—ফাইল চিত্র।
উঁচু-নিচু পথই যেন শহরের ভৌগোলিক চরিত্রে পরিণত হচ্ছে। রাস্তার এই বেহাল দশার জন্য দুর্ঘটনাও বাড়ছে। এমন রাস্তা নিয়ে আক্ষেপ শোনা গিয়েছিল খোদ ফিরহাদ হাকিমের কথাতেই, তা-ও আবার মেয়র পদে শপথ নেওয়ার আগে আগে। ফিরহাদ বলেছিলেন, ‘‘উঁচু-নিচু রাস্তা দিয়ে গাড়ি চলায় ঝাঁকুনির চোটে বেশ দুর্ভোগ পোহাতে হয়। নতুন পুরবোর্ড মসৃণ রাস্তা তৈরিতে জোর দেবে।’’ এ বার সেই দায়িত্ব পালনে পরিকল্পনা নিয়েছে কলকাতা পুরসভার সড়ক বিভাগ। তবে সেই দায়িত্ব কতটা সুষ্ঠু এবং পরিকল্পিত ভাবে পালিত হবে, তা সময়ই বলে দেবে।
রাস্তার বেহাল দশার কথা মাথায় রেখে সড়ক নির্মাণে চলতি বছরে পুরসভার বাজেটে বরাদ্দ বাড়ানো হয়েছে। ২০২০-’২১ অর্থবর্ষে পুর বাজেটে যেখানে এই খাতে বরাদ্দ ছিল ২৭৫ কোটি ৯০ লক্ষ টাকা, সেখানে ২০২২-’২৩ অর্থবর্ষে বরাদ্দ ৩৪০ কোটি ৭৯ লক্ষ টাকা। ইতিমধ্যেই মেয়র পারিষদ (রাস্তা) অভিজিৎ মুখোপাধ্যায় দফতরের আধিকারিকদের নিয়ে বৈঠকও সেরেছেন। তিনি বলেন, ‘‘রাস্তা উঁচু-নিচু থাকাটা সমস্যাদায়ক। মেরামতিতে যুক্ত ঠিকাদার সংস্থাকে নির্দেশ দেওয়া হবে, সংস্কারের সময়ে উপরিভাগ মসৃণ করতেই হবে। অর্থাৎ, রাস্তার লেভেলিং মানতে হবে। ইতিমধ্যেই কয়েকটি রাস্তার লেভেলিং ঠিক করার পরিকল্পনা হয়েছে।’’
এ বার থেকে রাস্তা সংস্কারে যুক্ত ঠিকাদারদের কঠোর নির্দেশ দিতে চলেছে পুরসভা। নির্দেশে বলা হবে, রাস্তা সংস্কারের সময়ে উপরিভাগের লেভেল ঠিক রাখতে হবে।
উঁচু-নিচু রাখা যাবে না। রাস্তা সংস্কারের শেষে যদি দেখা যায় উঁচু-নিচু রয়ে গিয়েছে, তা হলে সংশ্লিষ্ট ঠিকাদারকে সেই রাস্তা পুনরায় মেরামতি করে লেভেল করতে হবে। কঠোর নির্দেশের ব্যাপারে এমনই দাবি করছেন পুর কর্তৃপক্ষ।
পুরসভার সড়ক বিভাগের ইঞ্জিনিয়ারেরা জানাচ্ছেন, মাটির তলা দিয়ে জল, নিকাশির পাইপ-সহ বিভিন্ন সংস্থার পাইপলাইন যায়। ওই সব কাজের জন্য রাস্তা
খোঁড়ার পর মেরামতি ঠিক ভাবে না হওয়ায় এবড়োখেবড়ো রয়ে যায়। লেভেলিং একেবারেই না হওয়ায় দ্রুত রাস্তা ভাঙতে শুরু করে। বিভাগীয় এক ইঞ্জিনিয়ারের কথায়, ‘‘এই কাজের জন্য রাস্তার নামের তালিকাও তৈরি করা চলছে। যে সমস্ত রাস্তার উপরিভাগ খুবই উঁচু-নিচু, সেগুলি কেটে সেই অংশ বাকি অংশের লেভেলে মেলানো হবে।’’ ওই তালিকায় রয়েছে বেহালার বুড়োশিবতলা লেন, জেমস লং সরণি, মতিলাল গুপ্ত রোড, এম জি রোড, নীলমণি মিত্র রোড, তারাশঙ্কর সরণি, শোভাবাজার স্ট্রিট ইত্যাদি।
উঁচু-নিচু শহরের রাস্তায় মূলত দ্রুত গতিতে চলা মোটরবাইক পিছলে গিয়ে বা গর্তে পড়ে চালক, আরোহী উভয়েই দুর্ঘটনার শিকার হন। সম্প্রতি বেশ কয়েকটি এমন ঘটনাও ঘটেছে। কলকাতা পুলিশের এক আধিকারিকের অভিযোগ, ‘‘শহরের মোটরবাইক দুর্ঘটনার জন্য অনেকাংশে দায়ী অমসৃণ রাস্তা। উঁচু-নিচু রাস্তার কারণে ছোট গাড়ি বা অ্যাম্বুল্যান্সের যাতায়াত অনেক বেশি বিপজ্জনক হয়ে যায়।’’