বিপত্তি: মহানায়ক উত্তমকুমার মেট্রো স্টেশনের ইয়ার্ডে আগুন নেভাচ্ছেন দমকলকর্মীরা। —নিজস্ব চিত্র
বিভ্রাট আর মেট্রো যেন সমার্থক হয়ে গিয়েছে শহরবাসীর কাছে।
টালিগঞ্জ সংলগ্ন মহানায়ক উত্তমকুমার স্টেশনের থার্ড রেলে মঙ্গলবার পাখির বাসা থেকে পড়েছিল ধাতব তার। সেই তার থেকে অগ্নিকাণ্ডের আশঙ্কায় বেশ কিছু ক্ষণ ব্যাহত হয়েছিল পরিষেবা। বুধবার সেই স্টেশনেই মেট্রোর ইয়ার্ডে পড়ল বাজ। তার জেরে লাগল আগুন। দমকলের তিনটি ইঞ্জিন গিয়ে ঘণ্টাখানেকের চেষ্টায় আগুন নেভায় ঠিকই। কিন্তু ওই কাজ চলার সময়ে লাইনে বিদ্যুৎ সংযোগ বিচ্ছিন্ন করে দেওয়ায় প্রায় ৪০ মিনিট রবীন্দ্র সদন থেকে কবি সুভাষ পর্যন্ত বন্ধ রইল মেট্রো।
সন্ধ্যার পরে পরিষেবা শুরু হলেও ব্যস্ত সময়ে বিভিন্ন স্টেশনে যাত্রীদের ভিড় জমে যাওয়ায় পরিস্থিতি জটিল হয়ে পড়ে। একে মেট্রো বন্ধ, তার উপরে বাইরে প্রবল বৃষ্টি— দুইয়ে মিলে চরম ভোগান্তিতে পড়েন অফিস ফেরত যাত্রীরা। রাত পর্যন্ত তার জের চলে বলে অভিযোগ।
মেট্রো সূত্রের খবর, এ দিন বিকেল ৪টে ৫৮ মিনিট নাগাদ টালিগঞ্জে মেট্রো স্টেশনের ইয়ার্ডে আচমকা বাজ পড়ে। দীর্ঘদিন কার্যত অব্যবহৃত পড়ে থাকা ইয়ার্ডটি সম্প্রতি পরিষ্কার করার কাজ শুরু হয়েছে। ইয়ার্ড সংলগ্ন এলাকার ঝোপ-জঙ্গল কেটে লাইনের ধারে একটি জায়গায় জমানো ছিল। কাছাকাছি ইয়ার্ডের দেওয়ালে বেশ কিছু বিদ্যুতের তারও ছিল বলে অভিযোগ। বিকেলে ঝড়বৃষ্টির মধ্যে সেখানেই আচমকা বাজ পড়ে। সঙ্গে সঙ্গে ওই ঝোপঝাড়ের স্তূপে আগুন ধরে যায়। বিদ্যুতের কেব্ল থেকে আগুন ছড়িয়ে পড়তে পারে, এই আশঙ্কায় আর দেরি করেননি মেট্রো কর্তৃপক্ষ। দমকলে খবর পাঠান তাঁরা।
মেট্রো বন্ধ থাকায় বাসে ভিড়। বুধবার, রবীন্দ্র সদনে। —নিজস্ব চিত্র
পাঁচটা নাগাদ দমকলের তিনটি ইঞ্জিন পৌঁছে আগুন নেভানোর কাজে হাত লাগায়। ওই স্টেশনে যাত্রীদের প্ল্যাটফর্ম বদলের জন্য যে সাবওয়ে রয়েছে, প্রাথমিক ভাবে সেখান দিয়ে হোসপাইপ নিয়ে গিয়ে কাজ শুরু করেন দমকলকর্মীরা। তাতে অবশ্য মেট্রো চলাচল ব্যাহত হয়নি। কিন্তু ওই ভাবে ঘুরপথে জল নিয়ে যাওয়ার ক্ষেত্রে অসুবিধা হওয়ায় ট্রেন চলাচল বন্ধ করার কথা বলেন দমকল কর্তৃপক্ষ। পাশাপাশি, সাবওয়েতে যাত্রীদের ভিড় বাড়তে থাকায় পরিস্থিতি সামলানো কঠিন হচ্ছিল। সব দিক বিবেচনা করে মেট্রো কর্তৃপক্ষ বিকেল ৫টা ৪০ নাগাদ থার্ড লাইনে বিদ্যুৎ সংযোগ বন্ধ করে দেন।
এ প্রসঙ্গে জানতে চাইলে মেট্রো রেলের মুখ্য জনসংযোগ আধিকারিক ইন্দ্রাণী বন্দ্যোপাধ্যায় বলেন, ‘‘বাজ পড়ে মেট্রো রেলের ইয়ার্ডের দেওয়ালে আগুন লেগেছিল। দমকলকর্মীরা কাজের সুবিধার জন্য তৃতীয় লাইনে বিদ্যুৎ সংযোগ বিচ্ছিন্ন করতে বলেন। ৬টা ১৪ মিনিট নাগাদ ফের পরিষেবা শুরু হয়।’’
মেট্রো সূত্রে জানা গিয়েছে, ট্রেন ঘোরানোর জন্য ময়দানের পরে টালিগঞ্জে ‘ওয়াই সাইডিং’ রয়েছে। কিন্তু এ দিন আগুনের কারণে টালিগঞ্জের ‘ওয়াই সাইডিং’ ব্যবহার করা যায়নি। ফলত, ঘোরাতে না পারার জন্য ময়দানের পরে ট্রেনও চালানো যায়নি। প্রায় ৪০ মিনিট রবীন্দ্র সদন থেকে কবি সুভাষ পর্যন্ত পরিষেবা বন্ধ থাকায় বিভিন্ন স্টেশনে ভিড়ে জমে যায় যাত্রীদের। পরে মেট্রো চলাচল শুরু হলেও ভিড়ের চাপে কামরার দরজা বন্ধ করার ক্ষেত্রে সমস্যা হয়। ধাক্কা খায় মেট্রোর সময়ানুবর্তিতা। রাত পর্যন্ত এই সমস্যা চলে।