প্রতীকী ছবি
ব্যাঙ্কক বেড়াতে নিয়ে যাবেন বলে যাঁদের কাছ থেকে টাকা নিয়েছিলেন, তাঁদের অধিকাংশই ষাটোর্ধ্ব, অবসরপ্রাপ্ত ব্যক্তি। অভিযোগ, বিপ্লব মণ্ডল নামে ওই ব্যক্তি ২০১৭ সালের ফেব্রুয়ারি-মার্চ নাগাদ প্রতিশ্রুতি মতো বেড়াতে তো নিয়েই যাননি, সেই সঙ্গে টাকাও ফেরত দেননি।
বিপ্লবের বিরুদ্ধে অভিযোগ, বেড়াতে না যাওয়ার কারণ হিসেবে এক জনকে তিনি বলেছেন, আর্থিক সমস্যা রয়েছে। আর এক জনকে বলেছেন, অন্য যাঁরা যাবেন, তাঁরা পুরো টাকা দিতে পারছেন না। কাউকে আবার বলেছেন, ডলারের দাম বেড়ে যাওয়ায় ব্যাঙ্ককে এজেন্টের সঙ্গে টাকাপয়সা নিয়ে সমস্যা হচ্ছে। শুধু টাকা নয়, সঙ্গে সুদও ফেরত দেবেন বলেছিলেন। সেই মতো প্রত্যেককে চেকও দেন। কিন্তু সেই চেক বাউন্স করে।
পরে নগদে কাউকে ১০ হাজার, কাউকে পাঁচ হাজার টাকা করে ধরিয়ে দিয়েছেন। বেলেঘাটার বাসিন্দা, ৭২ বছরের তুষার দত্ত থেকে দমদমের বাসিন্দা, ৬৫ বছরের তাপস বসু— বাকি টাকা ফেরত পেতে বুড়ো বয়সে এঁরা ছুটে বেড়াচ্ছেন থানা থেকে আদালত। বিপ্লবের কিন্তু দেখা নেই। তাঁর বিরুদ্ধে অজস্র অভিযোগ জমা পড়েছে কলকাতার শেক্সপিয়র সরণি থানায়। মামলাও হয়েছে ক্রেতা-সুরক্ষা আদালতে। এর মধ্যে এক বার দিন কয়েকের জন্য জেলও খেটে এসেছেন বিপ্লব। জামিন পাওয়ার পর থেকে তিনি বেপাত্তা। বিপ্লবের আইনজীবী শঙ্কর গোস্বামী এখনও আশ্বাস দিয়ে যাচ্ছেন, বেশ কিছু মানুষকে যেমন টাকা ফেরত দেওয়া হয়েছে, বাকিদেরও দেওয়া হবে।
সার্ভে পার্কের বাসিন্দা অসীম দাস অবশ্য সেই টাকা ফেরত পাবেন না। কারণ, এই মামলা চলাকালীনই রেলের প্রাক্তন কর্মী, ৭২ বছরের অসীমবাবু গত অক্টোবরে মারা গিয়েছেন। তুষারবাবুও রেলে চাকরি করতেন। তিনি জানান, ঠ২০১৬ সালে কাগজে বিজ্ঞাপন দেখে তাঁরা সেই বছরের অগস্ট থেকে চারটি কিস্তিতে ৫৩,৬০০ টাকা জমা দেন। স্ত্রীকে নিয়ে পাঁচ দিনের জন্য ব্যাঙ্কক-পাটায়া বেড়াতে যাওয়ার কথা ছিল।
তুষারবাবুর কথায়, ‘‘আমাদের যাওয়ার কথা ছিল ২৪ ফেব্রুয়ারি। তার আগেই যোগাযোগ করে বিপ্লব বলেন, পরে নিয়ে যাবেন। ডলারের দাম বেড়ে যাওয়ায় সমস্যা হচ্ছে। এর পরে আমি টাকা ফেরত চাই। এপ্রিল মাসেই সুদ-সহ চেক দেন তিনি। কিন্তু সেই চেকে তারিখ দেওয়া ছিল জুলাই মাসের। সেই চেকটি বাউন্স করে যায়।’’
একই অভিযোগ তাপসবাবুর। স্ত্রী ও ছেলেকে নিয়ে বেড়াতে যাবেন বলে তিনি ৮০ হাজার টাকা দিয়েছিলেন বিপ্লবকে। তাঁদের যাওয়ার কথা ছিল ২০১৭-র মার্চে। যাত্রা বাতিল করে তাঁকেও ৮৩ হাজার টাকার চেক পাঠিয়েছিলেন বিপ্লব। সেই চেকেও জুলাই মাসের তারিখ দেওয়া ছিল। সেই চেকও বাউন্স করে। শচীন ঘোষ-সহ তাঁর মতো আরও অনেকে চেক বাউন্স করার পরে চ্যাটার্জি ইন্টারন্যাশনালে বিপ্লবের দিশারি হলিডেজ-এর অফিসে গিয়ে হাজির হন। কিন্তু, তত দিনে তালা পড়ে গিয়েছে সেখানে।
শচীনবাবু, তাপসবাবু-সহ অনেকেই শেক্সপিয়র সরণি থানায় অভিযোগ দায়ের করেন। তার পরে গ্রেফতার হন বিপ্লব। আসরে নামেন তাঁর আইনজীবী। তাপসবাবুর অভিযোগ, ‘‘বিপ্লব জামিন পাওয়ার পরে তাঁর আইনজীবী আমাদের আশ্বস্ত করে জানান, টাকা ফেরত পাব। এর মধ্যে আমাকে দশ হাজার টাকা দেনও।’’ সেই টাকা ফেরত পান অসীমবাবুও। কিন্তু, তার কয়েক দিন পরেই তিনি মারা যান। বাকি টাকা আজ পর্যন্ত কেউ ফেরত পাননি।
পুলিশ সূত্রে জানা গিয়েছে, কিছু অভিযোগের ভিত্তিতে বিপ্লবের বিরুদ্ধে চার্জশিট জমা পড়েছে। কিন্তু, অভিযোগের তদন্ত এখনও চলছে।