ফাইল চিত্র।
ভাঁড়ে মা ভবানী! কলকাতা পুরসভার কোষাগারের অবস্থা এমনই করুণ যে আগামী মাসে কর্মীদের বেতন কী ভাবে হবে, তা নিয়েই সন্দিহান পুরসভার অর্থ দফতরের কর্তারা।
অর্থ দফতর সূত্রের খবর, গত মাসের বেতন দিতেই নাকাল হয়েছিল পুরসভা। সেপ্টেম্বর মাসের শেষে কর্মীদের বেতন দিতে গিয়ে দেখা গিয়েছিল, ব্যাঙ্কে সাত কোটি টাকার ঘাটতি রয়েছে। শেষমেশ পুরসভার অর্থ দফতর থেকে এক আধিকারিক রিজ়ার্ভ ব্যাঙ্কের ট্রেজ়ারিতে টানা দু’দিন হত্যে দিয়ে পড়ে থাকেন। তার পরেই চলতি মাসের ১ তারিখ রাতে বেতনের মেসেজ পান কর্মীরা। অন্যান্য বছর পুজোর আগে মাসের শেষ দিনে বেতন হয়ে যেত পুরকর্মীদের। এ বার অবসরপ্রাপ্ত পুরকর্মীরাও পেনশন পেয়েছেন চলতি মাসের পাঁচ তারিখে।
পুরসভার অর্থ দফতরের আধিকারিকেরা জানাচ্ছেন, ব্যাঙ্কে পুরসভার টাকা প্রায় নেই বললেই চলে। অতিমারির জেরে গত দেড় বছর ধরে পুরসভার বিভিন্ন বিভাগে রাজস্ব সংগ্রহে ভাটা পড়েছে। আয় বাড়াতে গত বছরের অক্টোবরে ওয়েভারের (সুদ ও জরিমানা ছাড়া সম্পত্তিকর আদায়) সুযোগ দিলেও আদায় একেবারেই আশাব্যঞ্জক নয়। সব মিলিয়ে প্রায় সাড়ে পাঁচশো কোটি টাকা আদায় হলেও এখনও প্রায় দু’হাজার কোটি টাকার বেশি সম্পত্তিকর বকেয়া পড়ে রয়েছে।
কোষাগারের বেহাল দশার পিছনে পুরসভার লাইসেন্স, কর রাজস্ব বিভাগের ইনস্পেক্টরদের কাজের ভূমিকা নিয়েও প্রশ্ন উঠেছে। অভিযোগ, শহরের বাড়ি, বহুতল বা ব্যবসায়িক প্রতিষ্ঠানের ঠিকানা ধরে ধরে ডিম্যান্ড নোটিস ঠিক মতো পাঠানো হচ্ছে না। এ প্রসঙ্গে পুরসভার অর্থ দফতরের এক আধিকারিকের অভিযোগ, ‘‘বহু ঠিকানায় ডিম্যান্ড নোটিস পাঠানোর পরে বার বার ফিরে আসছে। এখানেই বিভাগীয় ইনস্পেক্টরদের কাজের ধারা নিয়ে প্রশ্ন উঠছে।’’
পুরসভা সূত্রের খবর, পুরসভার স্থায়ী ও অস্থায়ী কর্মীদের বেতন এবং অবসরপ্রাপ্তদের পেনশন দিতেই মাসে প্রয়োজন হয় ১৩৩ কোটি টাকা। প্রায় আঠারো হাজার স্থায়ী কর্মীর জন্য মাসে ৭৮ কোটি টাকা, ৩৫ হাজার অবসরপ্রাপ্ত কর্মীর জন্য ৪০ কোটি টাকা এবং প্রায় কুড়ি হাজার অস্থায়ী কর্মীর বেতনের জন্য লাগে ১৫ কোটি টাকা।
পুরসভা সূত্রের খবর, স্থায়ী কর্মীদের মোট বেতনের ৮৫ শতাংশ রাজ্য সরকার বহন করে। বাকি ১৫ শতাংশ পুরসভাকে দিতে হয়। অবসরপ্রাপ্তদের পেনশনের ৬০ শতাংশ পুরসভাকে দিতে হয়। অস্থায়ী কর্মীদের পুরো বেতনই পুরসভার কোষাগার থেকে যায়। অর্থ দফতরের এক আধিকারিকের কথায়, ‘‘স্থায়ী কর্মীদের তুলনায় অস্থায়ী কর্মীদের সংখ্যা বাড়ায় পুর কোষাগারে চাপ পড়ছে। এর উপরে আনুষঙ্গিক খরচের বহরও কম নয়।’’
পুর অর্থ দফতরের এক কর্তার কথায়, ‘‘পুরসভার বিভিন্ন দফতর থেকে রাজস্ব সংগ্রহের গতি শ্লথ থাকায় ভাঁড়ারে সঙ্কট বাড়ছে। মূলত কর রাজস্ব, লাইসেন্স, বিল্ডিং, বিজ্ঞাপন, পার্কিং দফতর থেকে নিয়মিত রাজস্ব আদায় হয়। কিন্তু গত দেড় বছরে সেই গতি বজায় না থাকায় সঞ্চয় তলানিতে এসে ঠেকেছে।’’