গোল্ডেন রিট্রিভার।

Advertisement

১,৬০০ বর্গফুট এলাকায় একসঙ্গে ন’টি সারমেয়কে রাখা ঠিক কি না, তা নিয়ে আবাসনের বাসিন্দাদের মনে প্রশ্ন ছিল। যদিও মন্ত্রীর সারমেয়-শখ নিয়ে কেউ কখনও কিছু বলেননি। তবে কুকুরের প্রশিক্ষকরা যখন সেই সারমেয়গুলিকে নীচে নামাতেন, তখন প্রতিবেশীরা অবাক হয়ে দেখতেন। বেশি আকর্ষক ছিল রটওয়েলারটি। কুকুর ভালবাসেন, এমন অনেক প্রতিবেশীই এগিয়ে আসতেন তাকে আদর করতে। এখন তাঁদের উদ্বেগ সবচেয়ে বেশি। কারণ, গত প্রায় দু’মাস ধরে আবাসনের ওই নয় বাসিন্দা ফ্ল্যাটের বাইরে বেরোয়নি। যবে থেকে আদালতে পার্থর কুকুর এবং সম্পত্তি নিয়ে আলোচনা শুরু হয়েছে, তখন থেকে প্রশিক্ষকদেরও দেখা যায়নি। ফলে সারমেয়গুলিও আর নীচে নামতে পারে না। তবে কি ঘরেই যাবতীয় বর্জ্য ত্যাগ করছে তারা? করলেও তা সাফ করছে কে? ফ্ল্যাটের বাতানুকূল যন্ত্র চলছে তো? সারমেয়গুলি নিয়মিত খাবার পাচ্ছে তো? তা নিয়ে চিন্তিত আবাসনের বাসিন্দাদের একাংশ।

যে উদ্বেগ আরও বেড়েছে পার্থ এবং অর্পিতা গ্রেফতার হওয়ার পরে। তাঁদের কখনও সারমেয়দের যত্নআত্তি করতে দেখা যায়নি। কিন্তু আবাসনের বাসিন্দারা জানেন, তাঁরাই তো ছিলেন সারমেয়দের মালিক-মালকিন। আবাসনের ১৯তলারই এক বাসিন্দা আনন্দবাজার অনলাইনকে শুক্রবার বলেন, ‘‘কুকুরগুলোর চিৎকার শুনতে পাই। কিন্তু দেখতে পাই না। মন্ত্রীকে কখনও আসতে দেখিনি। কিন্তু এটা জানি যে, কুকুরগুলি ওঁরই। এখন ওই ফ্ল্যাট থেকে দুর্গন্ধ বার হচ্ছে। কিন্তু কোনও প্রশিক্ষক বা অন্য কেউ আসেন না। তবে বাইরে থেকে এসে কেউ কেউ কখনও সখনও দরজা খুলে খাবার দিয়ে যান।’’

একই কথা শোনা গেল আবাসনের এক নিরাপত্তারক্ষীর কাছেও। তাঁর কথায়, ‘‘বরাবরই বাইরে থেকে কুকুরের জন্য খাবার আসে। সেই নিয়ম এখনও চলছে। তবে প্রশিক্ষকরা আসেন না অনেক দিন। এর বেশি কিছু বলতে পারব না।’’

ডায়মন্ড সিটি সাউথ। এই আবাসনে অর্পিতার নামে রয়েছে বেশ কয়েকটি ফ্ল্যাট। ফাইল চিত্র

কুকুরগুলির বিষয়ে প্রশ্ন করায় আনন্দবাজার অনলাইনকে এক সারমেয় বিশেষজ্ঞ জানান, যে প্রজাতির কুকুর রয়েছে, সেগুলির প্রতিটিকেই অত্যন্ত যত্নে রাখতে হয়। দামও প্রচুর। ওই বিশেষজ্ঞ বলেন, ‘‘কলকাতার বাজারে একটা সাধারণ রটওয়েলারের দাম ৫০ থেকে ৬০ হাজার টাকা। সেটা ভাল জাতের হলে তার চারগুণ দামও হতে পারে। মানে দু’লাখ টাকার বেশি।’’ ইংলিশ বুলডগ কলকাতায় প্রায় দেখাই যায় না বলে জানিয়েছেন ওই বিশেষজ্ঞ। তিনি জানাচ্ছেন, রটওয়েলার সাধারণত পঞ্জাব থেকে আসে। দাম ৫০ হাজারের কম নয়। বাকিগুলির দামও ২৫ হাজার টাকার আশপাশে।

এই কুকুরগুলির কেমন যত্ন দরকার? ওই বিশেষজ্ঞ বলেন, ‘‘এতগুলি কুকুরকে ওইটুকু জায়গার মধ্যে রাখাই তো অন্যায়! পুরসভার নিয়ম আছে যে, কতটা এলাকায় কতগুলি কুকুর রাখা যাবে। আর এরা কেউ রাস্তায় বড় হওয়া কুকুর নয়। আবার বদ্ধ ঘরে থাকারও নয়। যে ভাবে তাদের রাখা হয়েছে বলে বলা হচ্ছে, তাতে বোঝা যাচ্ছে, কুকুরগুলির উপরে নির্মম অত্যাচার হচ্ছে।’’

পশু চিকিৎসকদের মতে, যে বদ্ধ পরিবেশে কুকুরগুলিকে রাখা হয়েছে, তাদের স্বাস্থ্যের জন্যও তা একেবারেই ভাল নয়। এক পশু চিকিৎসক বলেন, ‘‘ওই ভাবে থাকলে কুকুরগুলির ক্ষতি হওয়াই স্বাভাবিক। দেখতে হবে প্রয়োজনীয় এবং পর্যাপ্ত খাবার ওরা পাচ্ছে কি না। ওই ফ্ল্যাটে যথেষ্ট পরিমাণে জল মজুত রয়েছে কি না। যে পরিস্থিতিতে ওরা রয়েছে, তাতে চামড়ার অসুখ হওয়ার সম্ভাবনা খুব বেশি। যে ফ্ল্যাটে কুকুরগুলি রয়েছে, তার আশেপাশে যাঁরা থাকছেন, তাঁদের পক্ষেও এই পরিবেশ স্বাস্থ্যকর নয়।’’

উদ্বিগ্ন প্রতিবেশীরা চাইছেন আবাসন পরিচালকমণ্ডলীর তরফে সারমেয়গুলিকে নিয়ে কোনও উদ্যোগ নেওয়া হোক। তবে এখন গোটা আবাসন জুড়ে যে চাঞ্চল্যের পরিবেশ, তাতে কেউই প্রকাশ্যে মুখ খুলতে রাজি নন। ফলে ওই ন’টি সারমেয়র ভাগ্যে কী আছে, কেউ জানে না।

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement