—প্রতীকী ছবি।
হাসপাতালের গেট দিয়ে ঢোকা ও বেরোনোর সময়ে কোথাও সমস্যায় পড়তে হয় রাত হলেই। কোথাও আবার রাতে বেরোতে গিয়ে সমস্যায় পড়ে দমকলের গাড়ি। কারণ, ওই দমকল কেন্দ্রের গেটের বাইরে তখন রাস্তা আটকে দিয়েছে সারিবদ্ধ গাড়ির বেআইনি পার্কিং। গৃহস্থের বাড়ির দরজা আটকে বা ফুটপাতের উপরেও রাতে বেআইনি পার্কিংয়ের অভিযোগ কম নয়। কিন্তু বছরের পর বছর এমনটা চলতে থাকলেও পরিস্থিতি বদলায় না। অভিযোগ, রাতে শহরের বেআইনি পার্কিং কারা দেখবে, তা নিয়ে দায় ঠেলাঠেলি চলতে থাকে পুলিশ ও পুরসভার!
সম্প্রতি এ নিয়েই সরাসরি অভিযোগ গিয়েছে প্রশাসনের শীর্ষ স্তরে। কলকাতার মেয়র ফিরহাদ হাকিমও এ নিয়ে মন্তব্য করেছেন। তিনি বলেছেন, ‘‘এমনই অবস্থা যে, নিজের বাড়ি থেকেও গাড়ি বার করতে পারি না!’’ এমতাবস্থায় প্রশাসনের শীর্ষ স্তরের নির্দেশে রাতের শহরে বেআইনি পার্কিংয়ের সমস্যা দূর হতে চলেছে বলে মনে করা হচ্ছে। পুলিশ ও পুরসভাকে এ ব্যাপারে হাতে হাত মিলিয়ে কাজ করতে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে বলে খবর।
প্রসঙ্গত, গত অক্টোবর মাসেই পুরসভার তরফে ঘোষণা করা হয়েছিল, পুজোর পরেই রাতের শহরে বেআইনি পার্কিং আটকাতে একটি মোবাইল অ্যাপ চালু করা হবে। পুরসভার তথ্যপ্রযুক্তি বিভাগ এ বিষয়ে পার্কিং বিভাগের কর্মীদের প্রশিক্ষণও দেয়। ঠিক হয়, রাতে শহরের রাস্তায় ঘুরবেন পুরসভার পার্কিং বিভাগের ন’জন কর্মী। তাঁদের মধ্যে পাঁচ জন ইনস্পেক্টর পদমর্যাদার। শহরের কোন কোন রাস্তায় রাতের পার্কিংয়ে ছাড় রয়েছে, তাঁদের কাছে সেই তালিকা থাকবে। ঘুরতে ঘুরতে তালিকার বাইরের কোথাও পার্কিং দেখলেই তাঁরা ব্যবস্থা নেবেন।
এত দিন সংশ্লিষ্ট গাড়ির চাকায় ক্ল্যাম্প লাগিয়ে দিতেন পুরসভার কর্মীরা। সেই সঙ্গে গাড়ির কাচে নোটিস লাগিয়ে দেওয়া হত। তাতে লেখা থাকত, গাড়িটি বেআইনি ভাবে পার্ক করা হয়েছে। এক হাজার টাকা জরিমানা দিতে হবে। পুরসভায় টাকা জমা দিলে ক্ল্যাম্প খুলে দেওয়ার একটি টোকেন দেওয়া হত। এর পরে সেটি নিয়ে দেখালে খুলে দেওয়া হত ক্ল্যাম্প। কিন্তু নতুন পদ্ধতিতে ক্ল্যাম্প লাগানোর বদলে অ্যাপ মারফত গাড়ির মালিকের ফোনে জরিমানার বার্তা পাঠানো হবে বলে ঠিক হয়। যে ভাবে পুলিশ ট্র্যাফিক বিধিভঙ্গের ক্ষেত্রে জরিমানার বার্তা পাঠায়, সেই ভাবে। কিন্তু এত দিনেও এই ভাবনা কার্যকর হয়নি। পুরকর্মীদের একাংশের মধ্যেই এই নতুন বন্দোবস্ত নিয়ে সংশয় তৈরি হয়েছে। তাঁদের বক্তব্য, ক্ল্যাম্প লাগানো হলে দ্রুত গাড়ি ছাড়ানোর জন্য এত দিন জরিমানার টাকা তাড়াতাড়ি জমা করতেন মালিকেরা। কিন্তু নয়া ব্যবস্থায় টাকা অনাদায়ী থেকে যেতে পারে। আরও প্রশ্ন, মাত্র ন’জন পুরকর্মীর পক্ষে কি আদৌ গোটা শহরের সমস্ত জায়গা রাতে ঘুরে দেখা সম্ভব? এ ক্ষেত্রে তো সেই আগের অবস্থাই থেকে যাবে!
এই পরিস্থিতিতেই প্রশাসনের শীর্ষ স্তর থেকে হস্তক্ষেপ করা হয়েছে। পুলিশকে সরাসরি নির্দেশ দেওয়া হয়েছে, পুরসভার সঙ্গে যৌথ ভাবে কাজ করার জন্য। দ্রুত এ বিষয়ে নির্দেশ ট্র্যাফিক গার্ডগুলিতে লালবাজার থেকে পাঠানো হতে পারে বলে খবর। পুরসভার তৈরি অ্যাপের সঙ্গে পুলিশ ও ট্র্যাফিক বিভাগের সার্ভারের যোগ থাকবে বলেও খবর। পুরসভার পার্কিং বিভাগের এক কর্তার মন্তব্য, ‘‘করোনার পরে দেখা গিয়েছিল, পুরসভার যে বিভাগের আয় সব চেয়ে বেশি কমেছিল, সেটি পার্কিং। ফি বাড়ানো হলেও সেই ঘাটতি মেটেনি। রাজস্ব খাতে আয় বাড়ানো থেকে শুরু করে আইন ভাঙা রুখতে এ বার কড়া হাতে পদক্ষেপ করা হবে।’’ কলকাতা পুলিশের ট্র্যাফিক বিভাগের কর্তারাও জানাচ্ছেন, আগামী সপ্তাহ থেকেই রাতের শহরে পুলিশ-পুরসভার যৌথ অভিযান শুরু হবে।