Fire Accidents

পুজোর ঘরে অগ্নিকাণ্ডে মৃত্যু এড়াতে পুলিশি নির্দেশিকা

কলকাতা পুলিশ সূত্রের খবর, গত নভেম্বর থেকে এখনও পর্যন্ত শহরে পুজোর ঘরে এমন আগুন লাগার ঘটনা ঘটেছে ১৪টি। তার মধ্যে মৃত্যু হয়েছে পাঁচ জনের। গত ১০ থেকে ১৮ জানুয়ারির মধ্যেই এমন চারটি ঘটনার কথা সামনে এসেছে।

Advertisement

নীলোৎপল বিশ্বাস

কলকাতা শেষ আপডেট: ৩০ জানুয়ারি ২০২৪ ০৭:৫৯
Share:

—প্রতীকী চিত্র।

কখনও একা থাকার কারণে, কখনও বা বাড়িতে পরিবারের অন্যেরা থাকলেও ঠান্ডায় পুজোর ঘরের দরজা এঁটে একা থাকার জেরে— গত কয়েক দিনে প্রদীপের আগুনে অথবা অসাবধানতাবশত ঘরের মধ্যে ফেলা জ্বলন্ত দেশলাই থেকে আগুন লেগে একের পর এক বয়স্কের পুড়ে যাওয়ার ঘটনা ঘটেছে। তবে, সেই সব ঘটনায় দ্রুত পদক্ষেপ করা না যাওয়ায় বেশির ভাগ ক্ষেত্রেই প্রাণহানির মতো ঘটনা ঘটছে। এই পরিস্থিতিতে এ বার নড়েচড়ে বসেছে কলকাতা পুলিশ। ইতিমধ্যেই এমন বয়স্কদের জন্য একাধিক পরামর্শ-সহ নির্দেশিকা প্রকাশ করেছে তারা। তাতেও কাজ না হওয়ায় এ বার কলকাতা পুলিশের ‘প্রণাম’ প্রকল্পের মাধ্যমে বয়স্কদের বাড়ি বাড়ি গিয়ে বুঝিয়ে আসার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে।

Advertisement

কলকাতা পুলিশ সূত্রের খবর, তড়িঘড়ি এই সিদ্ধান্ত নেওয়ার কারণ বিধায়ক তথা কলকাতা পুরসভার ডেপুটি মেয়র অতীন ঘোষের মায়ের অগ্নিদগ্ধ হওয়ার ঘটনা। জানা গিয়েছে, তিনি শনিবার সন্ধ্যায় নলিন সরকার স্ট্রিটের বাড়িতে পুজোর ঘরে ছিলেন। সেখানেই তাঁকে অগ্নিদগ্ধ অবস্থায় উদ্ধার করেন আত্মীয়েরা। আর জি কর মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়। তিনি সঙ্কটজনক অবস্থায় চিকিৎসাধীন। অতীনের দাবি, পুজোর ঘরে দেশলাই থেকে আগুন তাঁর মায়ের গায়ে থাকা চাদর ও সিন্থেটিক শাড়িতে ধরে যায়। তাঁর শরীরের ৬০ শতাংশের বেশি অংশ পুড়ে গিয়েছে।

কলকাতা পুলিশ সূত্রের খবর, গত নভেম্বর থেকে এখনও পর্যন্ত শহরে পুজোর ঘরে এমন আগুন লাগার ঘটনা ঘটেছে ১৪টি। তার মধ্যে মৃত্যু হয়েছে পাঁচ জনের। গত ১০ থেকে ১৮ জানুয়ারির মধ্যেই এমন চারটি ঘটনার কথা সামনে এসেছে। এর মধ্যে একটি ঘটনায় কালীঘাটের হরিশ চ্যাটার্জি স্ট্রিটের বাড়িতে একা ছিলেন বীণা কাটিয়াল নামে ৮৯ বছরের এক বৃদ্ধা। প্রতিদিনের মতো পুজোর ঘরে পুজো করতে যান তিনি। আচমকা প্রদীপ থেকে আগুন লাগে তাঁর শাড়িতে। বৃদ্ধার চিৎকার শুনে প্রতিবেশীরা খবর দেন দমকলে। স্থানীয়দের সহযোগিতায় ওই বৃদ্ধাকে হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হলে চিকিৎসকেরা তাঁকে মৃত ঘোষণা করেন। একই ভাবে পর্ণশ্রীতে মৃত্যু হয় ছবি মজুমদার নামে ৮৯ বছরের আরও এক বৃদ্ধার। স্বামীর মৃত্যুর পরে মেয়ের বাড়িতে থাকতেন তিনি। তবে সকাল-সন্ধ্যা পুজো করতে নিজের বাড়িতে যেতেন। সেখানেই প্রদীপের আগুন থেকে মৃত্যু হয় তাঁর। এক পুলিশকর্তার দাবি, ‘‘সব ক’টি ক্ষেত্রেই দেখা যাচ্ছে, বৃদ্ধারা একা ছিলেন। এমনিতে প্রতি বছরই শীতে পুজোর ঘরে অগ্নিদগ্ধ হওয়ার ঘটনা বেশি শোনা যায়। এর কারণ হিসাবে চাদর বা শাল গায়ে জড়িয়ে পুজো করার দিকটি উঠে আসে। ঠান্ডার কারণে দরজা-জানলা বন্ধ থাকায় বিপদ আরও বাড়ে। প্রতিবেশী বা বাড়ির লোকজন যত ক্ষণে বোঝেন, তত ক্ষণে দেরি হয়ে যায়। তবু প্রতি বছর সাধারণ মানুষকে বুঝিয়েও লাভ হয় না।’’

Advertisement

লালবাজারের এক শীর্ষ কর্তা বলেন, ‘‘এই পরিস্থিতিতে বাড়িতে কেউ একা থাকলে তাঁকে প্রদীপ না জ্বালানোর আবেদন জানানো হচ্ছে আমাদের পক্ষ থেকে। যদি জ্বালাতেই হয়, সে ক্ষেত্রে সতর্ক থাকার কথাও বলা হবে। পাশাপাশি, হাতের কাছে স্থানীয় থানা, নিকটাত্মীয়দের নম্বর রাখার পরামর্শও দিচ্ছি। বাড়ির বয়স্কদের বদলে যাতে অন্যেরা পুজোর প্রদীপ জ্বালান এবং প্রবীণেরা পুজোর ঘরে গেলে নজর রাখেন, সেটাও চাইছি আমরা।’’ তিনি আরও বলেন, ‘‘বয়স্কদের উপরে বাড়ির অন্যদের নজর রাখা বাড়াতে হবে। কোনও ভাবেই তাঁদের একা ছাড়া চলবে না। বাকিরা সতর্ক হলে তবেই এই ব্যাপারে বয়স্কেরা সুরক্ষিত হবেন।’’

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement