ধরপাকড়: রাস্তায় বেরিয়েছেন কেন? জানতে চাইছেন পুলিশকর্মীরা। বৃহস্পতিবার, উল্টোডাঙায়। ছবি: সুমন বল্লভ
লকডাউনে লোককে ঘরবন্দি রাখতে এ বার কড়া আইনি দাওয়াইয়ের পথে হাঁটছে লালবাজার। অনুরোধ-পরামর্শের পাশাপাশি বৃহস্পতিবার থেকেই ধরপাকড়ের পরিমাণ বেড়েছে। এ দিন জরুরি প্রয়োজন ছাড়া পথে বেরোনো গাড়ি ও মোটরবাইক বাজেয়াপ্ত করেছে কলকাতা পুলিশ। লালবাজার জানিয়েছে, সরকারি নির্দেশ অমান্য করে পথে বেরোনোয় বুধবার রাত থেকে বৃহস্পতিবার রাত ন’টা পর্যন্ত ১৫৪০ জনকে গ্রেফতার করা হয়েছে। এর পাশাপাশি ট্র্যাফিক বিভাগকেও কড়া হতে বলা হয়েছে। এ দিন বেলা ১১টা থেকে দুপুর ২টো পর্যন্ত বাজেয়াপ্ত করা হয়েছে ১২৯টি গাড়ি। ২৪ মার্চ থেকে এ দিন পর্যন্ত গ্রেফতার হয়েছেন মোট ৪৪৯৬ জন।
তবে খাস কলকাতায় কড়াকড়ি হলেও শহরতলি এলাকার পুলিশ কমিশনারেটগুলি এখনও সে ভাবে কড়াকড়ি করছে না। তার ফলে রাস্তায় ধীরে ধীরে ভিড় বাড়ছে, লোকজনও অলিগলিতে আড্ডা বসাচ্ছেন। পুলিশ সূত্রের দাবি, সরকারের শীর্ষ স্তর থেকে লাঠিপেটা করতে নিষেধ করায় নাগরিকদের একটা বড় অংশ লকডাউনের নির্দেশ মানছেন না।
লালবাজারের একটি সূত্রের দাবি, বুধবার রাতে পুলিশ কমিশনার অনুজ শর্মা শহরে টহলদারিতে বেরিয়ে এই চিত্র দেখেছিলেন। বৃহস্পতিবার সকালেও বহু লোক রাস্তায় বেরিয়েছিলেন। তার পরেই কমিশনার নির্দেশ দেন, আইন ভাঙতে দেখলেই গ্রেফতার করতে হবে। এর পাশাপাশি মাইকে সচেতনতা প্রচার করতেও বলেন তিনি।
পুলিশ সূত্রের দাবি, নানা অজুহাতে লোকজন রাস্তায় বেরোচ্ছেন। পাড়ার মোড়ে জটলা করছেন। এই ধরনের ঘটনা আটকাতেই আইনি দাওয়াই প্রয়োজন। এ দিন ভবানীপুর, কালীঘাট-সহ শহরের বিভিন্ন এলাকা থেকে এমন বহু লোককে গ্রেফতার করা হয়েছে। তাঁদের থানা থেকে জামিন দেওয়া হয়নি। প্রয়োজনে একটি বড় পুলিশ ভ্যানে ২-৩ জন করে লোক নিয়ে বারবার আদালতে পাঠানো হয়েছে। এক পুলিশকর্তার দাবি, ‘‘এই ধরনের মামলায় থানা থেকে ছাড়া যায়। কিন্তু সেই দাওয়াইয়ে অনেক সময়েই লোকের শিক্ষা হয় না। তাই পুলিশের ভ্যানে চাপিয়ে আদালতে পাঠানো হয়েছে। আদালত জামিন দিলেও এতে অন্তত লজ্জাটুকু হবে।’’
পুলিশের দাবি, ছুটির মেজাজে রাস্তায় বেরোনো, পুলিশ থাকবে না ভেবে হেলমেট না-পরে বাইক চালানোর অভিযোগে অনেককে ধরা হয়েছে। বাজেয়াপ্ত করা হয়েছে মোটরবাইক। সংশ্লিষ্ট চালকদের বিরুদ্ধে এফআইআরও করেছে পুলিশ। বাজেয়াপ্ত হওয়া গাড়ি আপাতত ছাড়ানোর উপায় নেই। তাই পুলিশ আধিকারিকেরা মনে করছেন, কড়া এই দাওয়াইয়ে খানিকটা হলেও শিক্ষা হবে।
তবে খাস কলকাতায় না-হয় আইনি দাওয়াই দিচ্ছে লালবাজার। কিন্তু শহরতলিগুলিতে এমন পুলিশি দাওয়াই মিলবে কি? প্রশ্নটা থেকেই যাচ্ছে।