ফাইল চিত্র।
পরিবেশবিধি লঙ্ঘন এবং দূষণবিধি অমান্য করার জন্য গত তিন বছরে কলকাতা পুলিশ সব মিলিয়ে প্রায় দু’কোটিরও বেশি টাকা জরিমানা বাবদ আদায় করেছে। সবচেয়ে বেশি জরিমানা আদায় হয়েছে ২০২১ সালে, প্রায় এক কোটি টাকা। ২০২০ ও ২০১৯ সালে আদায় করা জরিমানা যথাক্রমে প্রায় ৫৩ লক্ষ ও ৮০ লক্ষ টাকা। কলকাতা পুলিশের ‘অ্যান্টি পলিউশন সেল’-এর তথ্য অনুযায়ী এমনটাই জানা যাচ্ছে। পুলিশকর্তাদের একাংশের বক্তব্য, এই অঙ্কেই বোঝা যাচ্ছে, পরিবেশবিধি লঙ্ঘন ও দূষণবিধি অমান্য করা ঠেকাতে পুলিশ কতটা সক্রিয়!
পরিবেশবিদদের একাংশ অবশ্য এ বিষয়ে জাতীয় পরিবেশ আদালতের একটি পর্যবেক্ষণের কথা মনে করিয়ে দিয়েছেন। যেখানে গত মাসেই একটি মামলার পরিপ্রেক্ষিতে আদালত রাজ্য সরকারের কাছে জানতে চেয়েছে, কেন রাস্তার মোড়ে যানবাহন অকারণে এত হর্ন দেয়? কেন পুলিশ পদক্ষেপ করে না? আগামী দু’মাসের মধ্যে এই দুই প্রশ্নের ব্যাখ্যা হলফনামা আকারে জমা দেওয়ার জন্য নির্দেশ দিয়েছে আদালত। কারণ একাধিক রিপোর্টে উঠে এসেছে, সাধারণ জায়গা তো বটেই, এমনকি হাসপাতাল ও সংলগ্ন এলাকার মতো ‘সাইলেন্স জ়োনও’ রেহাই পায় না হর্ন-উপদ্রবের থেকে।
পাশাপাশি আদালতের নির্দেশ, শব্দের প্রাবল্য মাপার জন্য পর্যাপ্ত সংখ্যক ‘নয়েজ় পলিউশন মনিটরিং স্টেশন’ তৈরি করতে হবে। শহরের কোথায়, কত মনিটরিং স্টেশন দরকার সে ব্যাপারে যৌথ ভাবে ‘গ্যাপ অ্যানালিসিস’ সমীক্ষা করবে রাজ্য দূষণ নিয়ন্ত্রণ পর্ষদ ও কলকাতা পুলিশ। শব্দদূষণ নিয়ন্ত্রণে থানা এলাকায় গড়তে হবে টাস্ক ফোর্স। নোডাল অফিসার হিসাবে দায়িত্ব দিতে হবে নির্দিষ্ট পুলিশকর্মীকে। পাশাপাশি, পরিবেশ আদালত সরাসরি কলকাতা ট্র্যাফিক পুলিশকে রাস্তার মোড়ে যথেচ্ছ ভাবে হর্ন বাজানো নিয়ন্ত্রণ করার নির্দেশও দিয়েছে। এই নির্দেশের পরিপ্রেক্ষিতে পরিবেশকর্মী সুভাষ দত্ত বলছেন, ‘‘কলকাতা পুলিশ নিজের কাজ ঠিক মতো করলে পরিবেশ আদালতকে বার বার একই নির্দেশ দিতে হত না। পুলিশের সব স্তরে সমান ভাবে কাজটা হয় না বলেই এই নির্দেশ বারংবার দিতে হয়।’’
প্রসঙ্গত, বায়ু ও শব্দদূষণের জন্য বার বার আলোচনার শীর্ষে এসেছে দুই শহর কলকাতা ও হাওড়া। জাতীয় পরিবেশ আদালতের একাধিক নির্দেশ সত্ত্বেও বায়ু-শব্দদূষণ নিয়ন্ত্রণে রাজ্য প্রশাসনের তরফে সামগ্রিক প্রচেষ্টার অভাবের বিষয়টি উঠে এসেছে। যদিও কলকাতা পুলিশ জানাচ্ছে, ২০১৯ সালের পয়লা জানুয়ারি থেকে ২০২১ সালের ৩১ ডিসেম্বর পর্যন্ত পরিবেশবিধি লঙ্ঘন এবং দূষণবিধি অমান্য করার জন্য সাড়ে ছ’লক্ষেরও বেশি মামলা রুজু করা হয়েছে। হাওড়া পুলিশ সূত্রে জানা যাচ্ছে, ২০২১ সালের পয়লা জানুয়ারি থেকে ৩১ ডিসেম্বর পর্যন্ত যানবাহনের ধোঁয়া-দূষণের জন্য রুজু করা হয়েছে ৪৩৮৯১টি মামলা। যার পরিপ্রেক্ষিতে এক পরিবেশবিজ্ঞানীর মন্তব্য, ‘‘একটা কথা এখানে মনে রাখা দরকার, এই ঘটনাগুলি পুলিশ নথিভুক্ত করেছে। অর্থাৎ, এগুলির বিরুদ্ধে পুলিশ পদক্ষেপ করেছে, তাই এই সংক্রান্ত তথ্য রয়েছে। কিন্তু এর বাইরে অজস্র ঘটনা রয়েছে, যেগুলির কোনও তথ্য পুলিশ-প্রশাসনের কাছে নেই।’’
ফলে জরিমানা আদায়ের ‘মুকুট’-এর পাশাপাশি পুলিশের কাছে এই প্রশ্নগুলিও কাঁটার মতো খচখচ করছে বলে মনে করছে পরিবেশবিদ মহল।