ধৃত: দীনেশ শর্মা। সোমবার। নিজস্ব চিত্র
যে কাজ অনেক আগেই শুরু করা উচিত ছিল, অবশেষে তাতে হাত দিল কলকাতা পুলিশ!
হুগলির পোলবার দুর্ঘটনার পরে কলকাতা শহরে স্কুলগাড়ির বিরুদ্ধে অভিযান শুরু করেছে তারা। আর সেই অভিযানের প্রথম দিনই মদ খেয়ে স্কুলগাড়ি চালানোর অভিযোগে গ্রেফতার করা হল দীনেশ শর্মা নামে এক ব্যক্তিকে। পুলিশ জানিয়েছে, সোমবার দুপুরে ঘটনাটি ঘটেছে তালতলা থানা এলাকার মৌলালিতে। অভিযুক্ত দীনেশ শিয়ালদহ এলাকার একটি ইংরেজি মাধ্যম স্কুলের ছাত্রছাত্রীদের নিয়ে যাচ্ছিলেন। চালককে গ্রেফতার করার পরে ওই ছাত্রছাত্রীদের বাড়ি পাঠানোর ব্যবস্থা করেন শিয়ালদহ ট্র্যাফিক গার্ডের অফিসারেরা। ওই গার্ডের ওসি-র গাড়ির চালক কৌশিক মণ্ডল পুলকারটি চালিয়ে পড়ুয়াদের বাড়িতে পৌঁছে দেন। ওই স্কুলগাড়ির মালকিনের ভূমিকায় ক্ষুব্ধ পুলিশ। এ দিকে, এ দিন সকালেই কলকাতা স্টেশনের কাছে পড়ুয়া-ভর্তি এক স্কুলগাড়ি একটি স্কুটারে ধাক্কা মারে। আহত হন স্কুটারচালক ও পিছনে থাকা মহিলা আরোহী। পরে উল্টোডাঙা থানার পুলিশ পুলকারের চালককে গ্রেফতার করে।
পোলবার দুর্ঘটনার পরেই তদন্তে ওই স্কুলগাড়ি চালকের বিরুদ্ধে একাধিক অনিয়মের অভিযোগ ওঠে। ওই গাড়িটির বৈধ নথিপত্র ছিল না বলেও জানতে পারে পুলিশ। সেই তথ্য সামনে আসার পরেই ছাত্রছাত্রীদের নিরাপত্তার কথা মাথায় রেখে সোমবার সপ্তাহের প্রথম কাজের দিনে অভিযানে নামার সিদ্ধান্ত নেয় কলকাতা ট্র্যাফিক পুলিশ। সেই মতো প্রতিটি ট্র্যাফিক গার্ডের তরফে এ দিন সকাল থেকেই বিভিন্ন রাস্তায় স্কুলগাড়ি ও স্কুলবাসের নথি খতিয়ে দেখার কাজ শুরু হয়। পাশাপাশি, খতিয়ে দেখা হয় চালকদের নথিও।
লালবাজার সূত্রের খবর, এ দিন দুপুরে মৌলালি মোড়ের কাছে ডিউটি করছিলেন শিয়ালদহ ট্র্যাফিক গার্ডের অফিসারেরা। একটি স্কুলগাড়ির চালককে দেখে তাঁদের সন্দেহ হয়। গাড়িতে সে সময়ে বিভিন্ন ক্লাসের জনা এগারো ছাত্রছাত্রী ছিল। পুলিশের দাবি, চালককে গাড়ি থেকে নেমে নথি দেখাতে বলেন কর্তব্যরত পুলিশকর্মীরা। গাড়ি থেকে নামার সময়েই দীনেশ নামের ওই চালকের হাবভাব দেখে সন্দেহ হয় পুলিশের। তাঁরা ব্রেথ অ্যানালাইজ়ার দিয়ে পরীক্ষা করে দেখেন, চালক প্রচুর পরিমাণ মদ্যপান করে গাড়ি চালাচ্ছিলেন। এর পরেই দীনেশকে তালতলা থানার পুলিশের হাতে তুলে দেওয়া হয়। শিয়ালদহ ট্র্যাফিক গার্ডের সার্জেন্ট মানবেন্দ্র বিশ্বাসের অভিযোগের ভিত্তিতে পরে তাঁকে গ্রেফতার করে বাজেয়াপ্ত করা হয় গাড়িটি। চালকের কাছে ড্রাইভিং লাইসেন্সও ছিল না বলে পুলিশ জানিয়েছে।
ওই গাড়িতে থাকা ছাত্রছাত্রীদের সকলেরই বাড়ি উত্তর কলকাতার বিভিন্ন জায়গায়। চতুর্থ থেকে অষ্টম শ্রেণির ওই পড়ুয়ারা পুলিশকে জানায়, চালকের হাত কাঁপছিল প্রথম থেকেই। তবে গাড়ির গতি বেশি ছিল না বলে তারা জানিয়েছে।
পোলবার ঘটনার সূত্রেই স্কুলগাড়ির উপরে প্রশাসনের নজরদারির অভাবের বিষয়টি সামনে এসেছিল। এর আগে বাগবাজারে একটি স্কুলবাস নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে রাস্তার পাশে ধাক্কা মেরেছিল। সেই সময়েও দেখা যায়, ওই বাসের প্রয়োজনীয় কাগজপত্র নেই। এর পরে পুলিশ কমিশনারের নির্দেশে শহরের রাস্তায় অবৈধ স্কুলগাড়ি ও বাস ধরতে অভিযান চালায় পুলিশ। পুলিশকর্মীদের একাংশ জানিয়েছেন, স্কুলগাড়ির জন্য নির্দিষ্ট বিধি তৈরি না হলে তাদের দৌরাত্ম্য ঠেকানো যাবে না। আর তা ঠিক করতেই আজ, মঙ্গলবার বৈঠকে বসার কথা পরিবহণ ও শিক্ষা
দফতরের কর্তাদের।