ফাইল চিত্র।
দেশের বিভিন্ন প্রান্তে আবার নতুন করে ছড়াতে শুরু করেছে কোভিড। কলকাতা শহরে এই মুহূর্তে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে থাকলেও সাধারণ মানুষের একটি বড় অংশ যে ভাবে পদে পদে কোভিড-বিধি লঙ্ঘন করছেন, তাতে চিন্তায় পড়েছে কলকাতা পুরসভা। এ বিষয়ে ডেপুটি মেয়র অতীন ঘোষ বুধবার বলেন, ‘‘অনেকেই ভাবছেন, করোনা বুঝি চিরতরে বিদায় নিয়েছে। তাই তাঁরা মাস্ক পরা বা দূরত্ব-বিধি মেনে চলার পরোয়া করছেন না। এই প্রবণতা কিন্তু আবার বিপদ ডেকে আনতে পারে। মাস্ক পরায় বিষয়ে মানুষকে সচেতন করতে পুরসভা ফের প্রচারে নামবে।’’
দেশের বিভিন্ন প্রান্তে, বিশেষত দিল্লি, মুম্বইয়ের মতো শহরে কোভিডের সংক্রমণ ফের বাড়ছে। কলকাতায় সংক্রমণ আপাতত নিয়ন্ত্রণে থাকলেও তা যে কোনও দিন আবার বেড়ে যেতে পারে, এমনটাই জানাচ্ছেন পুরসভার চিকিৎসকেরা। পুর স্বাস্থ্য বিভাগের এক আধিকারিকের কথায়, ‘‘দিল্লি, মুম্বই থেকে বিমানে ও ট্রেনে প্রতিদিনই বহু মানুষ আসছেন। এখন যাত্রীদের কোভিডের পরীক্ষা করানোটাও আর বাধ্যতামূলক নয়। তাই এই সময়ে সতর্ক না হলে আবার আগের পরিস্থিতি তৈরি হতে পারে।’’
দেশের বিভিন্ন শহরে কোভিডের সংক্রমণ ফের বাড়তে থাকায় মঙ্গলবার পুরসভার স্বাস্থ্য বিভাগের আধিকারিকদের সঙ্গে বৈঠক করেন ডেপুটি মেয়র অতীন ঘোষ। পুরসভা সূত্রের খবর, শহরে কোভিড পরিস্থিতি এখন ঠিক কেমন, সে বিষয়ে খোঁজখবর নেন অতীন।
কলকাতা পুর এলাকায় গত ১১ এপ্রিল কোভিডে সংক্রমিতের সংখ্যা ছিল শূন্য। কিন্তু তার পরে রোজই বিভিন্ন ওয়ার্ড থেকে সংক্রমণের খবর আসছে। যদিও সেই সংখ্যাটা চিন্তা বাড়ানোর মতো নয়। পুরসভার স্বাস্থ্য বিভাগ সূত্রে পাওয়া পরিসংখ্যান বলছে, গত রবি, সোম ও মঙ্গলবার শহরে আক্রান্তের সংখ্যা ছিল যথাক্রমে পাঁচ, সাত ও তিন।
পুরসভার স্বাস্থ্য আধিকারিকদের বক্তব্য, বুধবার দিল্লি প্রশাসন মাস্ক না পরলে ৫০০ টাকা করে জরিমানা করার যে সিদ্ধান্ত নিয়েছে,
কলকাতা শহরেও তেমন কোনও পদক্ষেপ করা দরকার। না-হলে মাস্ক পরার ক্ষেত্রে এক শ্রেণির মানুষের যে তীব্র অনীহা, তা নিয়ন্ত্রণ করা যাবে না। এবং এ বিষয়ে সক্রিয় হতে হবে পুলিশকেই। পুরসভার চিকিৎসকেরা জানাচ্ছেন, কোভিডের সরকারি নিয়ন্ত্রণ-বিধি উঠে গেলেও মাস্ক পরা, হাত জীবাণুমুক্ত করা ও ভিড়
এড়িয়ে চলার নিয়মগুলি মানতে হবে। কিন্তু রাস্তায়, অফিসে, বাজারে অধিকাংশ মানুষই মাস্ক পরছেন না। বাকি নিয়মগুলিও যে মানছেন না, তা বলাই বাহুল্য।
বক্ষরোগ চিকিৎসক অনির্বাণ নিয়োগীর কথায়, ‘‘সংক্রমণ কমায় অধিকাংশ মানুষই মাস্ক পরছেন না। দেশের বিভিন্ন প্রান্তে করোনা আবার বাড়ছে। নিয়ন্ত্রণ-বিধি উঠে যাওয়ার ফলে বহু মানুষ যে রকম বেপরোয়া হয়ে উঠেছেন, তাতে বিপদ আসতে বেশি সময় লাগবে না।’’
অনেকেই বলছেন, সাধারণ মানুষকে মাস্ক পরাতে অতীতে কলকাতা পুলিশ কঠোর ভূমিকা পালন করেছিল। এখন নিয়ন্ত্রণ-বিধি উঠে যাওয়ায় পুলিশি ধরপাকড়
হয় না। বর্তমানে পুলিশের ভয় না থাকার কারণেই অনেকে মাস্ক কার্যত বর্জন করেছেন। এই পরিস্থিতিতে মাস্ক নিয়ে ফের কড়াকড়ি চালু করার বিষয়ে রাজ্য স্বাস্থ্য দফতরের পরামর্শ অনুযায়ী কলকাতা পুলিশের সঙ্গে বৈঠকে বসবে পুরসভা। অতীন বলেন, ‘‘মাস্ক পরা নিয়ে কতটা কড়াকড়ি দরকার, তা ঠিক করতে রাজ্য স্বাস্থ্য দফতরের সঙ্গে আলোচনায় বসব আমরা। তার পরে পুলিশের সঙ্গেও বৈঠক করব।’’