Mobile Phones

ফোন চোরাই নয় তো? থানায় মৃত্যুর পরে সতর্ক করছে পুলিশ

সম্প্রতি ২০০ টাকায় কেনা একটি চোরাই মোবাইল ফোন আমহার্স্ট স্ট্রিট থানায় জমা দিতে গিয়ে অসুস্থ হয়ে মৃত্যু হয়েছে এক ব্যক্তির। থানার মধ্যে তাঁকে পিটিয়ে মারার অভিযোগ তুলেছে পরিবার।

Advertisement

নীলোৎপল বিশ্বাস

কলকাতা শেষ আপডেট: ২৭ নভেম্বর ২০২৩ ০৭:৪১
Share:

—প্রতীকী চিত্র।

চাঁদনি চক বাজারে আলো, বৈদ্যুতিন সরঞ্জামের দোকানের আশপাশ দিয়ে কিছু ক্ষণ হাঁটাহাঁটি করলেই কানে আসতে পারে কথাটা। পুরনো ফোন লাগবে নাকি? আই ফোন দেড় হাজারে! অ্যান্ড্রয়েড ৪০০ থেকে ৭০০-র মধ্যে! কাগজ ছাড়া নিলে দাম আরও কম। দেখার আগ্রহ তৈরি হলে আর নেওয়ার ইচ্ছে থাকলে ফোনের সাম্প্রতিকতম মডেলও মিলতে পারে এই দামেই!

Advertisement

কিন্তু, এমন পুরনো ফোন কিনে ভুগতে হতে পারে যে কোনও সময়ে। সেই ফোনই হয়ে উঠতে পারে মাথাব্যথার কারণ! মামলায় ফেঁসে যাওয়ার ভয় যেমন রয়েছে, তেমনই ডাক আসতে পারে থানা থেকেও। একাধিক উদাহরণ তুলে ধরে কলকাতা পুলিশের কর্তা থেকে সাইবার গবেষকদের বড় অংশ জানাচ্ছেন, এমন পুরনো ফোন কেনার আগে সতর্ক হতেই হবে। কারণ, এগুলির যে কোনওটি হতে পারে চোরাই সামগ্রী।

সম্প্রতি ২০০ টাকায় কেনা একটি চোরাই মোবাইল ফোন আমহার্স্ট স্ট্রিট থানায় জমা দিতে গিয়ে অসুস্থ হয়ে মৃত্যু হয়েছে এক ব্যক্তির। থানার মধ্যে তাঁকে পিটিয়ে মারার অভিযোগ তুলেছে পরিবার। পুলিশের যদিও দাবি, ওই ব্যক্তি আগে থেকে অসুস্থ ছিলেন। সেই কারণেই মৃত্যু। বিষয়টি আপাতত বিচারাধীন। তবে, ওই ঘটনার পরে পুরনো ফোন নিয়ে আরও বেশি সতর্ক লালবাজার।

Advertisement

পুলিশকর্তারা জানাচ্ছেন, পুজোর মরসুম শেষ হওয়ার পরে এই সময়ে প্রতি বারই চোরাই মোবাইল বিক্রির হিড়িক পড়ে। বাড়ে গ্রেফতারিও। সাধারণত পুজোর বাজার, ঠাকুর দেখার ভিড় বা গণপরিবহণ থেকে পুজোর আগের এক মাসে যত মোবাইল চুরি হয়, সে সবই বিক্রির চেষ্টা হয় পুজো শেষে।

লালবাজারের এক কর্তা বললেন, ‘‘মোবাইল চুরি চক্রের পান্ডাদের কথায়, একদল লোক শহরে ঘুরে বেড়ায়। চুরি করা মোবাইল তারা এনে প্রথমে দেয় ‘চার্জার’-কে। চার্জার, অর্থাৎ চোরাই মোবাইল চার্জে (দায়িত্ব) রাখার ব্যক্তি। সেখান থেকে ওই ফোনগুলি যায় বিভিন্ন বাজারে। পুরনো মোবাইল ফোনের দোকান থেকে মুদির বা ফুল-মালার দোকানও বাদ যায় না। নগদ টাকায় এমন ফোন কেনেন হকারেরাও। তার পরে যেমন খুশি দামে বিক্রি হয় সেগুলি।’’

পুলিশের দাবি, ঠিক এখানেই সতর্ক হতে হবে গ্রাহককে। ফোনের স্ক্রিন, চার্জার, পোর্ট, ওয়ারান্টি আছে কি না, বিমার মেয়াদ ফুরিয়ে গিয়েছে কি না— এমন নানা কিছু যাচাই করার থেকেও জরুরি ফোনটির বৈধ নথি খতিয়ে দেখা। নকল বিল রয়েছে সন্দেহ হলেই আর না এগোনোর পরামর্শ দেওয়া হচ্ছে। পাশাপাশি, ইন্টারন্যাশনাল মোবাইল ইকুইপমেন্ট আইডেন্টিটি (আইএমইআই) নম্বর ব্যবহার করে ফোনের আসল পরিচয় যাচাই করাও দরকার। এই সুবিধা এনেছে টেলিকম দফতর (ডট)। যে কোনও মোবাইল থেকে এসএমএস করে বা অ্যাপের মাধ্যমে এই সুবিধা নেওয়া যেতে পারে।

পুলিশকর্তারা জানাচ্ছেন, প্রতিটি মোবাইলে ১৫ অঙ্কের স্বতন্ত্র আইএমইআই নম্বর রয়েছে। যখন কোনও ব্যক্তি ওই নম্বর-সহ ফোন হারানো বা চুরি যাওয়ার অভিযোগ জানান, তখনই বিষয়টি টেলিকম দফতরকে জানায় পুলিশ। সেই সঙ্গেই আইএমইআই নম্বর ট্র্যাক করা শুরু হয়। চুরি যাওয়া ফোনটিতে সিম কার্ড ভরার সঙ্গে সঙ্গে সেটি চলে আসে পুলিশের নজরে। দ্রুত উদ্ধারও হয়ে যায়। অনেকে আবার পুলিশের ফোন পেয়ে সংশ্লিষ্ট থানায় কুরিয়র করে পাঠিয়ে দেন ভুল করে কেনা চোরাই ফোনটি।

সাইবার গবেষক সৌম্য বাগচী যদিও বললেন, ‘‘যাঁদের ফোন হারাচ্ছে, তাঁদের দায়িত্বও প্রচুর। শুধু নম্বর ব্লক করে পুলিশে অভিযোগ করাই নয়, প্রয়োজনে ফোনটিও ব্লক করা দরকার। সেই সঙ্গে ফোনে থাকা সব নথি মুছে ফেলা জরুরি।

এর জন্য তথ্যপ্রযুক্তি মন্ত্রক দ্বারা পরিচালিত সেন্ট্রাল ইকুইপমেন্ট আইডেন্টিটি রেজিস্টার (সিইআইআর)-এর ওয়েবসাইটে (www.ceir.gov.in) গিয়ে ফোনটি ব্লক করা যেতে পারে। এর জন্য ওয়েবসাইটে ফোন হারানোর এফআইআরের কপি, মোবাইল কেনার বিলের নম্বর দিতে হয়। অ্যান্ড্রয়েড ফোনের ক্ষেত্রে www.google.com/android/find ওয়েবসাইটে গিয়ে এবং আইফোনের ক্ষেত্রে www.icloud.com/find ওয়েবসাইটে গিয়ে সব তথ্য মুছে ফেলা যায়। তখন ফোন চুরি গেলেও সেটির তথ্য হাতিয়ে নেওয়ার জেরে ক্ষতি হতে পারে, এমন ঝুঁকি হয়ে দাঁড়ায় নগণ্য।’’

পুরনো ফোন কেনার আগে

১) কার্যক্ষমতা যাচাইয়ের পাশাপাশি নথি দেখে নেওয়া জরুরি। আসল নথি থাকলে তবেই কিনুন।

২) ওয়ারান্টির অধীনে আছে কি না জানুন। নিজের নামে ওয়ারিন্টি ট্রান্সফার করুন।

৩) আগের ব্যবহারকারীর তথ্য ফোনে থাকলে যোগাযোগ করে ফোনটির বৈধতা সম্পর্কে নিশ্চিত হতে পারেন।

৪) ফোন কেনা বাবদ আর্থিক লেনদেনের রসিদ নিন।

৫) বিক্রেতাকে ফোনের আইএমআই নম্বর জানতে চান। সেই নম্বর ব্যবহার করে ফোনটির আসল পরিচয় যাচাই করুন।

ফোনের পরিচয় যাচাইয়ের পদ্ধতি

১) ফোনের বাক্সে লেখা ১৫ সংখ্যার আইএমআই নম্বর দেখুন। বাক্স না থাকলে ফোনে *#০৬# লিখে ‘কল’ বাটন টিপুন।

২) এসএমএসের মাধ্যমে ইংরেজিতে কেওয়াইএম (KYM) লিখুন। স্পেস দিয়ে আইএমআই নম্বর নিখুন। সেটি ১৪৪২২ নম্বরে পাঠিয়ে দিন। তাতেই ফোনের যাবতীয় তথ্য স্ক্রিনে ফুটে উঠবে।

৩) 'know your mobile' অ্যাপের মাধ্যমেও তথ্য যাচাই সম্ভব। অ্যাপটি ডাউনলোড করে তাতে ফোনের পর্দায় আইএমআই নম্বর লিখে ‘ভেরিফাই’ অপশন বাছতে হবে।

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement