চাঁদনি চকে বন্ধ সব দোকানপাট। নিজস্ব চিত্র।
দোকান খোলার ক্ষেত্রে কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্র মন্ত্রক শুক্রবার বেশ কিছু নতুন ছাড়ের কথা বলেছে। লকডাউনের এই সময়ে সেই ছাড় মেনে কোন কোন দোকান খুলবে তা নিয়ে কৌতূহল তুঙ্গে কলকাতাতেও। শহরবাসী তো বটেই ব্যবসায়ীদের মধ্যেও প্রশ্ন, কেন্দ্রীয় ওই নির্দেশিকা অনুযায়ী কি শহরে দোকান খুলবে? কেন্দ্রীয় স্বাস্থ্য মন্ত্রক কলকাতাকে ‘হটস্পট’ হিসেবে চিহ্নিত করেছে। রাজ্যের মধ্যে সবচেয়ে স্পর্শকাতর জেলাগুলোর মধ্যে কলকাতা রয়েছে বলে জানিয়েছেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ও। ফলে, এই পরিস্থিতিতে কেন্দ্রের ওই নতুন ছাড় এই শহরে প্রযোজ্য না হওয়ার সম্ভাবনাই বেশি। তবে, কলকাতা পুরসভার তরফে জানা গিয়েছে, বিষয়টি নিয়ে সিদ্ধান্ত নিতে মুখ্যমন্ত্রীর সঙ্গে কথা বলবেন মেয়র ফিরহাদ হাকিম। কেন্দ্রের ওই নির্দেশিকা প্রকাশ্যে আসার পর যদিও কলকাতা পুর এলাকায় বাজার-দোকান খোলা-বন্ধ সংক্রান্ত নিয়মের কোনও পরিবর্তন হয়নি।
পুরসভা সূত্রে খবর, এই মুহূর্তে কলকাতায় করোনা পরিস্থিতির কথা মাথায় রেখে মুদিখানা এবং বাজার ছাড়া অন্য কোনও দোকানই খুলবে না। পুরসভার মেয়র পারিষদ (বাজার) আমিরুদ্দিন ববি বলেন, “এখনও কোনও সিদ্ধান্ত হয়নি। এ বিষয়ে কলকাতার মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের সঙ্গে মেয়র ফিরহাদ হাকিম কথা বলবেন। মুদিখানা-বাজার ছাড়া আর কোনও ধরনের দোকান খোলা হবে, আদৌ হবে কি না, তা জানা যাবে।”
এ দিন চাঁদনিচকের ইলেকট্রনিক্স মার্কেটে গিয়ে দেখা গেল সব দোকান বন্ধ রয়েছে। একই ছবি ধরা পড়ল গড়িয়াহাট-রাসবিহারীতে জামা-কাপড়ের মার্কেট চত্বরে। টালিগঞ্জ, বেহালা, গাড়িয়া, বালিগঞ্জ, সেন্ট্রাল অ্যাভেনিউ, বেলেঘাটা-সহ শহরের সর্বত্রই মুদিখানা-বাজার ছাড়া কোনও দোকান খোলেনি।
গড়িয়াহাট-রাসবিহারীতে বন্ধ দোকান।
আরও পড়ুন: রাজ্যে সক্রিয় করোনা আক্রান্ত বেড়ে ৪২৩, মৃতের সংখ্যা বাড়েনি
আরও পড়ুন: আক্রান্তের সংখ্যা বেড়ে ২৫ হাজার ছুঁইছুঁই, ২৪ ঘণ্টায় করোনায় মৃত ৫৬
চাঁদনি মার্কেটে ‘ভগবতী কম্পিউটার্স’-এর মালিক সুনীল শর্মা। এ দিন তিনি বলেন, ‘‘লকডাউনের জন্য দোকান বন্ধ। আমরাও সরকারের নির্দেশ মেনে চলছি। তবে কিছুটা সময়ের জন্য দোকান খোলার অনুমতি যদি পাওয়া যায়, ভাল হত। তা হলে ক্রেতাদের অর্ডার দেওয়া কম্পিউটার, ল্যাপটপ-সহ ইলেক্ট্রনিক্স জিনিসপত্র সরবরাহ করতে পারতাম। বন্ধের ধাক্কাটা কিছুটা হলেও সামলানো যেত।”
ভবানীপুর এলাকায় দিয়া'স কালেকশন বুটিক ব্যবসায়ী তৃনা সেনগুপ্তের মতে, “টানা এক-দেড় মাস ব্যবসা বন্ধ। কত কাজ অর্ধেক হয়ে পড়ে রয়েছে। যে তাঁতিদের থেকে কাপড় কিনি বা নকশা আঁকাই তাঁদের সঙ্গে যোগাযোগ করতে পারিনি। ক্ষতি তো হচ্ছেই। তবে যে ভাবে এখনও অসুখটা বাড়ছে, তাতে তো দোকান, বাজার খুললে তা আরও বাড়বে। সেটাও ভাবাচ্ছে, একেবারে শাঁখের করাতে পড়ে গিয়েছি!”
লকডাউনের জের, তালাবন্ধ দোকান।
ই-মলে তিনটি মোবাইলের দোকান ও একটি মোবাইল-ল্যাপটপ সারাইয়ের দোকান রয়েছে লিয়াকত আলি ওরফে চাঁদভাই। ‘অগ্নিকম কমিউনিকেশন’-এর ওই কর্ণধার বললেন, ‘‘শহরে যে ভাবে করোনা আক্রান্তের সংখ্যা বেড়েছে, এখন দোকানপাট না খোলাই ভাল। আমাদের প্রচুর টাকা লোকসান হচ্ছে। কিন্তু জীবনের চেয়ে দামি কিছুই নয়।’’
কেন্দ্রীয় ওই নির্দেশিকায় বলা হয়েছে, করোনার প্রকোপ নেই এমন এলাকা অথবা হটস্পট হিসাবে চিহ্নিত হয়নি, সেখানে শুধুমাত্র পাড়ার দোকান খোলার অনুমতি দেওয়া হবে। গ্রামীণ এবং পুরসভা এলাকার ক্ষেত্রে আলাদা নিয়ম। পুরসভা এলাকায় শুধুমাত্র পাড়া এবং ‘রেসিডেন্সিয়াল কমপ্লেক্সে’ অবস্থিত দোকান খুলে রাখা যাবে।
কাজেই কলকাতা এর আওতায় না থাকারই কথা। তবে, মেয়রের সঙ্গে মুখ্যমন্ত্রীর কথার উপরেই সিদ্ধান্ত নির্ভর করবে বলে পুরসভার তরফে জানানো হয়েছে।
নিজস্ব চিত্র।
(অভূতপূর্ব পরিস্থিতি। স্বভাবতই আপনি নানান ঘটনার সাক্ষী। শেয়ার করুন আমাদের। ঘটনার বিবরণ, ছবি, ভিডিয়ো আমাদের ইমেলে পাঠিয়ে দিন, feedback@abpdigital.in ঠিকানায়। কোন এলাকা, কোন দিন, কোন সময়ের ঘটনা তা জানাতে ভুলবেন না। আপনার নাম এবং ফোন নম্বর অবশ্যই দেবেন। আপনার পাঠানো খবরটি বিবেচিত হলে তা প্রকাশ করা হবে আমাদের ওয়েবসাইটে।)