গৌরব পুরকাইত
টিভিতে আজকের ঘটনাটা জেনে এক মুহূর্তে দেড় বছর পিছিয়ে গেলাম। আমার ভাইপো গৌরবের সঙ্গেও তো এরকমই ঘটেছিল। এ দিনের ঘটনায় ছেলেটা প্রাণে বেঁচে গিয়েছে। কিন্তু আমার ভাইপোটা বাঁচেনি।
২০১৬-র ১৩ সেপ্টেম্বর দক্ষিণ ২৪ পরগনার ঠাকুরপুকুরে এসি সারাতে গিয়ে কুকুরের তাড়া খেয়ে ছাদ থেকে পড়ে গিয়েছিল ও। সে দিন গৌরবের সঙ্গে আমার এক ভাই তরুণও ছিল। বাড়ির মালিককে বার বার ওরা বলেছিল, যেন বাড়ির পোষা কুকুরটাকে বেঁধে রাখা হয়। ওঁরা শোনেননি। কুকুরটা সটান গৌরবের গায়ে পা দিয়ে ওঠায় ও টাল সামলাতে পারেনি। ছ’তলার ছাদ থেকে নীচে পড়ে গিয়েছিল। ব্যস, সব শেষ।
দেখুন, কেউ কুকুর পুষবে কি না, তা নিয়ে আমাদের বলার কিছুই নেই। কিন্তু যাঁরা কুকুরে ভয় পান তাঁদের সামনে অন্তত কুকুরকে ছেড়ে দেওয়া ঠিক নয়। অনেক বাড়িতেই দেখি, কুকুরকে সরাতে বললে বলেন, ‘ও কিছু করবে না!’ হয়তো সত্যিই কিছু করবে না! কিন্তু যদি করে? এই ঝুঁকিটা কি নেওয়া উচিত? আবার এ-ও দেখেছি, পোষা কুকুর কাউকে কামড়ালে সেই বাড়ির লোকেরা উল্টে যিনি কামড় খেলেন তাঁকেই দোষারোপ করছেন। বলছেন, ‘অন্যদের তো কিছু করে না। আপনাকে দেখেই বা এ রকম করছে কেন?’ যেন, দোষটা তাঁরই!
কুকুর যদি পুষতেই হয়, তা হলে নিজের দায়িত্বে পুষুন। ঠিকমতো প্রশিক্ষণের ব্যবস্থাটাও করুন। না হলে এই বিপদ তো চলতেই থাকবে।
আরও পড়ুন: পিৎজা পৌঁছে মিলল কুকুরের কামড়
আমরা রসপুঞ্জের বাসিন্দা। গৌরব সেকেন্ড ইয়ারে পড়ছিল, সেই ফাঁকেই ভেবেছিল পার্টটাইম কিছু কাজ করে যদি সংসারে সুরাহা করা যায়। ওর মৃত্যু আমাদের গোটা পরিবারটাকেই পাল্টে দিয়েছে। বাড়িটা পুরো ঝিমিয়ে গিয়েছে। গৌরবের বাবা-মা মানে আমার দাদা-বৌদি এখন যেন একটা আলাদা জগতে থাকেন। সব সময়েই গুমরে থাকে পরিবারটা। আর সেটাই তো স্বাভাবিক। এ ভাবে সন্তানের মৃত্যু কোনও বাবা-মা মানতে পারেন কি? দেখুন, একটা ঘটনা ঘটার পরে সান্ত্বনা বা ক্ষতিপূরণ, কোনওটা দিয়েই কোনও লাভ হয় না। কারণ, এ ধরনের ঘটনা একটা পরিবারকে ভেঙে গুঁড়িয়ে দেয়। কুকুর যাঁরা পোষেন, তাঁরা যদি বিষয়টি মাথায় রাখেন, তা হলে খুব ভাল হয়।