দাপট: কলকাতা বিমানবন্দরের টার্মিনালের সামনে ভিড় করে দাঁড়িয়ে দালালেরা। নিজস্ব চিত্র
কলকাতা বিমানবন্দরের টার্মিনালের সামনে দালালদের দাপটে নষ্ট হচ্ছে শহরের ভাবমূর্তি — এই অভিযোগ এত দিন যাত্রীরা করতেন।
এ বার সেই অভিযোগ তুললেন বিমানবন্দর কর্তৃপক্ষ। এ নিয়ে তাঁরা মুখ খুলতে না চাইলেও স্থানীয় থানাকে সম্প্রতি তাঁরা একটি চিঠি দিয়েছেন বলে সূত্রের খবর। চিঠিতে বলা রয়েছে, টার্মিনালের সামনে এই ধরনের বেআইনি কার্যকলাপ কলকাতা বিমানবন্দরের ভাবমূর্তি নষ্ট করছে। এমনকি, স্থানীয় থানা যে ভবনে, সেটির ছাদের তলায় বেআইনি ভাবে ক্যান্টিন চালানো হচ্ছে বলেও অভিযোগ করেছেন কর্তৃপক্ষ।
পুলিশের পাল্টা অভিযোগ, ঠিকাদারের সুবিধার জন্য ওই সব অভিযোগ করা হচ্ছে। গত চার-পাঁচ মাসে টার্মিনালের সামনে থেকে দালালির অভিযোগে ৭৫০ জনকে গ্রেফতার করা হয়েছে।
বাম জমানায় বিক্ষোভ, ধর্মঘটে জেরবার ছিল বিমানবন্দর। মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের কড়া নির্দেশ, কোনও ভাবেই যেন বিমানবন্দরের ভাবমূর্তি নষ্ট না হয়। বিমানবন্দরের ইউনিয়নের দায়িত্বপ্রাপ্ত নেত্রী দোলা সেনও এ পর্যন্ত কোনও ধরনের বিক্ষোভ-কর্মসূচিকে প্রশ্রয় দেননি। অভিযোগ, পুলিশের একাংশের নিষ্ক্রিয়তার কারণে টার্মিনালের বাইরে এই দালাল-রাজ প্রকট হয়ে উঠেছে। চিঠিতে কর্তৃপক্ষ জানিয়েছেন, দালালদের এই ধরনের অবাধ গতিবিধি যাত্রী ও ভিআইপিদের নিরাপত্তার ক্ষেত্রেও প্রশ্ন তুলে দেয়। দোলা বলেন, ‘‘শ্রমিক-কর্মচারীদের বিরুদ্ধে অভিযোগ ওঠেনি। এটা আমাদের সাফল্য। দালাল-রাজের বিরুদ্ধে অভিযোগ উঠে থাকলে তা পুলিশকে জানিয়ে কর্তৃপক্ষ ঠিকই করেছেন।’’
কর্তৃপক্ষের অভিযোগ, পুরনো অন্তর্দেশীয় ভবনের সামনে বেআইনি ভাবে তাঁদেরই জমিতে গজিয়ে উঠছে অস্থায়ী ঝুপড়ি দোকান।
আগামী দিনে সম্প্রসারণের জন্য পুরনো এই টার্মিনাল ভেঙে ফেলতে হবে। এ ভাবে অস্থায়ী দোকান গজিয়ে উঠলে তাঁদের সেখান থেকে উচ্ছেদ করতে সমস্যা হবে বলে কর্তৃপক্ষের আশঙ্কা। তা ছাড়াও নতুন টার্মিনালের বাইরে, কর্তৃপক্ষকে নিয়মিত ভাড়া দিয়ে খাবারের দোকান বসেছে। বেআইনি ওই খাবারের ঝুপড়ির জন্য মার খাচ্ছে এই সব বৈধ দোকানের ব্যবসাও।
কর্তৃপক্ষের আরও অভিযোগ, পুলিশের চোখের সামনে বেআইনি ভাবে গাড়ি পার্কিং করে রাখা হচ্ছে। যিনি পার্কিংয়ের টেন্ডার নিয়েছেন মার খাচ্ছে তাঁর ব্যবসাও। অভিযোগ, একটি বেসরকারি ট্যাক্সি সংস্থা সম্পূর্ণ বেআইনি ভাবে, কর্তৃপক্ষের সঙ্গে কোনও ধরনের কোনও চুক্তি ছাড়াই টার্মিনালের সামনে ট্যাক্সি বুথ করে সেখান থেকে ট্যাক্সি চালাচ্ছে। চিঠিতে কর্তৃপক্ষের অভিযোগ, টার্মিনালের সামনে বেশ কিছু সংখ্যক দালাল সক্রিয় হয়ে উঠেছে।
সকালের দিকে টার্মিনালের সামনে দাঁড়ালে দেখা যায় ফুলিজা বিবিকে। ডান হাতটা কনুইয়ের কাছ থেকে কাটা। ভিক্ষের জন্য বাঁ হাতটা যাত্রীদের দিকে এগিয়ে দিচ্ছেন তিনি। ইঞ্জিনিয়ার নীরব পটেল ফুলিজাকে পাশ কাটিয়ে সরে আসতেই এগিয়ে আসেন আর এক যুবক — ‘‘স্যর, ওয়ান্ট কার?’’ নীরবের কথায়, ‘‘প্রজেক্টের কাজে মাসে বার চারেক আসতে হয় কলকাতায়। আই ফিল সরি টু সি দিস।’’
বিমানবন্দরের সামনে সকালে দাঁড়ালে চোখে পড়বে উড়ানের যাত্রীরা বেরোতেই জনা পাঁচেক ব্যক্তি উপযাচক হয়ে এগিয়ে আসেন। গাড়িতে যাত্রীদের ব্যাগ তুলে দিয়ে পেতে দেন হাত। কোনও যাত্রী দেন, কেউ দেন না। তাঁদের কথায়, ‘‘আমরা তো জোর করি না, চাই।’’ এঁদের কেউ এক সময়ে বিমানবন্দরে সাফাইয়ের কাজ করতেন। চাকরি চলে গিয়েছে। স্ত্রী, ছেলে মেয়ে নিয়ে সংসার। ফুলিজার বর রিকশা চালান। ভাড়া দিয়ে থাকতে হয়। চার জনের সংসার ওই টাকায় চলে না বলে জানান ফুলিজা।