মশা তাড়াতে আর অহেতুক ধোঁয়া দেওয়া হবে না। কারণ, ধোঁয়া দিয়ে ডেঙ্গির জীবাণুবহনকারী এডিস ইজিপ্টাইকে দমন করা যায় না। ওয়ার্ডে ওয়ার্ডে লিফলেট বিলি করে এমনটাই প্রচার চালাচ্ছে কলকাতা পুর প্রশাসন।
কিন্তু সেই প্রচার শুধুই খাতায়-কলমে কি না, এ বার সেই প্রশ্ন উঠে গেল পুর-প্রশাসনের অভ্যন্তরেই। কারণ, গত বছরের তুলনায় ২০১৮-’১৯ আর্থিক বর্ষের জন্য অতিরিক্ত প্রায় আড়াই লক্ষ টাকার ধোঁয়ার মেশিন বা ‘ফগ জেনারেটিং মেশিন’ কিনতে চলেছে পুরসভা। ফলে ধোঁয়া দিয়ে ডেঙ্গির দাপট কমানো যাবে না বলে যেখানে প্রচার করা হচ্ছে, সেখানে ফগ জেনারেটিং মেশিনের জন্য বাড়তি অর্থ বরাদ্দের যৌক্তিকতা কোথায় বলে প্রশ্ন তুলছেন পুর আধিকারিকদের একাংশ।
পুরসভা সূত্রের খবর, ধোঁয়ার বিষয়ে সাধারণ মানুষকে সচেতন করতে ওয়ার্ড পিছু পাঁচ হাজার লিফলেট তৈরি করা হয়েছে। ওই লিফলেটে স্পষ্ট বলা হচ্ছে যে, ডেঙ্গি হলেই ধোঁয়া দেওয়ার প্রবণতা ভ্রান্ত! কারণ, ডেঙ্গির জীবাণুবহনকারী মশা এডিস ইজিপ্টাইয়ের কামড় খেয়ে কারও ডেঙ্গি হতে মশা কামড়ানোর পর থেকে সাত দিন সময় লাগে এবং ডেঙ্গি হয়েছে কি না, তা জানতে আরও সময় লাগে দু’-তিন দিন। কিন্তু ততদিনে ওই মশাটি আর বেঁচে নেই। কারণ, তার আয়ু মাত্র ১৪ দিন। ‘কাজেই ধোঁয়া ছড়িয়ে লাভ নেই’, বলছে ওই লিফলেট।
পুরসভার লিফলেটেও লেখা ‘ধোঁয়া ছড়িয়ে লাভ নেই’। —নিজস্ব চিত্র।
কিন্তু ঘটনাচক্রে দেখা যাচ্ছে যে, ২০১৭-’১৮ সালে যেখানে ৪ লক্ষ ১২ হাজার ২০০ টাকার ধোঁয়া দেওয়ার মেশিন কেনা হয়েছিল, সেখানে ২০১৮-’১৯ সালের জন্য ওই মেশিন কেনার প্রস্তাব হয়েছে ৬ লক্ষ ৭৭ হাজার ২৫ টাকার। অর্থাৎ, ২ লক্ষ ৬৪ হাজার ৮২৫ টাকা অতিরিক্ত খরচ করার প্রস্তাব তৈরি হয়েছে মেশিন কিনতে। সেই সঙ্গে মেশিনের যন্ত্রাংশ কেনার জন্যও বরাদ্দ বাড়ানোর প্রস্তাব তৈরি হয়েছে। অর্থ দফতর সূত্রের খবর, যেখানে ২০১৭-’১৮ সালে মেশিনের যন্ত্রাংশ কেনার জন্য ১১ লক্ষ ২৫ হাজার ৩৮৫ টাকা খরচ করা হয়েছিল, ২০১৮-’১৯ সালে সেই বরাদ্দ বেড়ে দাঁড়িয়েছে ১৪ লক্ষ ৮ হাজার ২৪১ টাকায়। অর্থাৎ, এ ক্ষেত্রেও ২ লক্ষ ৮২ হাজার ৮৫৬ টাকা অতিরিক্ত বরাদ্দের প্রস্তাব রয়েছে। এক পুর আধিকারিকের কথায়, ‘‘লিফলেটের বয়ান আর ফগ মেশিন কেনার জন্য যে নীতিগত সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে, তার মধ্যে সামঞ্জস্য থাকছে না!’’
যদিও পুর স্বাস্থ্য দফতরের কর্তাদের বক্তব্য, ধোঁয়া একেবারে বন্ধের কথা বলা হয়নি। শুধু অহেতুক ধোঁয়া দেওয়া হবে না, তা বলা হচ্ছে। তাই ধোঁয়ার মেশিন কিনতে বাধা কোথায়! এক পুরকর্তার কথায়, ‘‘যথেচ্ছ ভাবে ধোঁয়া দিয়ে লাভ নেই, তা বলা হচ্ছে। কিন্তু একেবারে তো বন্ধ করা হয়নি। ফলে ধোঁয়ার মেশিন তো কিনতেই হবে। কোনও এলাকায় পরপর কয়েকটা বাড়িতে ডেঙ্গি হলে সেখানে ধোঁয়া দিতেই হবে।’’ পুরসভার মুখ্য পতঙ্গবিদ দেবাশিস বিশ্বাস বলেন, ‘‘অহেতুক ধোঁয়া দেওয়া বন্ধের ব্যাপারে প্রচার চালানো হচ্ছে। কিন্তু এত দিনের অভ্যাস, তা বন্ধ করতে কিছুটা সময় তো লাগবেই। তাই মানুষকে সচেতন করার কাজও চলছে। তবে ধোঁয়া যখন দেওয়া হচ্ছে, তখন তো মেশিন কিনতেই হবে!’’