নজরদারি: রাস্তায় পোড়ানো হচ্ছিল বাজি। পুলিশ এসে বাজেয়াপ্ত করে সে সব। এপিসি রোডে, বৃহস্পতিবার রাতে। ছবি: স্বাতী চক্রবর্তী
কালীপুজোর রাতে বাজি এবং ভিড় নিয়ন্ত্রণ পরীক্ষার প্রথম পত্রে ফেল করলেও শুক্রবারের দ্বিতীয় পত্রে টেনেটুনে পাশ করল পুলিশ। ফলে চূড়ান্ত মার্কশিটে সেই লাল কালির দাগই থেকে গেল! যা নিয়ে লালবাজারের এক শীর্ষ কর্তার মন্তব্য, ‘‘বিধি বলবৎ করার পরীক্ষা কারও একার পক্ষে পাশ করা সম্ভব নয়। তবু প্রতিকূল পরিস্থিতিতে যথাসাধ্য চেষ্টা করেছে কলকাতা পুলিশ। আসলে ফেল করেছে অতিমারির ভয়াবহ অভিজ্ঞতা থাকা সত্ত্বেও বেহুঁশ মানসিকতা।’’
সেই মানসিকতার কারণে শুক্রবারও রাত যত গড়িয়েছে, ততই বাজির শব্দ ভেসে আসতে শুরু করেছে নানা জায়গা থেকে। কালীপুজোর রাতের তুলনায় কম ফাটলেও তার জেরেই শুক্রবার রাত শেষে সব মিলিয়ে ভয়াবহ অবস্থা হয় বাতাসের মানের। পুলিশের সচেতনতার প্রচার বা মামলা রুজু করে শাস্তির জুজুও কাজে লাগেনি বলে দাবি অনেকের। শুক্রবার রাতেই শহরের নানা জায়গায় অভিযান চালিয়ে পুলিশ ১৬৮৩ কেজি ৮০০ গ্রাম নিষিদ্ধ বাজি বাজেয়াপ্ত করেছে। বাজেয়াপ্ত হয়েছে প্রায় ২১০ লিটার মদও। বাজি ফাটিয়ে বিধিভঙ্গের অভিযোগে শুধু কালীপুজোতেই গ্রেফতার হয়েছেন মোট ৭২০ জন। রাত ৮টা পর্যন্ত এই গ্রেফতারির সংখ্যাটা ছিল ৮৮। অর্থাৎ, ওই রাতের কয়েক ঘণ্টাতেই গ্রেফতার হয়েছেন প্রায় ৬৩২ জন! কলকাতা ট্র্যাফিক পুলিশও ব্যবস্থা নিয়েছে ৪৮৭ জনের বিরুদ্ধে। শুক্রবার রাতের দিকে দফায় দফায় অভিযোগ আসতে শুরু করায় লালবাজারের কন্ট্রোল রুম থেকে নিরুপায় এক পুলিশকর্মীর মন্তব্য, ‘‘ছাড়ের বিভ্রান্তি রাখলে কড়া হওয়ার পথ থাকে না। ফলে আমরা এ বার বুঝতে পারিনি, ঠিক কী করা উচিত।’’
পরিবেশবিদদের অভিযোগ, ছাড়ের ফাঁক গলেই শুক্রবারও দেদার বাজি ফেটেছে কসবা, তপসিয়া, তারাতলা, বালিগঞ্জ, বেলেঘাটা, নারকেলডাঙা, মানিকতলার মতো জায়গায়। বেহালা, হরিদেবপুর, পর্ণশ্রী, তালতলা, শ্যামপুকুর, জোড়াবাগান এবং কাশীপুরের মতো বাজি ফাটানোয় কুখ্যাত এলাকাও পিছিয়ে ছিল না। কলকাতাকে বাজি ফাটানোয় অনেকটাই টেক্কা দিয়েছে লেক টাউন এবং দমদমের মতো শহরতলি। বাদ যায়নি সল্টলেক, রাজারহাট, নিউ টাউনও। পুজোর রাতে সল্টলেকে গ্রেফতার করা হয়েছে ৭৭ জনকে। উদ্ধার হয়েছে ৩৫০ কিলোগ্রাম নিষিদ্ধ বাজি। এ দিনও দফায় দফায় অভিযোগ গিয়েছে পুলিশ এবং পরিবেশকর্মীদের কাছে। পুলিশের একটি অংশের দাবি, অন্যান্য বার বহুতলের ছাদে ফাটানো বাজি নিয়ে আলোচনা হলেও এ বার বাজি ফাটানোর হিড়িক ছিল বস্তি এলাকায়। গলি, তস্য গলি পেরিয়ে সেই পর্যন্ত পৌঁছতেই অনেক ক্ষেত্রে কালঘাম ছুটেছে।
আর ছিল মানুষের দায়িত্বজ্ঞানহীন ভিড়। এ দিনও দেদার লোক হয়েছে আমহার্স্ট স্ট্রিট, জানবাজারের মতো কালীপুজোর জন্য প্রসিদ্ধ এলাকায়। দক্ষিণের একাধিক পাড়ার পাশাপাশি বাদ ছিল না দমদম রোডের ভিড়ও। বহু ক্ষেত্রেই দেখা যায়নি মাস্ক পরে থাকার দায়িত্ববোধটুকুও। এমনকি, বহু এলাকায় মণ্ডপ দর্শকশূন্য রাখার নির্দেশ উড়িয়ে দর্শনার্থীদের ঢল নামতে দেখা গিয়েছে। ঠাসাঠাসি করে পুজো সারা বা অঞ্জলি দেওয়াও ছিল চোখে পড়ার মতো। ‘ফাটাকেষ্টর পুজো’ নামে পরিচিত নব যুবক সঙ্ঘের পুজোকর্তা প্রবন্ধ রায় তো নিজেই বললেন, ‘‘হাজারখানেক লোক অঞ্জলি দিলেন। তিন হাজারের বেশি পুজো পড়েছে। এত দিন ভাবতাম মুম্বইয়ের শিল্পী বা আলো দেখতেই লোকে আসেন। এ বার তো শুধু পুজো দেখতেও গিজগিজে ভিড়।’’