ভাইকে খুনে ভাড়ার দুষ্কৃতী

গত ১৮ মে কৈখালির চিড়িয়াবাগানের বাড়িতে শম্পার রক্তাক্ত দেহ উদ্ধার হয়েছিল। পরদিন সকালেই সালুয়ায় নির্মীয়মাণ বাড়ির দোতলার সিঁড়িতে মশারির ভিতরে অভিজিতের রক্তাক্ত দেহ উদ্ধার করে পুলিশ।

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

শেষ আপডেট: ২৯ মে ২০১৮ ০২:৪৯
Share:

প্রতীকী ছবি।

একই দিনে দু’টি ঘটনা ঘটেছিল। ঘটনাচক্রে, দু’টি ক্ষেত্রেই সম্পত্তি জনিত বিবাদে ভাড়াটে খুনি নিয়োগ করে নিকটাত্মীয়কে খুন করানো হয়েছিল। এমনটাই জানা গিয়েছে পুলিশি তদন্তে। কৈখালির চিড়িয়াবাগান-কাণ্ডে সিভিক ভলান্টিয়ার শম্পা দাসকে ভাড়াটে খুনি নিয়োগ করে খুনের পরিকল্পনায় স্বামী সুপ্রতিম দাস ও শাশুড়ি মীরা দাস আপাতত হাজতে। আর সালুয়ায় ছোট ভাই অভিজিৎ সামুইকে ‘সুপারি কিলার’ দিয়ে মারার অভিযোগে তাঁর দাদা বিশ্বজিৎ দাস ও ভাড়াটে খুনি কার্তিক নস্করকে আটক করেছে বিধাননগর কমিশনারেট। পুলিশের দাবি, ২৫ হাজার টাকার বিনিময়ে ‘সুপারি কিলার’ হতে রাজি হয়েছিল কার্তিক।

Advertisement

গত ১৮ মে কৈখালির চিড়িয়াবাগানের বাড়িতে শম্পার রক্তাক্ত দেহ উদ্ধার হয়েছিল। পরদিন সকালেই সালুয়ায় নির্মীয়মাণ বাড়ির দোতলার সিঁড়িতে মশারির ভিতরে অভিজিতের রক্তাক্ত দেহ উদ্ধার করে পুলিশ। বিধাননগর কমিশনারেট সূত্রের খবর, ময়না-তদন্তের রিপোর্ট অনুযায়ী, নিহতের গলায় কোপানোর দাগ ছিল। এ ছাড়া, বুক এবং পেটের ডান দিকেও ক্ষতচিহ্ন পাওয়া যায়।

সালুয়ার ওই অংশটি রাস্তার এক প্রান্তে। সেটি বাগুইআটি থানার অন্তর্গত। অপর প্রান্তে আইনশৃঙ্খলা রক্ষার দায়িত্ব বিমানবন্দর থানার। বিধাননগর কমিশনারেট সূত্রের খবর, খুনের অভিযোগে বিমানবন্দর থানায় মামলা রুজু হলেও রহস্যের জট খুলেছে বাগুইআটি থানা।

Advertisement

স্থানীয় বাসিন্দারা জানান, পৈতৃক সম্পত্তি নিয়ে দুই ভাইয়ের সঙ্গে বিবাদ চলছিল অভিজিতের। ওই দুই ভাইকে প্রথমে আটক করা হলেও পরে ছেড়ে দেওয়া হয়। পুলিশ সূত্রের খবর, সম্পত্তির কারণেই অভিজিৎকে খুন হতে হয়েছে। মণ্ডলপাড়ায় পাঁচ কাঠা জমিতে প্রোমোটারির পরিকল্পনা করেছিল নিহতের ভাইয়েরা। ২০ মে প্রোমোটারের সঙ্গে চুক্তি হওয়ার কথা ছিল। কিন্তু ৩০ লক্ষ টাকা এবং একটি ফ্ল্যাট না পেলে চুক্তিপত্রে সই করবেন না বলে জানিয়েছিলেন অভিজিৎ। পুলিশ সূত্রের খবর, ওই সম্পত্তির ১১ জন শরিক। অত টাকা দেওয়া সম্ভব নয় বলে পিছিয়ে যান প্রোমোটার। এ দিকে, বারাসতে প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের পড়ুয়া ছেলের পড়াশোনার খরচ জোগাতে হিমশিম খাচ্ছিল অভিজিতের দাদা বিশ্বজিৎ। এই পরিস্থিতিতে ২৫ হাজার টাকার বিনিময়ে ভাইকে খুনের প্রস্তাব দেয় সে। কার্তিক রাজি হয়।

অভিজিৎ যাঁদের সঙ্গে মিশতেন, তদন্তকারীরা তাঁদের তালিকা তৈরি করেন। তিন জনকে জিজ্ঞাসাবাদ করে কার্তিকের নাম মেলে। সোনারপুরের বাসিন্দা কার্তিকের শ্বশুরবাড়ি সালুয়ার রায়পাড়ায়। দিনমজুর অভিজিতের সঙ্গে কাজের সূত্রে রাজমিস্ত্রি কার্তিকের পরিচয় হয়েছিল। ‌খুনের রাতে প্রায় তিনটে পর্যন্ত একসঙ্গে মদ খায় তারা। তার পরে টাকা দেওয়া নিয়ে দু’জনের বচসা শুরু হয়ে যায়। অভিজিৎ লাথি মেরে কার্তিককে সিঁড়িতে ফেলে দিলে পকেট থেকে ভাঙা বোতল বার করে অভিজিতের গলায় বসিয়ে দেয় কার্তিক। খুনের অস্ত্র এখনও মেলেনি।

কমিশনারেট সূত্রের খবর, সম্প্রতি কার্তিক যেখানে কাজ করছিল, সেখানেই বিশ্বজিতের খাতা-পেনের দোকান। অভিজিৎ যে সই করতে রাজি হচ্ছে না, কথায় কথায় তা কার্তিককে বলে বিশ্বজিৎ। তখন কার্তিক বলে, অভিজিৎ তাকে প্রায়ই অপমান করে। এর পরেই ‘সুপারি কিলার’ হতে রাজি হয় সে। পুলিশ সূত্রের খবর, দীর্ঘ জেরায় ভেঙে পড়ে দোষ কবুল করে বিশ্বজিৎ।

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement