জঞ্জালময়: শহরের রাস্তার পাশে আবর্জনার স্তূপ। (ইনসেটে) মশা দমনের জন্য বিন কেনার কথা উল্লেখ রয়েছে (চিহ্নিত) এই পুর নথিতে।
শুধু জমা জল নয়, আবর্জনাও সমান দায়ী মশার আঁতুড়ঘর তৈরির পিছনে। এ বার সেই আবর্জনা সংগ্রহ করতেই শহরের বাণিজ্যিক ও প্রাতিষ্ঠানিক এলাকাগুলিতে ১০ হাজার বিন বসাতে চলেছে পুরসভা। তার জন্য পুর ভাঁড়ার থেকে খরচ হবে প্রায় আড়াই কোটি টাকা। বিন কেনার কারণ ব্যাখ্যা করে পুর নথিতে বলা হচ্ছে— ‘যত্রতত্র ময়লা ফেলার ঝামেলা ও দুর্গন্ধ এড়াতে এবং পতঙ্গবাহিত রোগ নিয়ন্ত্রণ করতে বিনগুলি কেনা হচ্ছে।’
পুরসভা সূত্রের খবর, ২৪০ লিটারের বিনগুলি কিনবে পুরসভার জঞ্জাল অপসারণ দফতর। কেউ চাইলেও অনেক সময়েই শহরের রাস্তায় জঞ্জাল কোথায় ফেলবেন তার জায়গা খুঁজে পান না। খাবার খেয়ে তার প্যাকেট, জলের বোতল, কাগজের টুকরো ফেলার জায়গা না পেয়ে তা রাস্তাতেই ফেলেন অনেকে। বিদেশের অধিকাংশ শহরে যে ভাবে কিছু দূর অন্তর নোংরা ফেলার বিন থাকে, কলকাতায় কেন তা নেই, সে নিয়ে প্রশ্নও উঠেছে একাধিক বার। এই পরিস্থিতিতে পুরসভার বিন কেনার সিদ্ধান্তকে স্বাগত জানিয়েছেন বহু নাগরিকই।
অবশ্য আড়াই কোটি টাকা খরচের পরেও শহরবাসীর একটি বড় অংশের যত্রতত্র ময়লা ফেলার খারাপ অভ্যাস বদলাবে কি না, তা নিয়ে সংশয় তৈরি হয়েছে পুরকর্তাদের মধ্যেই। সে ক্ষেত্রে ঘুরেফিরে এসেছে যত্রতত্র জঞ্জাল বা থুতু ফেললে জরিমানার প্রসঙ্গ। জরিমানা ছাড়া যেখানে সেখানে জঞ্জাল ফেলা আটকানো যাবে না বলেই মত পুরকর্তাদের। অথচ জঞ্জাল ফেলার জন্য জরিমানা আদায় করা হয়েছে, এমন দৃষ্টান্ত কেউই মনে করতে পারছেন না। বাড়িতে জল বা জঞ্জাল জমিয়ে রাখলে নোটিস দেওয়ার পরেও কেউ সতর্ক না হলে পুর আইনে জরিমানা আদায় করে পুর স্বাস্থ্য দফতর। কিন্তু জঞ্জাল দফতরের ক্ষেত্রে তেমন নিদর্শন নেই। এক পুরকর্তার কথায়, ‘‘ইতিমধ্যেই শহরের বিভিন্ন জায়গায় আট হাজার বিন বসানো রয়েছে। তার পরেও কি অভ্যাস পাল্টাচ্ছে? বিন থাকলেও সেখানে ময়লা না ফেলে অন্য জায়গায় ফেলছেন তাঁরা।’’
পুরকর্তারা এ-ও জানাচ্ছেন, লাগাতার পুরসভার তরফে প্রচার করা হচ্ছে জঞ্জাল জমে থাকলে ডেঙ্গির আশঙ্কা বেড়ে যায়। শুধু তো মশাবাহিত নয়, মাছিবাহিতও বিভিন্ন রোগ হতে পারে। তার পরেও তো কারও হুঁশ নেই। এক পুরকর্তার কথায়, ‘‘আমরা খুব বেশি হলে সচেতন করতে পারি যে, যেখানে সেখানে ময়লা না ফেলে নির্দিষ্ট জায়গায় ফেলুন। সেখানে যদি তা মানা না হয়, তা হলে লাভ কী?’’
যদিও পুর প্রশাসনের একাংশের দাবি, সচেতন করে লাভ নেই। কারণ, শহরের এক শ্রেণির নাগরিক সচেতনতার ধার দিয়ে যান না। যত ক্ষণ না যত্রতত্র ময়লা ফেলার জন্য কড়া শাস্তি বা জরিমানা চালু হচ্ছে, তত ক্ষণ এই সমস্যা মিটবে না। শুধু ‘বাবা-বাছা’ করে শহর জঞ্জালমুক্ত করা যাবে না। এক পুর আধিকারিকের কথায়, ‘‘আড়াই কোটির বিন বসিয়ে লাভ কী, যদি না সেখানে ময়লা ফেলা হয়?’’
এ ক্ষেত্রে পুর কর্তৃপক্ষের বক্তব্য, যত্রতত্র জঞ্জাল ও থুতু ফেলা, উন্মুত্ত জায়গায় প্রস্রাব করা-সহ একাধিক বিষয়ে পুর আইনে উপ-ধারা তৈরির জন্য খসড়া তৈরি করা হয়েছে। সেখানে শুধু যত্রতত্র আবর্জনা ফেলার জন্যই দশটি আলাদা জরিমানা আদায়ের কথা বলা হয়েছে। যেমন আবাসিক বা আবাসিক বাড়ির ক্ষেত্রে ১০০ টাকা, দোকানদারদের ক্ষেত্রে ১০০০ টাকা, রেস্তরাঁ ও হোটেলের ক্ষেত্রে ২০০০ টাকা, শিল্প প্রতিষ্ঠানের ক্ষেত্রে পাঁচ হাজার টাকা-সহ একাধিক হার ঠিক করা হয়েছে। পুরসভার এক শীর্ষস্থানীয় কর্তার কথায়, ‘‘পুর ও নগরোন্নয়ন দফতরের কাছে প্রস্তাবটি পাঠানো হয়েছে। এখনও চূড়ান্ত কিছু জানা যায়নি।’’
ফলে কবে জঞ্জাল ফেলার জরিমানা চালু হবে, নির্দিষ্ট করে বলতে পারছেন না কেউই। এই পরিস্থিতিতে শহরের নির্দিষ্ট এলাকার রাস্তায় ১৮ হাজার বিন নাগরিকদের অভ্যাসে আদৌ বদল আনতে পারবে কি না, সেই প্রশ্নটা রয়েই যাচ্ছে।