250 years of Kolkata GPO

রানার চলেছে... জিপিওর ২৫০ বছর উদ্‌যাপন শহর কলকাতায়, সপ্তাহব্যাপী নানা অনুষ্ঠান ডাকবিভাগের

কলকাতা জিপিও ভবন দেড়শো বছরের বেশি প্রাচীন। কিন্তু জিপিও হিসাবে কলকাতার প্রথম যে পোস্ট অফিস খোলা হয়েছিল, তা ২৫০ বছর পূর্ণ করল এই বছর। সেই দীর্ঘ ইতিহাসের উদ্‌যাপন শুরু হল বৃহস্পতিবার, ১৪ মার্চ।

Advertisement

আনন্দবাজার অনলাইন সংবাদদাতা

কলকাতা শেষ আপডেট: ১৪ মার্চ ২০২৪ ১৯:১২
Share:

২৫০ বছর পূর্তি উপলক্ষে আলোয় সেজে উঠেছে কলকাতা জিপিও। —নিজস্ব চিত্র।

ব্যস্ত অফিসপাড়া ডালহৌসি চত্বরে জিপিও বিল্ডিং তো কেবল ঐতিহ্যবাহী স্থাপত্যকীর্তির নিদর্শন নয়, নীরব ইতিহাসেরও সাক্ষী। কলকাতা জিপিও ভবন দেড়শো বছরের বেশি প্রাচীন। কিন্তু জিপিও হিসাবে কলকাতার প্রথম যে পোস্ট অফিস খোলা হয়েছিল, সেটা ২৫০ বছর পূর্ণ করল এই বছর। সেই দীর্ঘ ইতিহাসের উদ্‌যাপন শুরু হল ১৪ মার্চ। বৃহস্পতিবার সূচনা অনুষ্ঠানে মুখ্য অতিথি ছিলেন রাজ্যপাল সিভি আনন্দ বোস। ১৯ মার্চ পর্যন্ত সপ্তাহব্যাপী নানা অনুষ্ঠান করছে ডাকবিভাগ। রয়েছে বিশেষ প্রদর্শনী।

Advertisement

১৮৭০ সালের কলকাতা ‘জেনারেল পোস্ট অফিস’ বা জিপিও। ছবি: আনন্দবাজার আর্কাইভ।

ছিল ইংরেজদের মাটির দুর্গ। ১৭৫৬ সালে বাংলার নবাব সিরাজউদ্দৌলার আক্রমণের মুখে সেই দুর্গ পড়ল। আগুনে ভস্মীভূত। কিছু দিন পর লালদিঘির সামনে থেকে দুর্গ সরিয়ে নিয়ে গেল ইংরেজরা। যেখানে এখন ফোর্ট উইলিয়াম, সেখানে। নবাবের সেনা আগুন লাগিয়ে দেওয়ার পর পরিত্যক্ত দুর্গের জায়গায় ৬ লক্ষ টাকায় গড়ে উঠেছিল কলকাতার পোস্ট অফিস, জিপিও। ১৭৫৭ সালে পলাশির যুদ্ধে সিরাজউদ্দৌলা পরাজিত হলে ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানির হাতে শাসন চলে যায়। ১৭৬৬ সালে রবার্ট ক্লাইভ ডাকব্যবস্থার সংস্কার করলেন। মাত্র এক জন পোস্টমাস্টার নিয়োগ করা হয় কলকাতায়। শহরের সঙ্গে মোট পাঁচটি ডাক যোগাযোগ কেন্দ্রের সংযোগস্থাপন করা হয়। প্রধান সংযোগ ছিল ঢাকা এবং পটনার সঙ্গে।

১৯৯০ সালের কলকাতা জিপিও। ছবি: আনন্দবাজার আর্কাইভ।

ভারত সরকারের কনসাল্টিং আর্কিটেক্ট ওয়াল্টার বি গ্রেনভিল কলকাতার অন্যতম ‘ল্যান্ড মার্ক’ জিপিওর নকশা করেন। পরে ভিক্টোরিয়ান আর্কিটেক্ট গ্রেনভিল ভারতীয় জাদুঘর, কলকাতা হাই কোর্ট এবং কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের ভবনের (বর্তমানে ধ্বংসপ্রাপ্ত) নকশা তৈরি করেছিলেন। ১৮৬৪ থেকে চার বছর চলে জিপিও ভবন নির্মাণের কাজ। তবে ১৭৭৪ সালের ৩১ মার্চ বাংলার তৎকালীন গভর্নর জেনারেল লর্ড ওয়ারেন হেস্টিংস ফোর্ট উইলিয়ামে জিপিও প্রতিষ্ঠা করেছিলেন। মিস্টার রেডফার্ন ছিলেন তাঁর প্রথম পোস্টমাস্টার। ওই বছরকে ধরেই কলকাতা জিপিও-র ২৫০ বর্ষপূর্তি উদ্‌যাপন শুরু হল। গত ২৭ ফেব্রুয়ারি এই উপলক্ষে বিশেষ লোগোর উন্মোচন করেন চিফ পোস্টমাস্টার নীরজ কুমার। তাঁর কথায়, “দেশের আধুনিক ইতিহাসের সঙ্গে এই ২৫০ বছর সমার্থক। বিশ্বের সঙ্গেও। সেই ১৭৭৪ সালে যে ইতিহাসের শুরু, যার প্রতিষ্ঠা করেছিলেন ওয়ারেন হেস্টিংস, কলকাতার বুক চিরে সেই ইতিহাস প্রবহমান।’’

Advertisement

১৯ মার্চ পর্যন্ত সপ্তাহব্যাপী নানা অনুষ্ঠানের আয়োজন করেছে ডাকবিভাগ, রয়েছে বিশেষ প্রদর্শনীও। —নিজস্ব চিত্র।

১৮৬৮ সাল পর্যন্ত একাধিক জায়গায় বদলেছে কলকাতা জিপিও-র ঠিকানা। রবার্ট ক্লাইভের আমলে যার ঠিকানা ছিল গভর্নমেন্ট হাউস, পরে তা সরে গিয়েছে কিরণ শঙ্কর রায় রোডে। জায়গা সংকুলানের কারণে সেখান থেকে আবার ডাকঘরের ঠিকানা বদল হয়েছে চৌরঙ্গী, মেট্রোপলিটন বিল্ডিং, ব্যাঙ্কশাল স্ট্রিট। শেষমেশ ডাকঘরের ঠিকানা থিতু হল বিবাদী বাগের এই সাদা গম্বুজাকৃতি ভবনে। ভিতরে রয়েছে ডাক সংগ্রহশালা, ডাকটিকিট সংগ্রহের লাইব্রেরি, সুকান্ত ভট্টাচার্যের কবিতা অবলম্বনে নির্মিত ভাস্কর্য ‘রানার’।

কলকাতা জিপিও ভবনে সুকান্ত ভট্টাচার্যের কবিতা অবলম্বনে নির্মিত ভাস্কর্য ‘রানার’। —নিজস্ব চিত্র।

ইতিহাস এবং ইতিহাস। শোনা যায়, সিরাজের কাছে পরাজিত হয়ে এই দোতলা বাড়ির এক দিকে লিখে রেখেছিলেন পুরনো কেল্লার সীমানার মাপ। আবার এই ডাকবিভাগের কর্মী ছিলেন ‘দীনদর্পণ’ নাটকের রচয়িতা দীনবন্ধু মিত্র। গম্বুজাকৃতি ভবনের বিশাল বিগ বেন ঘড়ি নিজের মতো এগিয়ে নিয়ে চলেছে সময়কে। এক মিনিট, এক ঘণ্টা, এক বছর সেই সময় বয়ে গিয়েছে আড়াইশো বছরে।

বৃহস্পতিবার উদ্‌যাপন অনুষ্ঠানে মুখ্য অতিথি ছিলেন রাজ্যপাল সিভি আনন্দ বোস। —নিজস্ব চিত্র।

১৫ মার্চ সকাল ১১টায় এসপ্ল্যানেড ট্রাম ডিপো থেকে ছাড়বে গড়িয়াহাটগামী একটি ট্রাম। চলন্ত ট্রামে থাকছে ডাকঘরের প্রদর্শনী। উপস্থিত থাকবেন খ্যাতনামা ভারতীয় তিরন্দাজ পদ্মশ্রী প্রাপক বোম্বাইলা দেবী লাইশ্রাম। বিকেল ৪টে বাজলেই ‘গ্র‍্যান্ড ক্লক অফ কলকাতা জিপিও’-র অনুষ্ঠান। কলকাতা জিপিও-র ভবনে সেই অনুষ্ঠানে উপস্থিত থাকবেন শিল্পী মমতা শঙ্কর। তার পর থাকছে নানা অনুষ্ঠান। আগামী ১৯ মার্চ পর্যন্ত এমন নানা সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান এবং প্রদর্শনী থাকছে। বিশাল কর্মকাণ্ড। তার আয়োজন করেছেন চিফ পোস্টমাস্টার নীরজ কুমার।

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement