Kolkata Pavement dwellers

Kolkata pavements: শিশু চুরি থেকে ধর্ষণ, ফুটপাত যেন অপরাধীদের মুক্তাঞ্চল  

রাত একটু গাঢ় হলেই রং বদলাতে শুরু করে শহরের ফুটপাত! সময় বদলালেও অপরাধের ছবি বদলায় না ফুটপাতের জীবনে।

Advertisement

চন্দন বিশ্বাস

কলকাতা শেষ আপডেট: ০৫ অগস্ট ২০২২ ০৫:৪০
Share:

হেদুয়া এলাকার ফুটপাতে প্লাস্টিক ঘেরা সংসার। ছবি: বিশ্বনাথ বণিক

রাত একটু গাঢ় হলেই রং বদলাতে শুরু করে শহরের ফুটপাত! কখনও জানা যায়, মধ্যরাতে ফুটপাত থেকে তুলে নিয়ে গিয়ে ধর্ষণ করে খুন করা হয়েছে কোনও তরুণীকে। কখনও আবার সামনে আসে, কাজ দেওয়ার নাম করে কোনও এক নাবালিকাকে নিয়ে গিয়ে বন্ধুদের সঙ্গে মিলে গণধর্ষণ করেছে কেউ। সময় বদলালেও অপরাধের ছবি বদলায় না ফুটপাতের জীবনে।

Advertisement

দিনকয়েক আগে ভরসন্ধ্যায় বেপরোয়া গাড়ির চাকায় পিষ্ট হয়ে মৃত্যু হয়েছিল তালতলা এলাকার বাসিন্দা এক পথশিশুর। তবে রাতের অন্ধকারে শুধু দুর্ঘটনা নয়, শহরের ফুটপাতবাসীদের ঘিরে থাকে অপরাধ ও অপরাধীদের নানা চক্রও। পুলিশি তদন্ত, গ্রেফতারি, নজরদারি— সবই নাকি ঠিকঠাক হয়। কিন্তু তার পরেও অপরাধ থামানো যায় না। তালতলার ঘটনাটি সে কথাই আবার নতুন করে মনে করাচ্ছে। সেই সঙ্গেই প্রশ্ন উঠেছে, কেন বার বার ফুটপাতবাসীদের নিরাপত্তা নিয়ে অনিশ্চয়তা দেখা দেবে?

২০১৬ সালের অগস্ট মাসের এক রাতের একটি ঘটনা মনে করিয়ে দিয়েছিল দিল্লির নির্ভয়া-কাণ্ডকে। ফুটপাতে মায়ের পাশে শুয়ে থাকা বছর বারোর একটি মেয়েকে মুখ চেপে তুলে নিয়ে গিয়েছিল দুই গাড়িচালক। সারা দিনের হাড়ভাঙা পরিশ্রমের পরে ক্লান্তির ঘুমে আচ্ছন্ন মা টের পাননি কোনও কিছুই। পরে তপসিয়া এলাকা থেকে উদ্ধার হয় ওই নাবালিকার দেহ। ধর্ষণের প্রমাণ লোপাট করতেই তাকে গলা কেটে খুন করা হয়েছিল বলে তদন্তে উঠে আসে। ওই ঘটনায় ওয়াটগঞ্জ এলাকা থেকে দুই অভিযুক্তকে গ্রেফতার করেছিল লালবাজার।

Advertisement

২০১৯ সালে আবার কালীঘাট থানা এলাকার ফুটপাত থেকে দুই নাবালিকাকে তুলে নিয়ে গিয়ে ধর্ষণের অভিযোগ সামনে আসে। ফুটপাতে শুয়ে থাকা ওই দু’টি মেয়েকে শেষ রাতে তুলে নিয়ে গিয়ে ধর্ষণ করা হয় বলে জানা যায়। সেই ঘটনায় এক নাবালক-সহ একাধিক জনকে গ্রেফতার করেছিল কালীঘাট থানার পুলিশ। এর পরে ২০২০ সালের ডিসেম্বর মাসে মহাজাতি সদনের কাছে সেখানকারই ফুটপাতের বাসিন্দা মাঝবয়সি এক মহিলার রক্তাক্ত দেহ উদ্ধার হয়। আক্রোশের বশে ভারী কিছু দিয়ে মাথা থেঁতলে খুন করা হয়েছি‌ল তাঁকে। এ ছাড়া, ফুটপাত থেকে শিশু চুরি অথবা কমবয়সিদের টাকার প্রলোভন দেখিয়ে তাদের ‘সুযোগ’ নেওয়ার নানা অভিযোগ তো আছেই। কিছু কিছু ক্ষেত্রে থানায় অভিযোগ দায়ের করা হলেও বহু ক্ষেত্রেই ঘটনা প্রশাসন ও জনতার অগোচরে থেকে যায় বলে দাবি ফুটপাতবাসীদের নিয়ে কাজ করা বিভিন্ন সংগঠনের।

কিন্তু অপরাধের শিকার হওয়া সত্ত্বেও বহু ক্ষেত্রে অভিযোগ জানানো হয় না কেন?

ফুটপাতবাসীদের একাংশের সঙ্গে কথা বলে জানা গেল, শিক্ষার অভাব এবং লোকলজ্জার কারণেই থানায় যেতে চান না তাঁদের অনেকে। বেথুন কলেজের কাছেই ফুটপাতে থাকেন মাধবী দেবী নামে এক মহিলা। তিনি বললেন, ‘‘পুলিশে গেলে তো নানা কাগজপত্র দেখতে চাইবে। আমাদের কোনও স্থায়ী ঠিকানাই যেখানে নেই, সেখানে কাগজ দেখাব কী করে?’’

শহরের ফুটপাতবাসীদের নিরাপত্তার বিষয়টি নিয়ে দীর্ঘদিন ধরে কাজ করা এক সমাজকর্মী বললেন, ‘‘আমাদের মতো নির্দিষ্ট কোনও বাসস্থানে থাকা নাগরিকদের চেয়ে ওঁদের নিরাপত্তাহীনতা যে অনেক বেশি, এটা অস্বীকার করার কোনও জায়গা নেই। এর কারণ, নানা সময়ে নানা ভাবে অপরাধীদের শিকার হয়েছেন ওঁরা।’’ তিনি আরও বলেন, ‘‘আসলে সংগঠিত অপরাধ ঠেকানোর জন্য আমাদের তো তা-ও চার দেওয়াল আছে, মাথার উপরে ছাদ আছে। ওঁদের তো সেটাও নেই।’’

পথবাসীদের নিরাপত্তা নিয়ে কী বলছে পুলিশ? কলকাতা পুলিশের এক কর্তা বললেন, ‘‘অপরাধ যেখানেই হোক, তার কিনারা করে আইন অনুযায়ী ব্যবস্থা নেওয়াই পুলিশের কাজ। ফুটপাতবাসীরাও শহরের বাইরের মানুষ নন। তাই তাঁদের নিরাপত্তার দিকটিও একই গুরুত্ব দিয়ে বরাবর দেখা হয়েছে। নিরাপত্তা নিয়ে কোনও ঢিলেমির প্রশ্নই ওঠে না।’’ (শেষ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement