ঝড়ে শহরের শতাধিক গাছ উপড়ে যাওয়ার পরে মেয়র পারিষদ দেবাশিস কুমার (উদ্যান) বুধবারই স্বীকার করেছিলেন, শিকড় গভীরে না থাকলে জোরে ঝড় হলেই গাছ পড়ে যাওয়ার ভয় থাকে। উদ্ভিদ বিশেষজ্ঞদেরও দাবি ছিল, সেই গাছগুলিই পড়েছে, যাদের শিকড় মাটিতে প্রবেশ করতে পারেনি। ফলে প্রশ্ন উঠেছে, এমন গাছ পুরসভা কেন বসাচ্ছে যা ঝড়ে বিপজ্জনক হয়ে উঠছে?
পুরসভার পাল্টা দাবি, এখন আর শহরে কৃষ্ণচূড়া, রাধাচূড়ার মতো বড় গাছ লাগানো হয় না। মঙ্গলবারের ঝড়ে যে গাছগুলি পড়েছে, সেগুলি সবই বাম আমলে লাগানো। তখন বড় উচ্চতার গাছই লাগানো হত।
কিন্তু মঙ্গলবারের ঝড়ের পরে কলকাতা পুরসভার গাছ রোপণ নীতি নিয়ে পরোক্ষে প্রশ্ন তুলেছে বন দফতরও। বনকর্তাদের একাংশের বক্তব্য, কংক্রিটের আধিক্যের মধ্যে গাছ বসালে কিছু সাবধানতা অবলম্বন করা প্রয়োজন। যা অনেক ক্ষেত্রেই মানা হচ্ছে না। বন দফতরের এক আধিকারিক জানান, রাস্তার দু’ধারে লাগানো গাছগুলির উচ্চতা বেশি এবং ফুটপাতে লাগানোয় সেগুলির শিকড় মাটিতে ঠিক মতো প্রবেশ করতে পারে না। ক্রমাগত খোঁড়াখুঁড়িতেও শিকড় আলগা হয়ে যায়।
পুরসভার উদ্ভিদ বিশেষজ্ঞ চঞ্চলকুমার মণ্ডল বলেন, ‘‘এখন শহরে বড় গাছ লাগানোই হয় না। জারুল, চাঁপা, দেবদারুর মতো কম উচ্চতার গাছ লাগানো হচ্ছে গত কয়েক বছর ধরে। গাছ লাগানোর আগে সমীক্ষাও করে দেখা হয়।’’
পুরসভা এমন যুক্তি দিলেও প্রশ্ন উঠেছে, বাস্তবে তেমনটা হচ্ছে কি? তবে এ ব্যাপারে সরাসরি পুরসভাকে কিছু বলতে নারাজ বন দফতর। কারণ, তাতে বিতর্কের সম্ভাবনা রয়েছে।
বন দফতরের এক কর্তার কথায়, ‘‘ফুটপাত কতটা চওড়া, মাটির ধারণ ক্ষমতা কেমন, এই সব দেখেই গাছ বসানো দরকার। তবে ইট-কংক্রিটের রাজত্বে গাছ বসাতে অসুবিধা তো হয়ই। কিন্তু এ নিয়ে সরাসরি পুরসভাকে কিছু বলতে পারি না।’’ বনমন্ত্রী বিনয়কৃষ্ণ বর্মণ বলেন, ‘‘পুরসভা পরামর্শ চাইলে আমরা সহযোগিতা করতে সব সময়েই প্রস্তুত। বকুল, নিমের মতো গাছ বসালে বিপর্যয়ের আশঙ্কা কম থাকে।’’
এক উদ্ভিদ বিশেষজ্ঞের কথায়, ‘‘কম জায়গায় সবুজায়ন করতে গিয়ে ফুটপাতে দু’টি গাছের মধ্যে যে দূরত্ব থাকার কথা, সেটাও রাখা যাচ্ছে না।’’
মেয়র পারিষদ (উদ্যান) দেবাশিস কুমার বলেন, ‘‘জায়গার অভাবে সমস্যা হচ্ছে ঠিকই। তবে বড় উচ্চতার গাছ পুরসভা বসাচ্ছে না।’’